We Are For All !
নাগরিক ব্যস্ততায় মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কোথাও ঘুরে আসতে। কংক্রিটের এই শহরে মাঝে মাঝে যেন হাপ ধরে যায়। কিন্তু সময় কোথায়? জীবনের শত ব্যস্ততা কি আপনাকে ছাড় দেবে ককেটি নিরবিচ্ছিন্ন দিন? না দেবে না। কিন্তু একটা দিনের ফুরসত তো আপনি পেতেই পারেন! এবার আপনি বলতে পারেন, এই যান-জটের শহরে কোথায় যাবেন? খুব সহজেই সল্প সময়ের মধ্যে মনোমুগ্ধকর বাংলার প্রাচীন রাজধানী গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত সোনারগাঁও জাদুঘর ঘুরে আসতে পারেন।
বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনার গায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতি সম্পর্কে ধারনা নিতে পারবেন অল্প সময়ে।
নদী-নালা, খাল-বিল পরিবেষ্টিত এবং অসংখ্য গাছপালা সবুজের সমারোহ আপনাকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। আর এজন্য দূরের ভ্রমন পিপাসু মানুষ, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং বিদেশী পর্যটকরা প্রতিনিয়ত আসছে। ঈশা খাঁর বাড়ীটি অসাধারন স্থাপত্যশীল আর মধ্যযুগে পানাম নগরী আপনাকে কিছু্ক্ষনের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে ব্যস্ততা, দুঃখ, বেদনা।
ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর ব্রীজ পার হয়ে মোগড়াপারা বাসষ্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি:মি: অভ্যন্তরে সোনারগাঁ যাদুঘরের অবস্থান এবং এর সাথেই রয়েছে পানাম নগরী। বাস, মিনিবাস বেবি-ট্যক্সি, মোটরছাইকেলসহ যে কোন বাহনেই এখানে আসা যায়।
যাদুঘরের গেটেই রয়েছে সকল প্রকার যানবাহনের নিরাপদ র্পাকিং স্থান।
প্রথমেই চোখে পড়বে ঈশা খাঁর বাড়ী। ঈশা খাঁর বাড়ীটি বর্তমানে লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বাড়ীটির নির্মাণ শৈলী অত্যন্ত চমৎকার কারুকার্যে গড়া। সময়ের আবর্তে এর নকশা গুলি মুছে যেতে বসেছে।
তবে এখনো এর নির্মাণ শেলী বলে দেয় বাংলার পুরোনো ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। এই যাদুঘরে ১১টি গ্যালারী আছে যাতে দেখবেন গ্রামীণ পটচিত্র, মুখোস ও নৌকার মডেল, উপজাতি, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন। লোহা, তামা, কাশা, পিতলের তৈজশ পত্র, অলংকার। মৎশিল্প, কাঠের তৈরী সামগ্রী, শামুক, ঝিনুক, নারিকেল, কারুশিল্প, জামদানী শাড়ী, তাত বস্ত্র, শতরস্তী, রেশম বস্ত্র,পাটজাত শিল্প, ও লোহার কারুশিল্প। যা বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যকে ফুঁটিয়ে তুলেছে।
এখানে ১৯৯৬ সালে শিল্পচার্য লোক ও কারুশিল্প স্থাপন করা হয়। এর দুটি গ্যালারী আছে নিচতলায় রয়েছে কাঠ খোঁদাই করা বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহ্যের আকর্ষনীয় দ্রব্যাদী এবং দ্বিতীয় তলায় রয়েছে জামদানী ও নকশী কাথার গ্যালারী।
জাদুঘর থেকে বেরিয়ে উত্তর দিকে গেলেই পানাম নগরী। এখানে রয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও অনুপম শিল্প নিদর্শনে ভরপুর, রাস্তার দু'পাশে শত শত বছরের পুরনো অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী পানাম নগরীর চারিদিকে আছে পংখীরাজ খাল। এ খালের একটু ভিতরে রয়েছে পংখীরাজ সেতু (পানাম সেতু) ও নীলকুঠি।
তৎকালীন সময়ে বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বাস করতেন এই পানাম নগরীতে।
এই পানাম নগরীতে আরও রয়েছে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, মঠ, আবাসিক ভবন, গোসলখানা, নাচঘর, টুরিস্টহোম, আর্টগ্যালারি, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, প্রশস্তকক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর, বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যাপীঠের নাম সোনার গাঁও জি আর ইনস্টিটিউশন। এছাড়া রয়েছে চারশো বছরের প্রাচীন টাকশাল বাড়ি। জাদুঘরের দুই নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে গেলে মুসলিম স্থাপত্য গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ।
এ মসজিদটি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহীর শাসনামলে নির্মিত হয়। মোগড়া পাড়া চৌ-রাস্তা দিয়ে একটু দক্ষিণ দিকে গেলে দেখা যাবে ইমারতরাজি, বারো আউলিয়ার মাজার, হযরত শাহ ইব্রাহিম দানিশ মন্দা ও তার বংশধরদের মাজার, ইউসুফগঞ্জে মসজিদ, দমদম গ্রামে অবস্থিত দমদমদুর্গ, সোনারগাঁ থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে চিল্লাপুর গ্রামে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের মাজার, ১৪১১ সালে এটি নির্মিত হয়। মাজারটি পুরো কষ্টি পাথরের তৈরি। এলাকাবাসী এ মাজারটিকে কালো দরজা বলে।
এখানে আছে ঐতিহাসিক পাঁচ পীরের মাজার।
জাদুঘরে যাওয়ার পথে দীঘির পাড় গ্রামের পূর্ব পার্শ্বে ঐতিহাসিক মসলিম পাড়ার গ্রাম খাসনগর। এখানে আরও রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থভূমি বারদী লোকনাথ ব্রহ্মাচারীর আশ্রম। এর পাশে একটু পূর্বদিকে রয়েছে পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুর বাড়ি। সোনার গাঁয়ের আমিনপুরে প্রায় চারশো (৪০০) বছরের পুরনো ক্রোড়ি বাড়ি। শের শাহ ও সম্রাট আকবরের শাসনামলে এই ইমারতটি ছিলো টাকশাল।
সম্ভবত সোনারগাঁও এলাকার বিত্তশালীদের ধনভান্ডারও ছিলো এটি।
সোনারগাঁয়ের মাটিতে একদিন এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা, ফা-হিয়েন, রাণী এলিজাবেথের বিশেষ দূত রাখফফীচ, চীনা নৌবহনের ক্যাপ্টেন কংছুলোরসহ আরও অনেকে। এখানে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন হযরত শাহজালাল (রহ.), বাংলার ইতিহাসকে জানতে ঐতিহ্যকে জানতে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত সোনারগাঁওয়ে আমাদের আসতেই হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।