তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চালু হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। এবার ব্যাংক চলে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ব্যাংকিং সেবা পেতে যাচ্ছে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এমনই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। ১৮ বছরের নিচের শিক্ষার্থীরা যারা এতদিন ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল তাদের এ সেবার আওতায় আনতে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে একটি সার্কুলার জারি করে এ পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সঞ্চয়মুখী জাতি গড়ে তুলে অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়েই এ ধরণের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সার্কুলারটিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অবদান রাখার নিমিত্তে শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনলে দেশের ফিনান্সিয়াল ইনকুশন (অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি) বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার্থীরা আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
তাই শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়মুখী করার উদ্দেশ্যে দেশে কার্যরত সকল ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিং প্রচলন করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।
কৃষকদের পর শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ শর্তে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগ। ছাত্রজীবন থেকেই সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলাও এর আরেকটি মূল লক্ষ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এখন থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে ষষ্ঠ শ্রেণী ও তার ওপরের শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারবে।
শুধু ১৮ বছরের কম বয়সের শিক্ষার্থীরাই এ সেবা পাবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ১০০ টাকার বিনিময়ে এ হিসাব খুলতে পারবে। তবে হিসাব খুলতে অবশ্যই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অনুমতি লাগবে। আর এই হিসাবের ন্যুনতম স্থিতি ১০০ টাকা থাকলেই চলবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীর এই হিসাব থেকে কোন প্রকার সার্ভিস চার্জ অথবা ফিস আদায় করতে পারবে না ব্যাংক।
তারা প্রতি সপ্তাহে অথবা মাসে তাদের হিসাবে ৫/১০ টাকা বা তার বেশি টাকা জমা রাখতে পারবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে গত বছরের শেষ দিকেই। এ বিষয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গভর্নরের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা করেছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ওই সভায় ডেপুটি গভর্নর, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকগণ এবং একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় গভর্নর বলেছেন, আমরা আমাদের জাতিকে একটি সঞ্চয়ী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছি।
এজন্য ছাত্রজীবন থেকেই তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা উচিত। এ জন্য তাদের জন্য সহজ শর্তে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১০০ টাকার বিনিময়ে তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে হিসাব খুুলবে। তবে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের হিসাব খুলতে অবশ্যই অভিভাবকের অনুমতি লাগবে। তারা প্রতি সপ্তাহে বা মাসে ৫/১০ টাকা বা তার বেশি সঞ্চয় করতে পারবে।
এভাবে তাদের শিক্ষা জীবন শেষে দেখা যাবে বিরাট অঙ্কের টাকা জমা হয়ে গেছে। এটা তারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বা ব্যবহারিক জীবনে গিয়ে কাজে লাগাতে পারবে। সভায় উপস্থিত সবার মতামত চান গভর্নর। একজন নির্বাহী বাদে সবাই গভর্নরকে এ বিষয়ে সমর্থন করেন।
দ্বিমত পোষণকারী কর্মকর্তার মতে, স্কুল জীবনেই একজন শিক্ষার্থীর মনে টাকার চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়া হলে তার মনে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আমাদের দেশে কোনো শিক্ষার্থীরা টাকা আয় করে না। টাকার জন্য অভিভাবকের কাছে হাত পাততে হয়। এভাবে জাতীয় সঞ্চয় বাড়ালেও জাতীয় আয়তো আর বাড়বে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নয়। যে কারণে অনেক মেধাবী ছাত্র অর্থের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে না।
প্রত্যেক স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা ব্যাংকে কিছু সঞ্চয় থাকলে উচ্চ শিক্ষাসহ নানাভাবে উপকারে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে ওই নির্বাহী পরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, একজন শিক্ষার্থীর মনোযোগ থাকা উচিত তার পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে। অর্থের দিকে তার মনোযোগ থাকা উচিত নয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করলে তাদের পড়াশুনায় মনোযোগ ব্যহত হতে পারে।
তাই এ বিষয়টি প্রবর্তনের পূর্বে আরও ভাবার উচিত ছিল। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ নেয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। ###
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।