প্রতিবন্ধীদের ভালোবাসুন। তারাও এ সমাজের নাগরিক।
বাস্তবতা সবাইকে মেনে নিতে হয় এবং এটাই চরম সত্য। আমাকেও মেনে নিতে হয়েছে তেমনই একটি বাস্তবতা তথা আমার পঙ্গুত্বকে। একজন প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে সুন্দর ভাবে গড়ার স্বপ্ন যে কখনো দেখিনি যে তা নয়।
আমারও স্বাধ জাগে অন্য সব অপ্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের মত সাভাবিক জীবন যাপণ করতে। কিন্ত আমার দেখা স্বপ্ন গুলো শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। তাতে কিঞ্চিত পরিমান আশা আলো আজও দেখিনি। দেখ ব-ই বা কী করে আমি যে একজন প্রতিবন্ধী!
যখন আমার বয়স দু' বছর টাইফয়েডের কারণে আমাকে পঙ্গুত্বের শিকার হতে হয়। অন্য দশটা ছেলের মত আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি না।
রাস্তায় যখন চলা ফেরা করি তখন অনেকে আমার পঙ্গুত্বকে নিয়ে উপহাস করে। অনেকে আবার করুণার দৃষ্টিতে তাকায়। শৈশবে যখন মাঠে খেলতে যেতাম তখন বন্ধুরা বলতো `তুই পারবি না'। আমাকে অনেক বার খেলার মাঠ থেকে কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
বর্তমানে আমি এবং আমার ভবিষ্যত রচনার ক্ষেত্রে যার অবদান সব চেয়ে বেশি তিনি হলেন আমার মা।
তার অবদানের ফেল আমি এখন সমাজে মর্যাদা সহকারে বসবাস করছি। বর্তমানে আমি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাফিলা গ্রামের কাফিলা রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োজিত আছি। পাশাপাশি আমি বাংলাদেশ বেতার বরিশাল কেন্দ্রের একজন অনুষ্ঠান ঘোষক। এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে আমার মায়ের কারণে। এ কথা চিরন্তন সত্য যে, পৃথিবীতে সব মায়েরা-ই তাদের সন্তানের জন্য নিজের জীবনের অনেক কিছুই ছাড় দেন।
তবুও আমার মাকে এ ক্ষেত্রে আমি অন্যতম বলে দাবী করবো। কারণ আমার মা যদি তার নিজের জীবনের সুখ শান্তি বিসর্জন না দিতেন, তবে আমার মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে এ পর্যন্ত আসা কোনোদিনই সম্ভব হতো না। আমার বয়স যখন তিন কী চার সে সময়ে আমার বাবা আমার মাকে এবং আমাকে ফেলে চলে যায়। অন্যত্র বিয়ে করে সংসার বাঁধে। আমার মা-ও পারতেন আমার বাবার মত আমাকে ফেলে চলে যেতে।
কিন্ত তিনি তা না করে আমাকে বুকে আগলে ধরে নতুন এক জীবন শুরু করেন। জীবনের তাগিদে চাকরী নেন। আর আমাকে লেখাপড়া করাতে থাকেন। আমাকে কোনো কিছুর অভাব তিনি বুঝতে দেননি। জীবনযুদ্ধে আমার মাকে আমি এক অপরাজিতা সৈনিক মনে করি।
তার মুখে হাসি ফোটানোই এখন আমার একান্ত চাওয়া।
হে সুশীল সমাজের মানুষেরা, সমাজের বিশেষ অবদানের জন্য আপনারাতো অনেককেই পুরস্কৃত করে থাকেন। আপনারা কি পারবেন আমার মার দুঃখিনী মায়ের হাতে একটি পুরস্কার তুলে দিতে? শ্রেষ্ঠ মাতৃত্বের পুরস্কার?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।