সাগর সরওয়ার
কর্নেলকে আমি মনে রেখেছি- ৬
এই দুপুরটা অন্যরকম। অন্যরকম এই জন্য বলছি যে কালো সকাল, ধলা হলো। বৃষ্টি এলো। আকাশে মেঘ কেটে না গিয়ে আরও গাঢ় হতে শুরু করলো। আচ্ছা মেঘের কি কোনো রকম ফের আছে? মোস্তাফিজ ভাই আমার সঙ্গে।
তিনিও বৃষ্টি ভালোবাসেন। তাঁর একটি ছবির সিরিজ আছে। নাম বৃষ্টি। তাকেই জিজ্ঞাস করলাম—
: আচ্ছা মোস্তাফিজ ভাই আপনার জানা আছে কী মেঘ কত ধরনের?
: সঠিকভাবে জানি না। তবে কয়েক ধরনের হয় বলে আমার জানা আছে।
অলক মেঘ, বাদল মেঘ, স্তূপ অলক মেঘ, স্তূপ স্তর মেঘ, স্তর অলক মেঘ, স্তর মেঘ, মধ্য স্তূপ মেঘ। তারপর একটু দম নিলেন। আর একটা মেঘের নাম জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। সম্ভাবত অলক বাদল মেঘ।
আমি বিমোহিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। কত কিছু আমার জানা নেই। ভাবি আমি। বলি—
: এত মেঘের নাম জানলেন কী করে?
প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। কেবল মুচকি হাসি হাসলেন।
বিডিআর ব্যারাকের বাইরে একটা ছাউনিতে দাঁড়িয়ে চলছিল আমাদের বৃষ্টি আলাপ। সেখানেই পান বিড়ির দোকান আমাদের দেখছিলেন অনেকক্ষণ ধরে, বেচা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে। আমি দুই-একবার লক্ষ করেছি। চোখে চোখ পড়বার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আমি ভাবি কেন এই দৃষ্টি—?
আমরা চলে যাবার জন্য চলতে শুরু করতেই সেই পানওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
: আপনারা কাঁচা সুপারিওয়ালা পান...।
অবাক আমি, আমি তো কোনো পান চাইনি! পান আমি খাই না—একথা ঠিক নয়। একটি কাঁচা সুপারিওয়ালা পান সঙ্গে একটি সিগারেট আমি খাই—রাতের খাবারের পর। মাঝে মাঝে। কিন্তু এই সদ্য দুপুরে আমি পান খাবো! আমার মনে জিজ্ঞাসা। এগিয়ে গেলাম।
আধাপাকা বয়সের মানুষটির নাকের নীচেও আধপাকা গোফ। কয়েকদিনের না কামানো দাড়ি।
: কোনো ভনিতা না করে বললেন—
: যা খুঁজতে এসেছেন, তা খুঁজে পেতে হলে সন্ধ্যায় ঐ হোটেলটিতে এসে পড়–ন। সামনের দিকে আঙুলি হেলালেন। সামনে যে হোটেলটি তার নাম— ‘বিসমিল্লাহ হোটেল’।
আমি কোনো কথা বাড়ালাম না। কোনো কথাও দিলাম না। কেবল তার হাতের পানটি নিয়ে বলে গেলাম। সারাটি দিন আমার হাতে। অজানা কিছু জানার গন্ধ পাচ্ছি।
নতুন কোনো তথ্য খুঁজে পাবার ক্ষমতা সকলের যাবে না। কারও কারও থাকে। আমার আছে।
দিনের প্রথম ভাগেই আমার আধ খাস্তা সাক্ষাৎকার আর সেই পানওয়ালার কথা মাথার মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
*** *** ***
পৃথিবীতে একমাত্র বোধহয় পাহাড়ই পারে সূর্যের আলোকে দু’ভাগ করতে। কালা পাহাড় সেই কাজটিই করছে। ভাবছে সন্তু। আর কদিন পরেই মেজভাই থাকবে রাঙামাটি শহরে। তখন কী এই আদিম সুন্দর পাহাড়টি সে প্রতিদিন দেখতে পারবে! ভাবে সন্তু।
মানবেন্দ্রের সঙ্গেই পাহাড়ি ছড়ায় ছোট কোষা নৌকা বেয়ে তারা এসেছে পুনংটি নামের একটি এলাকায়। পাহাড়ের ঠিক কোলে সভা। পাহাড়কে বাঁচাবার সভা। সুন্দর গোলগাল ভরাট মুখের মানবেন্দ্রের জন্য সকলের অপেক্ষা।
এখানে সন্তু দর্শক।
