আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্নেলকে আমি মনে রেখেছি- ৬

সাগর সরওয়ার

কর্নেলকে আমি মনে রেখেছি- ৫ এখন সময়টা ঝড় বাদলের নয়। কিন্তু প্রকৃতির মনটা কে বোঝে? আমি নিজের মনই বুঝিনা! আবার প্রকৃতি! মোস্তাফিজ ভাই পটাপট ছবি তুলে যাচ্ছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি বিডিআর রিজিওনের কমান্ডার কর্নেল আওয়ালের ছবি, অফিসের জানালা ভেদ করে আকাশে এই সাত সকালে জমা মেঘের ছবি। আমার সাক্ষাতকার নেয়া চলছে। নানা কথামালা।

তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর সযতনে এড়িয়ে গেলেন। বললেন, যদি কেউ আঘাত করে, তাহলে আমরা তো আর বসে থাকতে পারি না। আমাদের আঘাত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের উপর আঘাত। আর তাই সন্ত্রাসীদের মরতে হয়েছে।

কিন্তু দেখুন সব পাহাড়ী কিন্তু এক নয়, সবাই কি মরেছে? : আপনি কি ধরণের কথা বলছেন, আপনি জানেন? : আমি জেনেশুনেই কথা বলছি। আপনার কি জানা আছে কেবল কয়েক জোড়া বুটের জন্য মারা হয়েছিল আমাদের সেনাদের, অফিসারদের। তারপর পা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল... এ সব আজ ইতিহাস। আপনাদের মত সাংবাদিকরা আজ কেবল আমাদের দোষ দেখছেন। আমরা যা করেছি সব দেশের জন্য করেছি।

আমি কোন কথা বললাম না। আমি সাক্ষাতকার নিতে এসেছি। আমার মনেরভাব তার কাছে প্রকাশ করতে আসিনি। তাহলে বলতাম.. সেই সব কথা। নাক বোঁচা মানুষগুলোকে দেখলেই বলা হতো তারা সন্ত্রাসী।

শান্তিবাহিনী। দিন নেই রাত নেই যখন তখন বাড়িঘরে হামলা, সহজ সরল পাহাড়ী নিরীহ মানুষগুলোর ঘরে ঢুকে প্রথমেই বুটের আঘাতে ভেঙ্গে ফেলা হতো পানির কলস, তারপর নির্যাতন। বল কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস অস্ত্র, দিনের পর দিন গ্রামের পর গ্রামের পুরুষ মানুষদের নিয়ে বন জঙ্গল সাফ করার জন্য ব্যাগার খাটানো। আমি বলতে পারতাম... সেই সব ক্যাম্পের কথা। যেখান থেকে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হতো বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার।

নির্যাতনের পর প্রাণহীন নিথর দেহ.... আমি বললাম না। কারণ আমি জানি আমার কথা নয়, আমার পাঠকরা জানতে চায় তাদের মনের কথা। শান্তিচুক্তির পর সেনাবাহিনীর অবস্থান। হঠ্যাৎ মেজর মাহাবুব ঢুকলেন। বললেন, তার স্যারের পরর্বতী এপয়েনমেন্টের কথা।

: আমাকে উঠতে হবে.. আপনি কি এ এলাকায় আরো কয়েকদিন আছেন? কর্নেল আওয়াল জিজ্ঞাস করলেন। বললাম : হ্যা, কাজ চলছে। দুই একদিন আরো থাকতে হবে। : আপনাকে একটা জিপ দিয়ে দিই। বিভিন্ন জায়গায় যেতে কাজে লাগবে।

আর নিরাপত্তার বিষয়টিও তো আছে। তাই দুজন জোয়ান থাকবে আপনার সঙ্গে। আমি দু:খ প্রকাশ করে বললাম... প্রয়োজন নেই। এই দেশ আমার । আমি এর মাটিতে আকাশে জলে.. নিজের মতোই চলতে পারি, চলতে জানি।

আমার অহংকার ভাবটা ফুটে উঠলো। : ঠিক আছে? তবে এই অফারটা কিন্তু ওপেন। কাল ডিনার করুন আমার সঙ্গে। আরো কথা বলা যাবে। আমি রাজী হলাম।

