আসছে নতুন প্রজন্ম , আসবে নতুন দিন !
প্রথম পর্বের পর ।
প্রথম পর্ব এখানে
হান্নান ভাই আমাকে নিয়ে গেলো আইটি রুমে । একটি কম্পিউটার এর সামনে বসিয়ে বললো এখানে আপনার বায়োডাটা তৈরী করেন এ কথা বলে তিনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ওপেন করে দিতি চাইলেন । আমি বললাম আমি কম্পিউটার জানি ওপেন করে নিতে পারবো । তিনি মনে হয় খুশি হলেন ।
(২০০০ সালে যুব উন্নয়ন থেকে আমার কম্পিউটার কোর্স করা ছিল)
বায়োডাটা প্রিন্ট করে কাদরি স্যার এর কাছে নিয়ে গেলাম সাথে হান্নান ভাইও গেলেন । হান্নান ভাই স্যারকে বললেন কারও হেল্প ছাড়াই এটা আমি তৈরী করেছি । স্যার বায়োডাটা ভালো করে দেখে বললেন কবে জয়েন্ট করতে চাও ? ( আমার চোখ-মুখ তখন খুশিতে ঝলমল করছে)
আমি বললাম আজতো বুধবার , শনিবারে জয়েন্ট করতে চাই । স্যার বললেন ঠিক আছে । তারপর বললেন তোমাকে যে সেকশনে কাজ দেবো সেটা গার্মেন্টস এ সবচেয়ে ভালো জায়গা ।
প্রথমে বেতন কম , সব মিলিয়ে ৩০০০ টাকা কিন্তু ভালো করতে পারলে ছয় মাস পর বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হবে । আর এই কাজ শিখলে তখন নাকি আমাকে চেনাই যাবে না ! আর বললেন , যাবার আগে যেখানে কাজ করবে দেখে যাও ! একথা বলে তিনি পিয়নকে ডেকে বললেন একে ক্যাড সেকশনে নিয়ে যাও !
ক্যাড সেকশনে গিয়ে দেখলাম- ছোট একটি এসি রুম । তিনটি কম্পিউটার সাজানো , একজন লোক কম্পিউটারে কাজ করছে । একটি উঁচু ডিজিটাইজার টেবিল ( তখন নাম জানতাম না )। আরও একটি চেয়ার-ডেস্ক, মনে হলো এখানে সেকশন প্রধান বসে ।
রুমে সুন্দর এয়ার ফ্রেশনার এর গন্ধ, খুব ভালো লাগলো আমার ।
পিয়ন কম্পিউটারে বসা ইকবাল স্যারকে বললো স্যার, কাদরি স্যার ইনাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন । (ক্যাড সেকশনে একটা ছেলে নেওয়া হবে আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছিল) । এখানে একটু বলে রাখি-তখন খুব কম গার্মেন্টসেই ক্যাড ছিল, বড় বড় কম্পানি ছাড়া । ক্যাড সফ্টওয়্যার এর অনেক দাম এখন অবশ্যয় চাইনিজ বের হয়ে দাম কমেছে ।
তখন ক্যাডে কাজ জানা লোক খুব কম ছিল । আর ধারনা করা হতো এই কাজ অনেক কঠিন! সবাইকে দিয়ে সম্ভব না
ইকবাল স্যার আমার দিকে তাকালেন ! আমার আপদমস্তক তখন গ্রামের ছেলের ছাপ । চেয়ারে বসতে বলে নাম, গ্রাম আর কিছু প্রশ্ন করে কাজে মনোযোগ দিলেন । আমি চুপচাপ বসে স্যার এর কাজ দেখতে লাগলাম কিন্তু কিছু বুঝতে ছিলাম না । স্যার ছোট ছোট কিছু পার্সকে এদিক ওদিক নাড়া চাড়া করছিলেন ( মার্কার করছিলেন ) ।
২০-৩০ মিনিট পর বললেন কি কিছু বুঝতেছ না ? আমি বললাম না । বললেন আস্তে আস্তে হবে । আমি বললাম আজকে যাই । তিনি বললেন কবে থেকে আসবে ? বললাম শনিবার থেকে ! বললেন ঠিক আছে মাহমুদ ভাই ( বস ) ছুটিতে আছে , শনিবারে তোমার সাথে দেখা হবে ।
রুম থেকে বের হয়ে কাদরি স্যার এর সাথে আবার দেখা করে ছুটলাম মিরপুরে দাদার বাসায় ।
সেখানে রাত থেকে পরের দিন ময়মনসিংহ হোস্টেলে । হোস্টেলে সঙ্গী সাথীদের বললাম – আমার চাকরি হয়ে গেছে , আমি সব ছেড়ে-ছুড়ে চলে যাচ্ছি এবং সেটা আগামী কালই ।
হোস্টেলে ৩৪ নং রুমে থাকতাম আমরা চার জন । শামিম ভাই, মস্তোফা ভাই , জিল্লু ভাই আর আমি । তাছাড়া আশে পাশের অনেক টিচার এর সাথেও এই সাড়ে তিন মাসে বেশ ঘনিষ্ট হয়ে গেছি ।
হোস্টেলে সবাই মিলে একটা পরিবারের মত হয়ে থাকতাম । এখানে বলে রাখি ট্রিচার ট্রেনিং হোস্টেল বিশির ভাগই ট্রিচার আর অল্প কিছু নন ট্রিচার । তার ভিতরে আমি ছিলাম সবার জুনিয়র । সবাই আমাকে আদর স্নেহ করতো । শামিম ভাইতো আমকে বড় ভাই এর মত গাইট করতো ।
(এ গল্প অন্য আর এক দিন করবো ইনশাআল্লাহ )
হোস্টেলের সবাই আমকে ঘিরে ধরলো , কোথায় চাকরি কিসের চাকরি ..... আমি বললাম গার্মেন্টস এ , কম্পিউটারে চাকরি ! শামিম ভাই বললেন , এই কম্পিউটার অপরেটর চাকরির জন্য তুমি বিএড শেষ না করেই চলে যাচ্ছ ! বিএড এ ভালো করতে পেলে তো তোমার একটি ভালো স্কুলে চাকরি হবে ! আমি বললাম এই নিশ্চয়তা আমাকে কে দিবে ? তাছাড়া যে দাদা চাকরির খবরটা দিয়েছেন তার উপর আমার ও আমার পরিবারে অগাধ বিশ্বাস যে তিনি জেনে বুঝেই চাকরির খবরটা দিয়েছেন ।
বিএড এর কিছু গাইড বই কিনেছিলাম , দোকানে গেলাম সেগুলি ফেরত দেবার জন্য যদি কিছু টাকা পাওয়া যায় ! কিন্তু তারা দাম দিতে চাইলো ২০% এর মত তাই ফেরত দিলাম না ।
যেহেতু হোস্টেলে থাকি বেডিং-পত্র ( তোষক,বালিশ,মশারি,খাবার প্লেট-গ্লাস,.......) সব আগে থেকেই রেড়ি ছিলো । পরের দিন (শুক্র বার ) সকাল সকাল ছুটলাম অনাগত ভবিষ্যতের দিকে । যাবার সময় গাঙ্গিনা-পাড় ফুটপাথ থেকে কিনলাম দুই বুকে পকেট ওলা নীল রং এর একটি শার্ট আর ইমারজেন্সি ছবি তুলা হয় স্টুডিও থেকে চার কপি ছবি করে নিলাম ।
( এখান কার মত ডিজিটাল ক্যামেরায় ৫ মিনিটে ছবি ! এত সহজ ছিল না )
চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।