জনা দশেক ছেলে এসেছে। সকলেই মানবেন্দ্রের বয়সী। কোনো ভূমিকা না রেখে বাঁশের মাচাং দিয়ে তৈরি ঘরটিতে কথা বলতে শুরু করলেন তিনি। মানবেন্দ্র, যার ডাক নাম মঞ্জু।
আজ আমাদের সামনে বিরাট সমস্যা পাকিস্তান সরকার আমাদের নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে।
পাহাড়ে অশান্তি আসছে। কিন্তু এই অশান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন সকলের একনিষ্ঠতা। একাগ্রতা। আর সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নেয়া।
আজ থেকে আমরা এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করবো। ১৯৫৬ সালে আমরা স্কুল ছাত্ররা যেভাবে আন্দোলন করেছিলাম, ঠিক একই ভাবে সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে। নিজের বন্ধুদের ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলতে শুরু করলেন আবার।
বন্ধুরা আপনারা হয়তো জানেন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ কাপ্তাই হ্রদে বাধ দেবার চেষ্টা করছে। এখন চলছে জরিপের কাজ।
আমরা জানি না কি হতে যাচ্ছে!
যদি খারাপ কিছু হয়, তাহলে তার দায় কিন্তু সকলের উপর বর্তাবে। যদি আমরা কোনো কিছু না করি। তাহলে আসুন আমরা এমন একটা কিছু করি, যা আমাদের জাতিকে বাঁচায়। কি করা যায়—সেই সিদ্ধান্ত আপনাদের। সময় নিন, চিন্তা করুন।
আবার আমরা বসবো। বলতে হলে সকলকে এক সঙ্গে বসতেই হবে।
সুন্দর করে কথা বলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ। এই ছোট্ট বয়সেও তার কথা বরার ঢঙ অন্যরকম। মানুষকে বুঝতে শেখায়।
বোঝায়।
সেদিনকার মতো সভা শেষ। ছোট ছড়াকে লগি দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে দুই ভাই-এর কথা। সন্তু অবাক! দাদা এত সুন্দর করে কথা বলে কি করে?
: দাদা আমি একটা কথা বলবো?
: বল
: আমরা যদি একটি ছাত্র সমিতি গঠন করি, সকলে এক সংগঠনের তলে। তাহলে তো বেশ হয়, তাই না? পাহাড়ি ছড়ার ছোট ছোট পাথরের উপর স্বচ্ছ কলকলিয়ে চলা হাটু পানির দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে সন্তু।
দাদা অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।
: ঠিক বলেছিস। তবে এই সংগঠন কেবল আমাদের দশ-বার জনকে নিয়ে গড়লে চলবে না। গড়তে হবে পাহাড়ের সব ছাত্রকে নিয়ে কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন আরো কিছুটা সময়। অবশ্য এর আগে যে ছাত্র সম্মেলনটি হলো তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি।
প্রয়োজন শক্ত নেতৃত্ব। তাকে বাড়ি ফিরে আসতে আসতে আঁধার নেমেছে পাহাড়ে। মহাপুরানের পাহাড়ে পাখির কলতান। সন্ধ্যা পাখির। আচ্ছা সন্ধ্যায় সব পাখিরা এত ডাকে কেন? নিজের কাছেই প্রশ্ন নিজের সন্তুর।
ঘরে ফেরার আগে দুই ভাই হাত মুখ ধুয়ে নেয়। মা বসে আছে খাবার নিয়ে। বাবাও। সকলে এক সঙ্গে খাবে।
জুম থেকে আনা শাক আর কয়েকটি সব্জির এক অসাধারণ তরকারি রেখেছে মা।
একটু লেবুর রস তাতে ছিটিয়ে দিয়ে ভাত খেতে খেতে বাবা বলে ওঠেন—
: মঞ্জু রাঙামাটি স্কুল থেকে খবর এসেছে। তোর ভর্তির সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সেখানে যেতে হবে। থাকা-খাওয়া হস্টেলে। সিটও পাওয়া গেছে।
তুই চলে যা।
সন্তুর বুক ভেঙে যাচ্ছে। দাদা সত্যিই চলে যাবে? না গেলে কী হয়!
