আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাদের শোনানো রক্ত ও লেখায়

পার হয়ে যাই তালুকদারের বাড়ি

তাদের শোনানো রক্ত ও লেখায় গাওয়া গানগুলি ফিরে ফিরে আসে । কথা রাখে এবং রেখেছে কথা দেওয়া সরল মেয়েরা—তারা আর আসবে না ওর ভাওয়ালিয়া নৌকোখানিতে । প্রীতি ও প্রেমের কষ্ট যেন কনকনে ঠাণ্ডা ছোট ছোট বরফের বল, বুকের ভেতর যারা গুড়িয়ে গুড়িয়ে হাঁটে । বসে বসে ভাবে সিরিয়া সওদাগর আর সন্ধ্যাসূর্যখানি চোখের সামনে ধীর পায়ে ডুবে যায় সাগরের জলে... . . . . . . . . . পেছনে ধূসর নগরীতে সাইপ্রেস গাছ সারি সারি । এখানে তাদের বাড়ি, ওদিকেও রয়েছে তাদেরই বাড়ি, বাঁশের সাঁকোটা পেরোলেই—'ও দিদি, কী করে পার হবো, এ যে খালি নড়ে! এই যে শুনুন, শুনছেন—এই হাত ধরে একটু পার করিয়ে দেবেন? আমি আর দিদি প্রতি পুন্নিমায় চান করতে আসি ওইপাশে লেকের আয়না-জলে ।

আসুন না, বিনিময়ে দিয়ে দেবো এই পথ সেই পথ আলোছায়া সবগুলো পথ', দিশাহারা হয়েছে ও, এইদিকে সে-ও— সারাদিন এক পথ কুকুরের পথ-চাটা দেখে, সারাদিন এক পথ হাওয়া খাবে বলে আতরওয়ালীর পিছে পিছে ঘুরঘুর করে, ঘুরেফিরে অবশেষে খড়ের গাদায় বেশ দীর্ঘ একটা ঘুম! কোনো পথ ভরদুপুরেই ভাওয়াইয়া গায় শাহীমঞ্জিলের উঁচু জানালার নিচে! ওই জানালার নিচে শালপাতা পারাপার, ওরই নিচে শীতে কাঁপা ভিনদেশী এক পথচারী, আর ওই জানালার নিচে ছিলো ঝুলন্ত রশির সিঁড়ি... 'এ-সিঁড়ির ওপরে আগুন নিচে জল—না-না, ওঠো নাগো ওঠো নাগো তুমি', বলে জানালায় দাঁড়ানো মেয়েরা, 'বুঝলি সুজাতা, এরকম সন্দেহে রাখতে বেশ ভালো লাগে!'—তাই ওরা অভিমান ভরা আরব্য রজনী জাগে আর শেষ নিশীথের দিকে বলে, 'উড়ে যাও ধন্য ছাই!'... হ্যাঁ, যদি ছাই ভাবো, তাহলে সেটা-ই, যেমন ভেবেছে সিরিয়া সওদাগর । আর যদি ভাবো ধুলো? তবে ধুলোবালি । হ্যামেলিন শহরের অচেনা বাঁশিওয়ালাও দিনযাপনের লোকগীতি নিয়ে গেছে পাহাড়ের সানুদেশে । ধুলোতেই গড়া ঘরবাড়ি, ধুলোতেই পুঁতে দিই চারা দূর্বাগাছ; খুলে বলা প্রতিটি প্রেমের ভেতরেই থাকে না-বলা আরেকটি প্রেম, জলে জলোচ্ছ্বাসে যা কখনো হারায় না । তখন কুড়িয়ে পাওয়া পায়ের নূপুর, রোদে খোলাচুল, এমন কী দিগন্তের নীলিমাটুকুও ঘনচোখে চেয়ে বলে, 'কী করে এসব জানলেন!'—সাইপ্রেস ছায়াপথে চোখ বুজে আসে ঝাঁকা-মুটে বেচারার! এবার স্বপ্নরা স্বপ্ন দেখে কপালের কুচিকুচি ঘাম আর ঘুম ভাঙানিয়া ওরা-ও— 'চিনবে না চিনবে না ওগো মোর ভিনদেশী গীতিময়! কারা রাত জেগে জ্যোৎস্নার গভীরে আজো গাঁথে সুধাবতী রুমাল তোমার...' 'আরে, অলিগলি তোমরা কারা গো? কার জন্য, কার জন্য দাঁড়িয়েছ এমন রাস্তায়?' 'আপনার বুঝি আজকে হয় নি স্নান? তা না-হয় আসুন না আমাদের সঙ্গে? এই যে দেখুন, আছে মোর আয়না কাঁকই; আর ওই দেখা যায় ঝিকিমিকি করে জল আমাদের বাড়ি...' সাঁকো পেরোতেই এ-দুয়োর খুলে যায়, ও-দুয়োরও খুলে যায়, এতগুলো দুয়োরও ছিলো ওদের! 'আর ওই সেটা, শুনুন, খুলতে মানা ।

সে-দুয়োর দিয়ে চাপা আছে আমাদের ওপার, কী হবে ওতে । ' ওরা ভরে তোলে দিনগুলি, রাতগুলি; যদি আসে কেউ এ-আশাতে বিবর্ণ জলেই এঁকে যায় মুছে যায় দুয়োরের এই আলপনাটুকু—'বিশ্বাস না-হয়, এই দেখুন না, কতগুলো আংটি আমাদের! এ-আংটিতে আছে ভাসন্ত পালক, এ-আংটিতে উড়াল পালক আর এ-আংটিতে আছে এক প্রহরের অবগাহন ফর্সা ফর্সা চুমুখানি মোর! কী নেই বলুন, এই যা আছে এও কী কম?'—একেই কৃতার্থ করে নেবে বলে তিনখানি কুমারী সুজাতা, কার সঙ্গে ভেসে যায়, কার সঙ্গে উড়ে যায়, ভুবনডাঙার ওদিকের শুভ ঝর্নাজলে! . . . . . . . . . স্বদেশাভিমুখী একখানি জাহাজের গলুইতে সিরিয়া সওদাগর আজ কোনোমতে আশ্রয় পেয়েছে । সাগরের ঢেউ গুনে গুনে তার দুই চোখ জলে ভরে আসে । সে এখন বেশ জেনে গেছে: প্রীতি ও প্রেমের কষ্ট মানে ছোট ছোট কিছু বরফের বল...


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.