বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর অনেক পথ হেটে ফেলেছে। তেতাল্লিশ বছর কম সময় নয়। সাফল্য আছে, ব্যর্থতাও আছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জনের পর, নতুন প্রতিষ্ঠিত সরকার 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক' ঢাকা শাখা -এর নাম 'বাংলাদেশ ব্যাংক' নামে ঘোষণা করে। তখন মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, জমা এবং মুদ্রা বিনিময় পর্যালোচনা করার দায়িত্ব ছিল এই বাংলাদেশ ব্যাংকের।
সরকারিভাবে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদগার হিসেবেও এই প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। কিছু সময় পর সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে আদেশ দেয় জাতীয় ব্যাংকগুলির নাম পরিবর্তন করতে। সরকার সেসময় দেশে বিদ্যমান সব বিদেশী ব্যাংকগুলিকে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেয়।
পুরো ৭০ দশক জুড়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক দৃষ্টি ছিল কৃষি উন্নয়নে। অন্য কোনদিকে নিবিষ্ট হবার অবকাশও অবশ্য তখন ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সময় কৃষি ব্যাংক এবং কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কৃষক এবং জেলেদেরকে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পরামর্শ দেয়। NGO গুলো তখন মাঠে নেমেছে। গ্রামীন ব্যাংক, BRAC আর অন্যান্য NGO গুলো তাদের পরিধি বাড়াতে থাকে।
মধ্য আশির দশক পর্যন্ত কৃষি উন্নয়নে একাগ্রতা রাখার পর সরকার ধীরে ধীরে বেসরকারী শীল্প কারখানাগুলির দিকে দৃষ্টি দিতে শুরু করে। এই পরিবর্তনটি অনুনমেয় ভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে।
বস্তুত - উপযুক্ত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ব্যাংকগুলোর কোন ‘সঠিক-তন্ত্র’ জানা ছিল না যা দিয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প আর ঋনগ্রহীতাদের চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য কোন উপযুক্ত নির্দেশনাও ছিল না, যেগুলি দিয়ে তারা প্রকল্প এবং ঋণগ্রহীতাদের নির্বাচিত করে। এর ফলে বছরের পর বছর ব্যাংক এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঋণ পুন:উদ্ধারে সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। অবস্থা এত খারাপ ছিল যে ১৯৮৭ সালে শুধু মাত্র ২৭% ঋণ উদ্ধার করা হয়েছিল। ১৯৯২ শালে তা গেয়ে দারায় ২৩% এ।
কারনটা অবশ্য স্বাভাবিক - ঋণগুলি প্রধানত রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী লোকদেরকে দেওয়া হয়েছিল। খুব কম মানুষই এই ঋণ ফেরত দেবার প্রয়োজন বোধ করেছিল।
অপরদিকে, NGO গুলো ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে ছিল সজাগ। দেশের গরীব লোকদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে তাদেরকে আত্মনির্ভশীল করার ব্যাপারে তারা ছিল একাগ্র। তাদের ৮০% ঋণগ্রহীতা হলো মহিলা।
ক্ষুদ্র ঋণ এর কুফল আছে অনেক, কিন্তু বড় প্রাপ্তি হল দ্রুত ঋণউদ্ধারের হার। তাদের অনুদ্ধারকৃত ঋণ মাত্র ৪%।
বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল ১৯৮৫ সালের আর্থিক বছর শেষে ৪৭৬ মার্কিন ডলার হয়েছিল। এ বছরই আর্থিক উপযোগীতার উদ্দেশ্যে সরকার ঋণ উদ্ধারের জন্য নতুন পলিসি অভিযোজিত করেছিল। তবে এ প্রচেষ্ঠা পূর্বের পলিসিগুলি চেয়ে অল্পই কার্যকর হয়েছে।
বিভিন্ন অংশের সুসমতার মাধ্যমে নব্বই দশকের মাঝামঝি হতে ব্যাংকিং সেক্টর গতী পায়; প্রধানত সাইফুর রাহমান এর নেয়া পদক্ষেপ গুলোর জন্য। তখন থেকে ক্রমাগত ভাবেই সরকারগুলো ব্যাংকিং সেক্টরকে শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করানোর প্রয়াস নিয়েছে। আনেক বেসরকারি ব্যাংক গঠিত হয়েছে। সূচকের উঠা নামার মধ্য দিয়ে পুঁজি বাজার ব্যাংকিং সেক্টরের সম্পূরক হিশেবে কায করেছে।
ব্যাংকিং সেক্টরের সাম্প্রতিক ইতিহাস তেমন সুখকর নয়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।