পরদিন ভোর হলো। সন্তু স্কুল সেরে সরাসরি পাহাড়ি ছড়ায় চিংড়ি মাছ ধরবে। চিংড়ি মাছের গুড়োর সঙ্গে শাক খেতে বেশ লাগে তার।
মাকে বলবে কাল রান্না করতে।
ছড়ায় একটার পর একটা পাথর তুলে ধরছে সে। চিংড়িগুলো এখানেই লুকিয়ে লুকিয়ে শ্যাওলা খায়। অনেক মাছ পাচ্ছে আজ। হঠাৎ শ্যাওলা ধরা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজ হয়ে প্রায় কালো হয়ে যাওয়া একটি বড় পাথরের চাঁই এর কাছে সে দেখলো একটি বেশ বড় মাছ।
মাছটিকে বেশ চেনা চেনা লাগছে। স্বচ্ছ পানি ভেদ করে তাকিয়ে আছে সে সন্তুর দিকে...।
মানবেন্দ্র। সন্তুকে দেখে বললো
: বাবু কাল রাঙামাটি যাবো। সব ঠিকঠাক।
তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। তাড়াতাড়ি চলে আয়।
কী কথা বলতে চায়—দাদা? ভাবে সন্তু।
এই দুপুরটা অন্যরকম। অন্যরকম এই জন্য বলছি যে কালো সকাল, ধলা হলো।
বৃষ্টি এলো। আকাশে মেঘ কেটে না গিয়ে আরও গাঢ় হতে শুরু করলো। আচ্ছা মেঘের কি কোনো রকম ফের আছে? মোস্তাফিজ ভাই আমার সঙ্গে। তিনিও বৃষ্টি ভালোবাসেন। তাঁর একটি ছবির সিরিজ আছে।
নাম বৃষ্টি। তাকেই জিজ্ঞাস করলাম—
: আচ্ছা মোস্তাফিজ ভাই আপনার জানা আছে কী মেঘ কত ধরনের?
: সঠিকভাবে জানি না। তবে কয়েক ধরনের হয় বলে আমার জানা আছে। অলক মেঘ, বাদল মেঘ, স্তূপ অলক মেঘ, স্তূপ স্তর মেঘ, স্তর অলক মেঘ, স্তর মেঘ, মধ্য স্তূপ মেঘ। তারপর একটু দম নিলেন।
আর একটা মেঘের নাম জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। সম্ভাবত অলক বাদল মেঘ।
আমি বিমোহিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। কত কিছু আমার জানা নেই।
ভাবি আমি। বলি—
: এত মেঘের নাম জানলেন কী করে?
প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। কেবল মুচকি হাসি হাসলেন।
বিডিআর ব্যারাকের বাইরে একটা ছাউনিতে দাঁড়িয়ে চলছিল আমাদের বৃষ্টি আলাপ। সেখানেই পান বিড়ির দোকান আমাদের দেখছিলেন অনেকক্ষণ ধরে, বেচা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে।
আমি দুই-একবার লক্ষ করেছি। চোখে চোখ পড়বার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আমি ভাবি কেন এই দৃষ্টি—?
