গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।
গার্মেন্টস কারখানায় আগুন
আবারো গার্মেন্টস কারখানায় আগুন। গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ দুপুরে সাভারে হা-মীম গ্র“পের ‘দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার’ নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় অন্তত ৩১ জন মানুষ মারা যান। আহত হন শতাধিক।
এতোগুলো মানুষের অসহায় মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। জানা যায়, ১১ তলা ভবনের ওই কারখানায় প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। যে ৩টি ফোর আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে সেখানে ৬ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যদর্শীরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার বিকল্প সিঁড়ি কোনো কাজে লাগেনি। আগুনে পুড়ে নয় বরং ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং রশি বেয়ে নামতে গিয়ে অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এর আগেও আমরা দেখেছি বেশ কিছু গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা। গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে আগুন লাগা বা এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ যে ব্যাপারটা ঘটে তাহলো বের হওয়ার পথ না পেয়ে আটকেপড়া। এর জন্যই লাফিয়ে পড়ে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে। নিরাপত্তার নামে গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে একেকটা আবদ্ধ খোঁয়াড়, বলতে গেলে মৃত্যুফাঁদ বানিয়ে রাখা হয়। এ নিরাপত্তা যে কার জন্য সেটাই বড় প্রশ্ন।
যে কারখানায় হাজার শ্রমিক কাজ করেন, সে ভবনে এতোগুলো লোকের ব্যবহার-উপযোগী পর্যাপ্ত সিঁড়ি বা লিফটের ব্যবস্থা থাকে না। উপরন্তু চুরি ঠেকানোর নামে শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর নজরদারি শক্ত করতে নির্গমন সুবিধাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে আরো সঙ্কুচিত করে রাখা হয়। এমনকি অগ্নিকাণ্ড ঘটার পরও সিঁড়ি বা গেট খুলে না দেয়ার ঘটনা দেখা গেছে অনেক কারখানায়। পরপর বেশ কটি গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর জরুরি নির্গমন সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা, নিয়মিত মহড়া করা বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু আসলেই সব কারখানায় এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত রয়েছে কিনা- সেটা নিয়মিত তদারকি করা হয় বলে জানা যায় না।
আর হয় না যে তার পরিণাম হলো অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি এবং ব্যাপক প্রাণহানি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার যে কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সেটি দেশের একটি অন্যতম ব্যবসায়ী গ্র“পের। যার মালিক নিজেই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতা। দুর্ভাগ্যজনক হলো সেখানেও কিন্তু আমরা খুব ভিন্ন চিত্র দেখিনি। এ ভবনে বিকল্প সিঁড়ি থাকলেও অগ্নিকাণ্ডের সময় সেটা কাজে আসেনি।
একটি ফোরে আগুন লাগার পর তা তিনটি ফোরে ছড়ানোর সময়ের মধ্যেও আটকেপড়া শ্রমিকদের বের করার ব্যবস্থা করা যায়নি। এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে কী কী করতে হবে- সেরকম কোনো প্রস্তুতি বা মহড়া তাদের কারো ছিল বলে মনে হয় না। ফলে আতঙ্ক, হুড়োহুড়ি, বেরোনোর পথ না পেয়ে লাফিয়ে পড়াÑ এসব ঘটনাই ঘটেছে এবং অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে, প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা করে এই প্রাণহাণি ও য়তি অনেকাংশেই এড়ানো যেতো বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
অগ্নিকাণ্ডের উৎপত্তি যেভাবেই হোক গার্মেন্টস কারখানায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের েেত্র হতাহত ও য়তির ব্যাপকতার ধরন ও কারণ প্রায় একই।
প্রতিবারই দুর্ঘটনা ঘটার পর বিশেষজ্ঞ মহল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ, মিডিয়া সবার প থেকেই উদ্বেগ জানানো হয়, সতর্কতার তাগিদ জানানো হয়। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তিই ঘটেই যাচ্ছে। একেকটি অগ্নিকাণ্ডের য়তি তো ব্যাপক। এই ব্যাপক য়তি ও প্রাণহানি এড়াতে মালিকপ এবং সংশ্লিষ্টদেরই তো মূল তাগিদ থাকা উচিত অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখার। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টসের কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কিনা, নিয়মিত দুর্যোগ-মহড়া হয় কিনাÑ সেটারও তো সার্বণিক তদারকি থাকার কথা।
এ দিকটাকে বিশেষ নজর না দিলে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনায় অসহায় মৃত্যু ও য়তি বরণ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না।
এসব মৃত্যুর দায় কাউকে না কাউকে তো নিতে হবে। আমরা আর এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।