আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডাইনামিক্সের ছোট্ট দুর্বলতা? (পর্ব - ৪)



পর্ব - ১ পর্ব - ২ পর্ব - ৩ Physics is to be regarded not so much as the study of something a priori given, but rather as the development of methods of ordering and surveying human experience. In this respect our task must be to account for such experience in a manner independent of individual subjective judgment and therefor objective in the sense that it can be unambiguously communicated in ordinary human language. -Neils Bohr প্রোটন আবিষ্কার- জে. জে. টমসনের পর রাদারফোর্ড কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরীর প্রধান নিযুক্ত হন। এখানে তিনি তারই প্রাক্তন ছাত্র চ্যাডউইকের (James Chadwick) সাথে কাজ শুরু করেন। তারা দু'জনে বিভিন্ন ধরণের হাল্কা নিউক্লিয়াসের ওপর আলফা স্ক্যাটারিং পরীক্ষা চালিয়ে বেশ কিছু অদ্ভুত আচরণ দেখতে পান। ১৯২১ সালে চ্যাডউইক এবং সহ-লেখক Bieler মন্তব্য করেন- "The present experiments do not seem to throw any light on the nature of the law of variation of the forces at the seat of an electric charge, but merely show that the forces are of great intensity...It is our task to find some field of force which will reproduce these effects." অনেকে ১৯২১ সালের এই মন্তব্যটিকে স্ট্রং ইন্টারঅ্যাকশনের ইঙ্গিতদায়ক প্রথম ঘটনা বলে মনে করেন। অবশেষে রাদারফোর্ড নিউক্লিয়াস এবং আলফা কণার সত্যিকার গঠন কি হতে পারে তা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

তিনি "প্রোটন" শব্দটি (গ্রীক - প্রথম) ব্যবহার করে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের গঠন বর্ণনা করেন। ১৯২০ সালে ছাপার অক্ষরে প্রথম "প্রোটন" শব্দটি আসে। প্রথমে তিনি ভাবলেন আলফা কণা চারটি প্রোটন এবং দু'টি ইলেক্ট্রন দিয়ে তৈরী যারা কোনভাবে একত্রে থাকে। এতে করে ভর এবং চার্জ ঠিক হোল কিন্তু কেউই এর একটা গ্রহণযোগ্য ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক কনফিগিউরেশান বের করতে পারলোনা। এরপর তিনি ভাবলেন হয়তো প্রোটন এবং ইলেক্ট্রনের কোন অত্যন্ত ঘন সন্নিবেশিত অবস্থা আছে যা অ্যাটমের চেয়ে বহু ক্ষুদ্র।

১৯২৪ সালে তিনি এবং চ্যাডউইক মিলে আলোচনা করলেন কি করে এই বিশেষ "নিউট্রন"টি (ল্যাটিন - নিরপেক্ষ) বের করা যায়। কাজটা সহজ ছিলোনা কেননা নিউট্রাল হওয়ায় ক্লাউড চেম্বারে এর তেমন কোন ট্র্যাক থাকবেনা। ১৯৩০ এ তৎকালীন ইউ.এস.এস.আরের দু'জন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ করলেন নিউক্লিয়াসে কেবল প্রোটন এবং ইলেক্ট্রন থাকতে পারেনা, সেখানে অবশ্যই কোন চার্জ-নিউট্রাল কণা থাকতে হবে। যাহোক বর্তমান আলোচনায় আর নিউট্রনে যাওয়া হবেনা শুধু এটুকু উল্লেখ করছি ১৯৩২ সালে চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন এবং ১৯৩৫ এ নোবেল জেতেন। যদিও এই নিউট্রন কণা রাদারফোর্ড আর চ্যাডউইকের পূর্বের ধারণা মত প্রোটন ইলেক্ট্রনের বাউন্ড স্টেট নয়, তবুও এর আবিষ্কার নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের নতুন অধ্যায়ের সুচনা করে।

অবশেষে আমরা প্রোটনে পৌছেছি। তবে এর চার্জ রেডিয়াসে যাবার আগে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের দু'একটি বিষয় দেখা দরকার। সেই আলোচনায় যাবার আগে পুরোনো কিছু যন্ত্রের আলোচনা। সি. টি. আর. উইলসনের ক্লাউড চেম্বার- Charles Thomson Rees Wilson তার গবেষণাগারে আবহাওয়া নিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্লাউড চেম্বার তৈরীর মাধ্যমে তিনি প্রথম বারের মত চার্জড পার্টিকেলের গতিপথের দেখা পান।