বাইরে এসে দেখলাম গুমট গরমের একটা সুন্দর বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ একপস্ত দুই পস্ত করে জমে গাঢ় হচ্ছে। দূরে যে পাহাড়টা রয়েছে, সেই পাহাড়ের মাথায় এসে ঠেকেছে কালো মেঘ। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি সেই পাহাড়ী মেঘের দিকে.... :::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::: ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে সন্তু। বাবা আদর করে স্কুলের খাতায় ওর নাম লিখেছেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।

বাবা চিত্ত বিকাশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে এই ছোট ছেলেটি। পাহাড়ের মুখ আলো করে সে হয়ে উঠবে সত্যিকারের একজন মানুষ। তার জ্যোতি ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। খানিক ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে তামাকের তৈরি হাতে বানানো চুরুটে আগুন দিয়ে, আয়েসে ধোয়া ছেড়ে ভাবেন তিনি। বড় ছেলে বুলুটার কথা ভেবে বাবা এখনো একটু চিন্তিত।

শুভেন্দু প্রভাষ লারমা হচ্ছে বুলুর আসল নাম,। কি যে করছে সে.... পাহাড়ের মানুষকে কেবল কি কথা বলে অধিকারের জন্য আন্দোলনে নামানো সম্ভব! বুলু সেই কাজটিই করছে। আর মানবেন্দ্রের কথা বেশি ভাবেন না বাবা। একটু খুশ খুশ কেশে আবারো চুরুটে টান দিয়ে চিত্ত বিকাশ তার স্ত্রী সুভাষিনীর দিকে তাকান। বলেন, : আমি জানি মানু অনেক দূর এগুবো।

: ঠিক বলেছো। যেন একটু আগে স্বামী কি ভাবছিল তা স্পষ্ট চোখের সামনে দেখছিলেন সুভাষিনী। বাবা মায়ের কথার মাঝেই বাড়ি ফিরে সন্তু। আজ ঢিঙ্গা পাহাড়ের উপরে একটা ত্রিপুরা গ্রামে গিয়েছিল সে। কিশোর সন্তুর ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে।

পাহাড়ের ছড়া দিয়ে নৌকা চালাতে চালাতে তার চোখে পড়েছিল বিশাল ঠোটের মদনটাক পাখি। অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে ছিল সে। হলদে ঠোটের এত বড় পাখির এই পাহাড় জঙ্গল তারও। নিজের অধিকারের কথা মনে মনে আওরেছিল সন্তু। : মা ভাত দাও।

: হাতমুখ ধুয়ে আয়। আমি সব ঠিক করছি। কচি বাশের কোড়ল দিয়ে নাপ্পি রেধেছে সুভাষিনী। সবার প্রিয় খাবার। খেতে খেতে ভাবে সন্তু আর কয়েকদিন পরই তাকে চলে যেতে হবে রাঙ্গামাটি।

সেখান থেকেই মেট্টিক পরীক্ষা দেবে। বাবা কথা বলেছে রাঙ্গামাটি জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। থাকার একটা ব্যবস্থাও হয়েছে, স্কুলের হোস্টেলে.. দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমুনোর চেষ্টা করছে সন্তু্। চারিদিকে শুনশান। বাতাস বইছে ।

বাতালে চাপা ফুলের ঘ্রান। পাশের বাড়ির মেয়ে সুনয়না লাগিয়েছে ঐ চাপা ফুল। আচ্ছা সুনয়না এতো সুন্দর কেন? চাপাফুল ওয়ালা বাড়ির সুনয়না কে একদিন বলতে হবে সেই কথা, ভাবে সন্তু। : এই সন্তু ওঠ... বিকেল হয়ে গেছে, আমাদের যেতে হবে, ধল পাহাড়ের নীচে সভা। আমাদের কি করে বাচতে হবে সেই সভা.. দাদা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ডাকে সাড়া দিয়ে উঠে পড়ে সন্তু।

তাদের অনেকটা পথ হাটতে হবে, কিশোর তরুন যুবকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। রাজনীতির পথে হাটা শুরু হলো সন্তুর... ( এটি একটি উপন্যাসের অংশ। তবে এতে অনেক ঘটনাই সত্য। কিছু নাম কারও কারও সঙ্গে মিলে যেতে পারে। এরা সকলেই উপন্যাসের চরিত্র


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।