যে কোন লড়াই শেষ পর্যন্ত লড়তে পছন্দ করি।
গত পরশু সাভারের আশুলিয়াতে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দু:খজনক ও গভীর ভাবে নিন্দনীয়। এই নিন্দার প্রায় পুরোটাই গার্মেন্টস এর মালিকদের প্রতি। যে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে গার্মেন্টস মালিকরা দায়ী, কারণ তারা ছোট ছোট কটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট করে সব গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আবার (পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, সামরিক শাসক) আইয়ুব খান এর মত সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।
সরকার এবং প্রশানের কর্তারা কী এসব কিছু দেখছেন না?
আমাদের দেশে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব ঘটনা ঘটার মূল কারণ শ্রমিকদের অত্যন্ত কম বেতন দেয়া, গার্মেন্টস মালিক কর্তৃক বেতন বকেয়া রেখে পরে তা শোধ না করা, বকেয়া বেতন ও বকেয়া ওভার টাইম এবং বকেয়া ভাতাদি পরিশোধ না করে হঠাৎ করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়া এবং ঈদের আগে সময় মত বেতন-বোনাসের টাকা পরিশোধ না করা অথবা না করে ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেয়া। অথচ এক শ্রেনীর গামেন্টস মালিকরা এসব ঘটনাকে বিদেশী চক্রান্ত বলে সবার চোখে ধুলো দেয়ার চেষষ্টা করছে।
আমাদের দেশে পাট ও টেক্সটাইল শিল্প খাতকে লুটপাট, মোনাফাখোরি এবং নানা প্রকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করে এখন সেইসব কুচক্রি মহল গার্মেন্টস সেক্টরের সর্বনাশ করতে লেগেছে। আমরা অবাক হই গার্মেন্টস সেক্টরে প্রাক্তন ও বর্তমান নেতারা এই কুচক্রী মহলটিকে অব্যহত ভাবে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে।
উনরা ব্যবসা করবেন ষোল আনা, আর দায় পরিশোধের সময় বলবেন "পয়সা নাই", "লোকশান দিছি", ইত্যাদি, ইত্যাদি। সব গার্মেন্টস মালিক যে এই ভন্ডামিতে জড়িত তা কিন্তু নয়। তারপরও গার্মেন্টস মালিক হিসেবে তাদের সকলের আদর্শ হল বিজেএমইএ’র সদস্য হলেই অসৎ মালিকদের সব রকম ভন্ডামি, প্রতারণা, শঠতা ও শ্রমিক ফাঁকি দেয়ার কাহিনী অন্ধ ভাবে সমর্থন করা। হায় মানুষের বিবেক!
দেশে উল্লেখযোগ্য গার্মেন্টস ফ্যক্টরির সংখ্যা ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার হবে। এরা সবাই তো ঠগ, জোচ্চোর এবং প্রতারক নয়।
ঠগ ও প্রতারকের সংখ্যা বড়জোর শ’দুয়েক হবে। কিন্তু বাকি কমবেশি চার হাজার আটশ মালিক লেজ নামিয়ে চোখ বন্ধা করে প্রভূভক্ত গৃহপালিত পশুর মত ঠগ ও প্রতারকদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন কি কারনে? শুধুই বিজেএমইএ’র সদস্য বলে এই ভাবে মহাপাপ করতে হবে? ধিক আপনাদের!
শ্রমিকরা কাজ করে নাম মাত্র বেতনে। তারপর একজন শ্রমিক বাসা ভাড়া করে থাকে, দোকানে বাকি খায়, তাদের ছেলেমেয়ে আছে, অনেকে স্কুলে পড়ে, সে কিনা হঠাৎ করে এসে দেখলো ফ্যাক্টরি বন্ধ, তার পাওনা বেতন ভাতা কিছুই পাওয়া যাবে না। তাহলে সে যাবে কোথায়? তার ঘর ভাড়ার টাকা, দোকান বাকি এসব পরিশোধের টাকা কে দেবে?
এরা তো এই দেশের নাগরিক। স্বাধীন বাংলাদেশে এদের প্রতি এত বড় অন্যায় হচ্ছে, রাষ্ট্রের কি কিছুই করনীয় নাই? দেশের নাগরিকদের ভাল মন্দ দেখার জন্যই তো রাষ্ট্র, রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম।
এটা বহু কালের পুরানো কথা। অথচ আমাদের দেশে রাষ্ট্র এবং পুলিশ সব সময় এই অল্প কিছু ঠগ ও প্রতারক গার্মেন্টস মালিকের পক্ষে কাজ করে। তাহলে প্রতারিত শ্রমিকেরা ন্যায় বিচার পাবে কোথায়?
খুবই দু:খজনক যে, দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের একটি বড় অংশ গার্মেন্টস এবং জনশক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত। যে কারনে এইসব সেক্টরে মারাত্মক মারাত্মক অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া অতীতে কখনো সম্ভব হয়নি।
গত পরশুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
টঙ্গীর নিপ্পন গার্মেন্টেসের দুঃখজনক ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন দায়ী ব্যক্তিকে খুজে বের করতে। জানিনা সে রকম কিছু আদৌ হয়েছিল কি না! কারণ উনার নির্দেশ তো নিচের দিকে এসে থেমে যায়। উনার নির্দেশ মত ক্রস ফায়ার এখনও বন্ধ হয়নি।
তবে আমরা দেশের সাধারণ নাগরিকরা এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই, এই প্রতারনা ও শঠতার অবসান চাই এবং সাভার আশুলিয়াতে গত পরশুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
একই সাথে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্ব নিম্ন মজুরী ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার দাবী জোর সমর্থন করি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।