আজকাল যেসব মহাকায় যন্ত্রের মাধ্যমে বর্তমান কণা পদার্থবিদ্যার সংঘর্ষ রেকর্ড করা হয়, এ আবিষ্কার ছিলো তাদেরই পূর্বসুরী। ১৮৮০ সালে স্কটিশ যন্ত্র-কৌশলী John Aitken এমন এক পদ্ধতিতে মেঘ তৈরী করেন যা ফ্রান্সে Coulier এবং Mascart প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি তার প্রথম পরীক্ষায় একটি বড় কাঁচের জারে ওয়াটার জেটের মাধ্যমে মেঘ তৈরী করেন। তিনি দেখতে পান, যদি জারে স্বাভাবিক বায়ু থাকে তবেই মেঘ তৈরী হয়, ফিল্টার করা বায়ু ঢোকালে মেঘ তৈরী হয়না। বায়ুতে ভাসমান জলীয় বাষ্প বাতাসে ভেসে থাকা ধুলি কণায় ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরী করছে।

ধুলিকণা না থাকলে ঘনীভবন ঘটা সম্ভব হচ্ছেনা। মেঘের উৎপাদন বাতাসে ধুলিকণার উপস্থিতি প্রমাণ করছে। বাস্তবে সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী বা যে কোন জলাশয়ের পানি যথেষ্ট শক্তি সংগ্রহ করে পানির উপরিতল ছেড়ে যেতে পারে। এরপর এই মুক্ত জলীয় বাষ্পের কিছু পরিমাণ আবহ মন্ডলের যথেষ্ট ওপরে চলে যায় যেখানে তাপমাত্রা কম। সেখানে নিম্নতাপমাত্রায় জলীয় বাষ্প তার শক্তির কিছু পরিমাণ হারিয়ে ফেলে।

ফলে তাদের পক্ষে নিজে নিজে আর ভেসে যাওয়া সম্ভব হয়না। ফলশ্রুতিতে তারা যে কোন ধরণের কণায় জমে মেঘ তৈরী করে। নিম্ন তাপমাত্রায় জলকণার শক্তির পরিমাণ অল্প। তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকে তত বেশী শক্তি সংগ্রহ করে পানির উপরি পৃষ্ঠ ছেড়ে জলকণা উপরে উঠতে পারে, ফলে জলীয় বাষ্প তৈরী হয়। আবহাওয়ার নকল করতে গিয়ে Aitken তার পরীক্ষার পরিবর্তন করেন।

তিনি একটি বিশাল কাঁচের জারের তলায় সামান্য পানি রেখে দেন। এরপর তিনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন যেন যত বেশী সম্ভব জলকণা দিয়ে জারের ভেতরের বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এরপর Aitken আচমকা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বায়ুকে শীতল করেন। সম্প্রসারণ ঘটলে বায়ুর আয়তন বেড়ে যায় এবং চাপ কমে যায়, সে সাথে তার তাপমাত্রাও কমে যায়। তাপমাত্রা কমে যাবার ফলে বায়ুতে ভাসমান জলীয় বাষ্পের এনার্জিও হ্রাস পায় ফলে তারা নিজেরা আর ভেসে বেড়াতে না পেরে ধুলিকণায় ঘনীভূত হয়।

প্রাকৃতিক বায়ুতে ধুলিকণা পর্যাপ্ত, তাই মেঘ তৈরী কোন সমস্যা নয়। কিন্তু গবেষণাগারে ফিল্টার করে ধুলিকণা কমিয়ে ফেললে মেঘ তৈরী হতে পারেনা। Aitken এর পরীক্ষায় দেখা যায় যে সম্প্রসারণের মাধ্যমে মেঘ তৈরী সম্ভব। শর্ত হচ্ছে nucleating point বিদ্যমান থাকতে হবে, যেমন ধুলিকণা। অল্প ধুলিকণায় খুব হাল্কা মেঘ হয়, আর প্রচুর ধুলি সম্পন্ন বায়ুতে ঘন মেঘ তৈরী হয়।

