আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলবোর্ড কালচার নয়, মনের কালচার বড় প্রয়োজন।

লেখিতে এবং পড়িতে ভালবাসি।

সরকারের বিলবোর্ড সংস্কৃতি দেখে অনেকেই অনেক কিছু লিখছে। আমিও একটা লেখায় মন্তব্য করতে গিয়ে অনেক কথাই লিখেছিলাম সেটাই সবার জন্য তুলে দিলাম। বিলবোর্ড দেখে জানতে পারলাম বর্তমান সরকার ভুরি ভুরি ভাল কাজ করেছে, যেটা মানুষের কাছে সুস্পস্ট ছিলো না, তাই জনগণকে জানানোর জন্য দ্বৈত নাগরিক জয়ের নতুন কৌশল বিলবোর্ডে সরকারে সাফল্যের প্রচার প্রচারণা। ভাবটা এমন এই দেশের মানুষ এতোদিন দেশে ছিলো না, নয়তোবা ঘুমিয়ে ছিলো, তাই এদেরকে সরকারের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি জানাতে হবে।

ভাইরে আমরাতো বাংলাদেশে থাকি, বাংলাদেশের পত্রিকা পড়ি, বাংলাদেশের টিভি নিউজ দেখি। আমরা আমজনতাইতো সকল সুফল এবং কুফলের ভুক্তভোগী। মার কাছে মামা বাড়ীর গল্প বলার মধ্যে কি কোন রোমাঞ্চ থাকে??? সরকার ও সরকারী দলের সব উন্নয়নের কাব্য গাথা মানলাম, বুঝলাম এবং আগ্রহ ভরে দেখলামও, কিন্তু কোন আইনে এবং কোন বৈধতায় শহরের সব বিলবোর্ড দখল করলেন সেটা জানা গেলো না। কেউ এর দায় নিতে চাইলেন না। তাহলে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর তনয় জয় সাহেবের প্রত্যক্ষ তত্বাবধায়নে হয়েছে?? বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বললেন ৬০কোটি টাকা নাকি ব্যয় হয়েছে (সত্য না মিত্যা জানি না), ৬ ০কোটি না হলেও টাকা তো খরচ হয়েছে এই টাকার উৎস কি?? এই বিলবোর্ড গুলাতে যে সব কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ছিলো তাদেরটা সরিয়ে সরকারী উন্নয়নের ফিরিস্তি মার্কা বিলবোর্ড দেয়ার আগে কি অনুমতি নেয়া হয়েছিলো??? তাদেরকে কি ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে??? বিজ্ঞাপনী সংস্থা গুলো যে লোকসানের মুখোমুখী হলেন এর দায় কে নিবে?? এটা ছাত্রলীগের হল দখলের মত বিলবোর্ড দখল হয়ে গেল না?? একটা সরকার ৫বছর দেশের কাজ করার জনই দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়, এই দায়িত্ব পালন করা তাঁর রুটিন দায়িত্ব।

খারাপ করলে জনগণ বিচার করবে? যেমন ২০০৮ সালে বিএনপিকে শিক্ষা দিয়েছে। জনগণ ভুল করে না। ৫বছরে ৫টা ৫০০শয্যার হাসপাত যদি উন্নয়নের নমুনা হয় এবং এর জন্য বিলবর্ড দিতে হয় তাহলে কিছু বলার নাই। ফ্লাই ওভার, রাস্তা মেরামত বা উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক উন্নয়নের ফিরিস্তি দেখলাম, এই গুলো যদি সরকার না করে, তাহলে কি রুটি হালুয়া ভাগাভাগির জন্য ক্ষমতায় বসেছে ? বরিশালের হীরন, রাজশাহীর লিটন এবং খুলনার তালুকদার সাহেব এর চেয়ে বেশী কাজ করেছেন, জয়ী হতে কি পেরেছেন?? শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের পরিসংখ্যান দিয়েছেন, কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কারণে কতদিন বন্ধ ছিলো সেটাতো বলা হয়নি?? ভিসি সংক্রান্ত জটিলতায় বুয়েট, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হয়েছিল মানুষ ভুলে যায়নি?? ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলায় মানুষের মৃত্যু তথ্য কিন্তু বিলবোর্ডে নেই। ২২হাজার কোটি টাকার বেশী নাকি ডিজেলে ভূর্তকি দিয়েছেন কিন্তু ডিজেলের দামতো কমাতে পারেননি?? আগে ভূর্তকি বেশী দিয়েও যদি জনগণকে কম দামে কিনতে হতো তাহলেতো সেটাই জনগণের জন্য ভালো ছিলো।

বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছে কিন্টু কী পরিমাণ দাম বাড়িয়েছে সেটা বলেননি? আগে যে বাসায় ৭/৮ শত টাকা বিল আসতো এখন সেই বাসায় ২হাজার টাকার উপরে আসে, টাকাতো জনগণই দিচ্ছে তাহলে উন্নয়নের ফিরিস্ত গেয়ে লাভ কি?? জনগণের টাকা নিয়ে জনগণের সেবা করছেন আর নিজেদের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছে বিলবোর্ডে সেটাও আবার জবরদখলের মাধ্যমে? দখলদারীত্ব এখানেও বিদ্যমান! আপনারা হয়তো আমাকে বিএনপি-জামাত সমর্থক ভেবে মনে মনে গালাগালি করছেন। আপনাদের বলছি সত্য বললেই কোন দলের লোক ভাববেন না প্লিজ, এই দলীয় ভাবনাই দেশটাকে পিছিয়ে দেয় বারবার। বিএনপি-জামাত কি করেছিল মানুষ সেটা জেনেই ২০০৮সালে আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছিলো। তারেকের কূকীর্তির কারণেই আজ কমোর ভেঙ্গে পরবাসী!! কোকোর ঘুষ কেলেংকারীর জন্যই পরবাসী। মানুষ ভুল করে না।

তবে সত্য কি জানেন, মানুষ পুরনো ক্ষতের চেয়ে নতুন ক্ষতকেই বেশী মনে রাখে। নতুন ক্ষতই বেশী জ্বালায়! দ্রব্য মূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যার্থ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ, দুর্ণীতি সবর্ত্র বেশী মাত্রায় বিরাজমান, পদ্মা সেতু আজ স্বপ্নই রয়ে গেল। সাংসদ রনি গ্রেফতার হলেও শেয়ার কেলেংকারীদের বিচার হয়নি!! একি দোষে দুষী সাংসদ কামাল আহমেদ বহাল তবিয়েত, শামীম ওসমানের কীর্তি কাহিনী কে না জানে, লোকমান হত্যার আঙ্গুল কার দিকে?? সংসদ উপনেতার সমর্থকরা সাংবাদিকদের গাড়ী ভাংচুর করলেও বিচার হয় না, সাংসদ নিজ পিস্তল থেকে আমজনতাকে গুলি করলেও মামলা হয় না। সাংসদের গুলিতে সংসদ এলাকায় তারই সহযোগী মারা গেলও সাংসদ নিরাপদ থাকে, ৪৫% বিদ্যুৎ আসে বেসরকারী উৎস থেকে চড়া মূল্যা যে গুলোর মালিক আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রী। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থায় চিত্র মানুষ এখনো ভুলে যায় নি।

বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকান্ড এখনো চোখের সামনে দৃশ্যমান! নাটোরের বড়াই উপজেলার চেয়ারম্যানকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে হত্যা করার দৃশ্য উত্তর বঙ্গের মানুষ ভুলে নাই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর অভাব থেকে হতাশায় ভোগছে। সুরঞ্জিত বাবুর অর্থ কেলেংকারী, মখা আলমগীরের বিল্ডিং ধরে ঝাকানির তত্ত্ব মানুষ ভালো ভাবে নেই নি। রামুর ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যার্থ। পূর্ব শতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিয়েই একেরপর এক রায় ঘোষনা, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ।

সাগর-রুনির ক্ষত এখনো দগদগে। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার আর কিছু ফ্লাই ওভার নির্মানটাই উন্নয়ন না। গণতন্ত্র আজ মুখে, বাস্তবে খুন, গুম আর হামলা মামলায় গণতন্ত্র বিপর্যস্ত। ইলিয়াস আলীসহ বিরোধী নেতাদের হত্যা ঘটনা মানুষ ভুলে যায়নি। গণজাগরণ এবং হেফাজত এই সরকারের আবিষ্কার! ফল ভোগ যারাই করুক সরকারের উসকানীতেই এদের উত্থান।

দেশের মানুষের মধ্যে ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভেদ এই সরকারের একটা অপকৌশল, বিরোধী দল ফায়দা নিচ্ছে। কালকেই অনলাইন নিউজে পড়লাম, "এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে" ঘুষ আর উপহার ভাগাভাগির মহাউৎসব চলছে। বিল পেতে ঠিকাদারদের গুনতে হচ্ছে শতকরা ৯ থেকে ১০ টাকা। সরকার কাজ করবে সেটাই সত্য। যে সরকার কম করবে তাকে নির্বাচনে মাশুল দিতে হবে।