আমরা চলে যাবার জন্য চলতে শুরু করতেই সেই পানওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
: আপনারা কাঁচা সুপারিওয়ালা পান...।
অবাক আমি, আমি তো কোনো পান চাইনি! পান আমি খাই না—একথা ঠিক নয়। একটি কাঁচা সুপারিওয়ালা পান সঙ্গে একটি সিগারেট আমি খাই—রাতের খাবারের পর।
মাঝে মাঝে। কিন্তু এই সদ্য দুপুরে আমি পান খাবো! আমার মনে জিজ্ঞাসা। এগিয়ে গেলাম। আধাপাকা বয়সের মানুষটির নাকের নীচেও আধপাকা গোফ। কয়েকদিনের না কামানো দাড়ি।
: কোনো ভনিতা না করে বললেন—
: যা খুঁজতে এসেছেন, তা খুঁজে পেতে হলে সন্ধ্যায় ঐ হোটেলটিতে এসে পড়–ন। সামনের দিকে আঙুলি হেলালেন। সামনে যে হোটেলটি তার নাম— ‘বিসমিল্লাহ হোটেল’।
আমি কোনো কথা বাড়ালাম না। কোনো কথাও দিলাম না।
কেবল তার হাতের পানটি নিয়ে বলে গেলাম। সারাটি দিন আমার হাতে। অজানা কিছু জানার গন্ধ পাচ্ছি। নতুন কোনো তথ্য খুঁজে পাবার ক্ষমতা সকলের যাবে না। কারও কারও থাকে।
আমার আছে।
দিনের প্রথম ভাগেই আমার আধ খাস্তা সাক্ষাৎকার আর সেই পানওয়ালার কথা মাথার মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
*** *** ***
পৃথিবীতে একমাত্র বোধহয় পাহাড়ই পারে সূর্যের আলোকে দু’ভাগ করতে। কালা পাহাড় সেই কাজটিই করছে।
ভাবছে সন্তু। আর কদিন পরেই মেজভাই থাকবে রাঙামাটি শহরে। তখন কী এই আদিম সুন্দর পাহাড়টি সে প্রতিদিন দেখতে পারবে! ভাবে সন্তু।
মানবেন্দ্রের সঙ্গেই পাহাড়ি ছড়ায় ছোট কোষা নৌকা বেয়ে তারা এসেছে পুনংটি নামের একটি এলাকায়। পাহাড়ের ঠিক কোলে সভা।
পাহাড়কে বাঁচাবার সভা। সুন্দর গোলগাল ভরাট মুখের মানবেন্দ্রের জন্য সকলের অপেক্ষা।
এখানে সন্তু দর্শক। জনা দশেক ছেলে এসেছে। সকলেই মানবেন্দ্রের বয়সী।
কোনো ভূমিকা না রেখে বাঁশের মাচাং দিয়ে তৈরি ঘরটিতে কথা বলতে শুরু করলেন তিনি। মানবেন্দ্র, যার ডাক নাম মঞ্জু।
আজ আমাদের সামনে বিরাট সমস্যা পাকিস্তান সরকার আমাদের নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। পাহাড়ে অশান্তি আসছে। কিন্তু এই অশান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
প্রয়োজন সকলের একনিষ্ঠতা। একাগ্রতা। আর সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নেয়া। আজ থেকে আমরা এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করবো। ১৯৫৬ সালে আমরা স্কুল ছাত্ররা যেভাবে আন্দোলন করেছিলাম, ঠিক একই ভাবে সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে।
নিজের বন্ধুদের ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলতে শুরু করলেন আবার।
বন্ধুরা আপনারা হয়তো জানেন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ কাপ্তাই হ্রদে বাধ দেবার চেষ্টা করছে। এখন চলছে জরিপের কাজ। আমরা জানি না কি হতে যাচ্ছে!