১৮৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরীর পদার্থবিদ সি. টি. আর. উইলসন Ben Nevis Observatory'তে মেটেরিওলজিক্যাল অবজার্ভার হিসেবে কয়েক সপ্তাহ গবেষণা করেন এবং পর্বতের আশে পাশের মেঘের ওপর সূর্যের আলোর প্রভাব দেখে বিস্মিত হন। তিনি গবেষণাগারে সেই প্রভাব তৈরীর মন স্থির করেন। পিস্টনওয়ালা একটি সীল করা কনটেইনারে তিনি পরীক্ষা চালান। যখন ভলিউম কমানো হয় তখন বায়ু ও পানির অণুগুলো নিজেদের সাথে আর কনটেইনারের দেয়ালের সাথে খুব দ্রুত ধাক্কা খেতে থাকে। যদি সংকোচন দ্রুত আর রুদ্ধতাপীয় হয় তবে গ্যাসের চাপ ও তাপমাত্রা দুই'ই বেড়ে যায়।

সম্প্রসারণের সময় ব্যাপার ঘটে উল্টো। উইলসন, Aitken এর পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে নিজের পরীক্ষা চালান। তিনি গ্লাস চেম্বারের প্রসারণ কতটুকু ঘটানো হোল সেটা রেকর্ড করে রাখেন। সে সাথে Aitken এর চেয়েও বেশী মাত্রার সম্প্রসারণ ঘটাতে সক্ষম হন। তিনি দেখলেন যে যদি এক্সপ্যানশন ১.২৫ হয় তাহলে ধুলিমুক্ত বায়ুতেও ঘনীভবন হচ্ছে, অর্থাৎ মেঘ জমছে।

Aitken কখনই ধুলিমুক্ত চেম্বারে মেঘ তৈরীতে সক্ষম হননি। উইলসন দেখতে পান যে এক্সপানশন অনেক বেশী হলে (যেমন ১.৭৭) সূক্ষ এক ধরণের কুজ্ঝটিকার উদ্ভব ঘটে। এরপর তিনি আরও উন্নত পরীক্ষার সিন্ধান্ত নেন। তিনি প্রথমে কয়েকবার প্রসারণ ঘটিয়ে চেম্বারটিকে ধূলিকণা মুক্ত করে নেন। প্রসারণের ফলে ধূলিকণার ওপর ঘনীভবন হওয়ায় সেটা বৃষ্টির মত নীচে পড়ে যায়।

এভাবে কয়েকবার প্রসারণ ঘটালে সব ধূলিকণাই একসময় নীচে পড়ে যায়। কিন্তু উইলসন দেখলেন যে যতবার প্রসারণ ঘটিয়ে যতই ধূলিমুক্ত করা হোকনা কেন, এরপরও মেঘের উদ্ভব ঘটছে। অর্থাৎ ধূলিমুক্ত বায়ুতেও কোন অদৃশ্য নিউক্লিয়াসেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি বহু পরিমাপের প্রসারণ ঘটিয়ে পরীক্ষা চালালেন। বড় প্রসারণে বেশী পরিমাণে ছোট ছোট ড্রপলেট তৈরী হয়।

মোটামুটি ১.৪০ প্রসারণে তিনি বেন নেভিসের ওপর যেমন ড্রপলেট দেখেছিলেন সেরকম রংয়ের এফেক্ট তৈরী হয়েছিলো। সূর্যের আলো যেভাবে বৃষ্টির ভেতর রংধনু তৈরী করে ক্লাউড চেম্বারের কুয়াসা থেকেও সেরকমের রং দেখা যাচ্ছিলো। উইলসন ভাবলেন, ধুলিমুক্ত বায়ুতে কোন ধরণের চার্জড্ পার্টিকেল বা আয়নে ওপর হয়তো ঘনীভবন ঘটছে। ফিল্টার করা বায়ুতেও আয়ন থাকা সম্ভব। তিনি চেম্বারের ভেতর দিয়ে এক্স-রে চালালেন।