তবে বাহ্যিক এবং বস্তুগত উন্নয়নের চেয়ে বেশী দরকার স্পর্শকাতর এবং নিরাপত্তা জনিত উন্নয়ন। সমাজে শান্তি এবং সুশাসনের উন্নয়ন দরকার সর্বাগ্রে। জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে রাস্তাঘাট দিয়ে কী হবে?? আইনের শাসন না থাকলে মানুষ যাবে কোথায়?? প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকলে কৃষিতে বাংলাদেশ বরাবরই বাম্পার, এখানে সরকারের কৃতিত্ব খুবই কম। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব সরকারি সব সময় কাজ করে গেছে। নকল প্রতিরোধে আমি আগের সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করবো না, তেমনি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীও প্রশংসার দাবীদার।

হরতাল কালচার বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, বরং বিগত সরকার গুলোর আমলে যে পরিমাণ হরতাল হয়েছে, সেই তুলনায় এই সরকার অনেক ভাগ্যবান। অনেক কম হরতাল মোকাবেলা করতে হয়েছে। কাজ করার সময় পেয়েছে, অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে কম। বৈদেশিক রেমিটেন্স বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বিদেশে দিনকে দিন মানুষের উপার্জন ক্ষমতা বাড়ছে, মানুষ প্রতিবছর বিদেশ যাচ্ছে, বিদেশে কর্মরত মানুষের সংখ্যা বছর থেকে বছর বাড়বে এটাই চিত্র, এখানে সরকারের উন্নয়ন অবদান গৌণ নয় কি?? বাংলাদেশ এগিয়ে যাক এটাই আমাদের কাম্য।

আওয়ামী লীগ কাজ ভালো করলেও আইন শৃঙ্খলা, খুন, গুম, আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের স্বেচ্চারিতার কারণে সব কৃতিত্ব ভেস্তে গেছে। সব কিছুকে আদালতে নিয়ে গিয়ে আদালতের উপর মানুষের বিশ্বাসকে করেছে প্রশ্নবিদ্য। বিরোধীমতের মানুষকে দমন, নিপীড়ন, গুম করে বার বার বিতর্কিত হয়েছে। সভা সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিনত করেছে। পরিশেষে আমি আক্ষেপের সাথেই বলছি, আওয়ামী লীগ আবার এলে রাজাকারদের বিচারটা নিশ্চিত হত, কিন্তু ছাত্রলীগ আর যুবলীগের দৌরাত্বের কারণে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

হয়তো আবার রাজাকারদের মন্ত্রী হিসেবে দেখবো!! হয়তো তারেক জিয়া আবার ১০% নিবে (অতীত থেকে শিক্ষা নিলে করার কথা না। ) জঙ্গীবাদ মাথাচারা দিবে (বুদ্ধি থাকলে নির্মূলেই মনোনিবেশ করবে), জামাতের ডাল পালা বিস্তৃত হবে। বাকী সব কিছুই এখনকার মতই চলবে। "ছাত্রদল-যুবদল" ছাত্রলীগ-যুবলীগের স্থান নিবে। সুরঞ্জিতের বদলে জন্ম নিবে অন্য কেউ।

শামীম ওসমান বা কামাল আহমেদ মজুমদার ভিন্ন রূপে ফিরে আসবে। হয়তো আমাদের দেখতে হবে ভিন্ন কোন নেতার গুমের চিত্র। হয়তো আবার কোন সাংবাদিকের জীবনে নেমে আসবে অন্ধকার, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি যে একি মূদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কার পক্ষে কথা বলবেন?? কথা বলার মততো পরিবেশ দেখি না!!!!! বড় বড় কেলেংকারী গুলোর বিচার হওয়া উচিত ছিলো রাজাকারদের বিচারের সাথে। তাইলে মানুষ স্বস্তি ফেলতে পারতো।

সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারতো। এখানেও অনাস্থা আর অবিশ্বাস। আগামী নির্বাচন কি ভাবে হবে সেটা নিয়ে এখনো মানুষের মনে সংশয়। দলীয় অধীনে নির্বাচন সাধারন মানুষও পছন্দ করে না, সেটা প্রথম আলোর জরিপেও বের হয়ে এসেছে, জাতীয় পার্টির নিজস্ব জরিপেও বের হয়ে এসেছে মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়, সুতরাং জনগনের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানানোটাও মানসিকতার উন্নয়ন, এখানেও সরকার ব্যার্থ। সরকারকে মনে রাখা দরকার, শেয়ার মার্কেটে ভুক্তভোগীর ভোট একটা না, পুরো পরিবারের ভোট, গ্রামীণ ব্যাংকে শুধু ইউনূসের এক ভোট না, হাজার হাজার নারীর ভোট এবং এদের সাথে আছে হাজার হাজার পরিবার।

সুতরাং বিলবোর্ড কালচার বাদ দিয়ে মনের কালচার বড় প্রয়োজন। মনের কালচার পরিবর্তন হলে উন্নয়ন এবং শান্তি দুটোই প্রতিষ্ঠা পাবে, সেটাই হবে প্রকৃত উন্নয়ন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.