যদি খারাপ কিছু হয়, তাহলে তার দায় কিন্তু সকলের উপর বর্তাবে। যদি আমরা কোনো কিছু না করি।
তাহলে আসুন আমরা এমন একটা কিছু করি, যা আমাদের জাতিকে বাঁচায়। কি করা যায়—সেই সিদ্ধান্ত আপনাদের। সময় নিন, চিন্তা করুন। আবার আমরা বসবো। বলতে হলে সকলকে এক সঙ্গে বসতেই হবে।
সুন্দর করে কথা বলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ। এই ছোট্ট বয়সেও তার কথা বরার ঢঙ অন্যরকম। মানুষকে বুঝতে শেখায়। বোঝায়।
সেদিনকার মতো সভা শেষ।
ছোট ছড়াকে লগি দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে দুই ভাই-এর কথা। সন্তু অবাক! দাদা এত সুন্দর করে কথা বলে কি করে?
: দাদা আমি একটা কথা বলবো?
: বল
: আমরা যদি একটি ছাত্র সমিতি গঠন করি, সকলে এক সংগঠনের তলে। তাহলে তো বেশ হয়, তাই না? পাহাড়ি ছড়ার ছোট ছোট পাথরের উপর স্বচ্ছ কলকলিয়ে চলা হাটু পানির দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে সন্তু।
দাদা অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।
: ঠিক বলেছিস।
তবে এই সংগঠন কেবল আমাদের দশ-বার জনকে নিয়ে গড়লে চলবে না। গড়তে হবে পাহাড়ের সব ছাত্রকে নিয়ে কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন আরো কিছুটা সময়। অবশ্য এর আগে যে ছাত্র সম্মেলনটি হলো তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। প্রয়োজন শক্ত নেতৃত্ব। তাকে বাড়ি ফিরে আসতে আসতে আঁধার নেমেছে পাহাড়ে।
মহাপুরানের পাহাড়ে পাখির কলতান। সন্ধ্যা পাখির। আচ্ছা সন্ধ্যায় সব পাখিরা এত ডাকে কেন? নিজের কাছেই প্রশ্ন নিজের সন্তুর।
ঘরে ফেরার আগে দুই ভাই হাত মুখ ধুয়ে নেয়। মা বসে আছে খাবার নিয়ে।
বাবাও। সকলে এক সঙ্গে খাবে।
জুম থেকে আনা শাক আর কয়েকটি সব্জির এক অসাধারণ তরকারি রেখেছে মা। একটু লেবুর রস তাতে ছিটিয়ে দিয়ে ভাত খেতে খেতে বাবা বলে ওঠেন—
: মঞ্জু রাঙামাটি স্কুল থেকে খবর এসেছে। তোর ভর্তির সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সেখানে যেতে হবে। থাকা-খাওয়া হস্টেলে। সিটও পাওয়া গেছে। তুই চলে যা।
সন্তুর বুক ভেঙে যাচ্ছে।
দাদা সত্যিই চলে যাবে? না গেলে কী হয়!
পরদিন ভোর হলো। সন্তু স্কুল সেরে সরাসরি পাহাড়ি ছড়ায় চিংড়ি মাছ ধরবে। চিংড়ি মাছের গুড়োর সঙ্গে শাক খেতে বেশ লাগে তার। মাকে বলবে কাল রান্না করতে।
ছড়ায় একটার পর একটা পাথর তুলে ধরছে সে।
চিংড়িগুলো এখানেই লুকিয়ে লুকিয়ে শ্যাওলা খায়। অনেক মাছ পাচ্ছে আজ। হঠাৎ শ্যাওলা ধরা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজ হয়ে প্রায় কালো হয়ে যাওয়া একটি বড় পাথরের চাঁই এর কাছে সে দেখলো একটি বেশ বড় মাছ। মাছটিকে বেশ চেনা চেনা লাগছে। স্বচ্ছ পানি ভেদ করে তাকিয়ে আছে সে সন্তুর দিকে...।
মানবেন্দ্র। সন্তুকে দেখে বললো
: বাবু কাল রাঙামাটি যাবো। সব ঠিকঠাক। তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। তাড়াতাড়ি চলে আয়।
কী কথা বলতে চায়—দাদা? ভাবে সন্তু।
(এটি একটি উপন্যাসের অংশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।