এবারও দেখা গেল ১.২৫ প্রসারণের আগে মেঘ তৈরী হয়না, তবে এক্স-রে পরিচালনা করলে প্রচুর পরিমাণে জলকণা তৈরী হয়। এক্স-রে ছাড়া প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে মাত্র কয়েক'শ ড্রপলেট তৈরী হতো, কিন্তু এক্স-রে চালালে অনেক বেশী পরিমাণে ড্রপলেট তৈরী হচ্ছে। অর্থাৎ এক্স-রের ফলে বায়ুতে পয়েন্ট অফ নিউক্লিয়েশান তৈরী হচ্ছে। উইলসন এক্স-রে চালাবার ৩০ সেকেন্ড পরও প্রসারণ ঘটালেন; তাতে দেখা গেল এক্স-রে ছাড়া অবস্থার মত সামান্য মেঘ তৈরী হচ্ছে। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌছালেন যে এক্স-রে চালাবার ফলে বিপুল সংখ্যক নিউক্লিয়াস তৈরী হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তারা খুব দ্রুতই আবার হারিয়ে যাচ্ছে।

১৮৯৭ সালে উইলসন, ইউরেনিয়ামের বিকিরণ আর এক্স-রের আয়নাইজেশান দু'ভাবেই পরীক্ষা চালালেন। তিনি স্বল্প সময় আর দীর্ঘক্ষণব্যাপী এক্স-রে চালিয়ে দেখলেন যে ফলাফল একই। অর্থাৎ ক্লাউড ফরমেশানের জন্য যতটুকু এক্সপানশন দরকার তার পরিমাণ কমছেনা। এমনকি ইউরেনিয়ামের বিকিরণ আর এক্স-রের এফেক্টও একই। তিনি বললেন যে যাদের ওপর ভর করে ধুলিমুক্ত বায়ুতে ঘনীভবন ঘটছে তারা আসলে ফ্রী আয়ন, যারা কিনা এই রশ্মিরগুলোর জন্য জন্ম নিচ্ছে।

ঘনীভবনের জন্য দায়ী নিউক্লিয়াসগুলো যে আয়ন এটা প্রমাণের জন্য তিনি ক্লাউড চেম্বারের চারদিকে ইলেক্ট্রিক ফীল্ড তৈরী করলেন। দেখা গেল যে অত্যন্ত দুর্বল বিদ্যুৎ ক্ষেত্রও এত দ্রুত আয়নগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে যে, কোন মেঘের উদ্ভব ঘটছেনা। উইলসনের পরীক্ষায় দেখা যায় যে, স্বাভাবিক বায়ু ধূলিকণা ছাড়াও সামান্য পরিমাণে আয়ন ধারণ করে। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন যে এটা বিকিরণের কারণে নয় বরং বায়ুর স্বাভাবিক ধর্ম। ১৯১২ সালে Hess প্রমাণ করেন যে cosmic ray'র কারণে বায়ুমন্ডল আয়নিত।

উইলসন ১৯০৪ থেকে ১৯১২ পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের চার্জ নিয়ে গবেষণা করেন। এ সময় সাড়া পৃথিবীব্যাপী বৈজ্ঞানিকগণ চার্জড্ পার্টিকেল, এক্স-রে, গামা-রে ইত্যাদি নিয়ে বহু গবেষণা করেন। ১৯১০ সালে উইলসন আয়নিত কণার পথ দেখার জন্য তার যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। একটি ionising particle তার গতিপথে আয়নের চিন্হ রেখে যায়। সুতরাং প্রসারণ ঘটালে water droplets দের মাধ্যমে কণাটির গতিপথের সন্ধান পাওয়া যায়।

যেমন তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত আলফা পার্টিকেল তার গতিপথে মেঘের ট্র্যাক রেখে যায় যার ছবি তোলা সম্ভব। তিনি এক নতুন ক্লাউড চেম্বার তৈরী করেন এবং ১৯১১ সালে পার্টিকেলের গতিপথের ছবি তুলে Royal Society'র কাছে পেশ করেন। উইলসন মেঘের ছবি যেন নিখুঁতভাবে গতিশীল কণার গতিপথের সাথে মিলে যায় এ ব্যাপারটি খুব সাবধানতার সাথে নিশ্চিত করেন। মেঘের ট্র্যাক distorted হবে যদি চেম্বারের গ্যাসে নাড়া পড়ে যায়। সুতরাং ionisation ঘটার পড়পড়ই যেন প্রসারণ ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।

উইলসনের নতুন ক্লাউড চেম্বারটি এমনভাবে তৈরী ছিলো যেন ভেতরে air turbulance না ঘটিয়ে খুব দ্রুত প্রসারণ ঘটানো যায়। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিলো। চেম্বারের ভেতরে যেন আগে থেকেই কোন আয়ন না থাকে তা নিশ্চিত করা। উইলসন তার চেম্বারের চারদিকে এমনভাবে ইলেক্ট্রিক ফীল্ড বসান, যেন সেকেন্ডের ভগ্নাংশের চেয়েও দ্রুত তার চেম্বার থেকে আয়ন দূর করা যায়। তিনি যে ছবি তোলেন সেগুলো ছিলো এমন কণার গতিপথের যা ছবি তোলার মাত্র এক সেকেন্ডর চল্লিশ ভাগের একভাগ আগে তৈরী।

১৯১২ সালে উইলসন এক পেপারে Royal Society'র কাছে তার চেম্বারের বর্ণনা দেন। সেটা ছিলো ৩.৪ সে.মি. গভীর আর ১৬.৫ সে.মি ব্যাস বিশিষ্ট এক কাঁচের সিলিন্ডার। তার দেয়ালগুলো জিলাটিনে আবৃত, আর ভূমি কাল রং করা যেন সহজে ছবি তোলা যায়। চেম্বারের ভূমি একটি পেতলের প্লাঞ্জারের ওপর বসানো। একটা বড় বায়ুশুন্য কাঁচের গোলক এমনভাবে বসানো যেন একটি ভাল্ভ খুলে দিলেই প্লাঞ্জারের তলার বায়ু কাঁচের গোলকে প্রবেশ করতো।

ফলে প্লাঞ্জারটি নীচে পড়ে যেত তার ফলে চেম্বারে প্রসারণ ঘটতো। একটি ইলেক্ট্রিক ফীল্ড কোন residual ion কে সরাবার কাজে ব্যবহার হতো। প্রসারণের মেকানিজমের সাথে ক্যামেরার যোগাযোগ ছিলো, যেন প্রসারণের পরপরই ফ্ল্যাশ বাল্ব জ্বলে ওঠে। যখন কোন আয়ন তৈরী করার মত বিকিরণ থাকেনা তখন মেঘের এক সুষম বন্টন থাকে। যখন সামান্য রেডিয়াম লবণ থেকে বিকিরণ তৈরী হয় তখন উৎস থেকে আলফা পার্টিকেলের স্পষ্ট সরল রৈখিক ট্র্যাক তৈরী হয়।

উইলসনের ভাষায় ছবিগুলো ছিলো 'a poor idea of the really beautiful appearance of these clouds'। বেটা পার্টিকেল দু'তিনটি নিখুঁত সরল রেখার জন্ম দিতো। বেটা পার্টিকেলের ট্র্যাক আলফার চেয়ে ঝাপসা হতো। কারণ আলফার ভর আর চার্জ দুই'ই বেশী। উইলসন রেডিয়াম ব্রোমাইড ব্যাবহার করে গামা-রের ছবি তোলার চেষ্টা করেন।

তিনি বেটা পার্টিকেলের ট্র্যাকের মত ট্র্যাক দেখতে পান যা সবদিক থেকেই তৈরী হচ্ছিলো। আসলে চেম্বারের দেয়াল গামা রশ্মি শোষণ করে বেটা পার্টিকেল এমিট করছিলো। শেষমেষ উইলসন এক্স-রের ছবি তোলার চেষ্টা করেন। তিনি দেখলেন কিছু মেঘ ছোট কিন্তু প্রায় সরল রৈখিক, আবার কিছু প্যাচানো। অর্থাৎ উইলসন সরাসরি প্রমাণ দেখতে পান যে এক্স-রের মাধ্যমে ভেতরের গ্যাস থেকে energetic electron নির্গমন ঘটছে।

আর এই ইলেক্ট্রনগুলোর জন্যই মেঘের ট্র্যাক তৈরী হচ্ছে। ১৯১২ সালে তিনি তার চেম্বারটিকে সফল রূপদানে সক্ষম হন এবং এর মাধ্যমে তিনি আলফা, বেটা এবং এক্স-রের গতিপথের বহু চমৎকার ছবি তোলেন। অবশেষে তার সহায়তার Cambridge Scientific Instrument Company এটাকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে। ১৯৫২ সালে Bubble Chamber এর আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এটাই ছিলো প্রধান কণা detector। অরিজিনাল ক্লাউড চেম্বারটি Cavendish Laboratory'র যাদুঘরে প্রদর্শিত আছ।

পর্ব - ৫

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.