আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাপলুডু : একটি বিস্তারিত পোষ্ট

আমি আমার মতো

সাপলুডু সে ছিল অনেকটা রূপকথার মত। নীল রঙর আকাশে টকটকে লাল স্মার্ট সূর্য খেলে বেড়াত এপাশ থেকে ওপাশ, তার যেখানে খুশি। একদিকের দিগন্তে- ছিল সবুজ ফসল তো অন্য দিগন্তে হলুদ ফসল। দেশে কারুর কোন চিন্তা ছিল না। সূর্য ছিলেন সদা হুঁসিয়ার।

ক্ষেতে পানির দরকার হলে খবর যেত নীল আকাশের কাছে; সে ঝরঝর করে বৃষ্টি নামিয়ে ফসল ফলাত জমিতে জমিতে। শুকনো পুকুর পানিতে ভরে টলমল করে উঠত। মাছেরা নির্বিঘ্নে ডাঙায় উঠে কুমির কুমির খেলত। সেই দেশে সকলেই ছিল খেলায় মত্ত। প্রজারা সারাদিন ঘরে বসে হরেক কিসিমের সাপলুডু খেলত, কারুর কোন কাজ করা লাগত না।

সেই রাজ্যের রাজা ছিলেন সাপলুডু খেলায় মহা ওস্তাদ। খেলতে বসলে তার আর দিন রাতের হিসাব থাকত না। তাই খেলার জন্য সবসময় আলোয় ঝলমল করত প্রাসাদ। বিদ্যুতের ছিল অফুরন্ত যোগান। লোডশেডিং বলে কোন শব্দ তার কোনদিন শোনেইনি।

পিঁপড়েরা মাটি খুড়লেই উঠে আসত পেল্লাই পেল্লাই কয়লার চাঙড়, সারা দেশেই তা ছিল অফুরন্ত। এছাড়া পারমানবিক বিদ্যুৎ আর রাসায়নিক বিদ্যুৎ ছিল অপারেশন জলভাত। বিভিন্ন দেশ থেকে রানী বাছাই করে আনা সাপলুডু খেলিয়ে খেলিয়ে। রাজপ্রাসাদে ৯৯ জন রানীদের ছিল ঠিক ১০০টা ঘর। রাজা একেকদিন খেলতে বসতেন একেকজন রানীর সঙ্গে।

ছক্কা থেকে পুট যাই পড়ত সেই হিসাবে রানীর ঘর বদলে যেত। কেউ মই বেয়ে তরতর করে উপরে উঠত আবার আবার কেউ সাপের মুখে পড়ে সাঁ করে নেমে যেত। রাজা ভারী আমোদ পেতেন রানীদের সঙ্গে সাপলুডু খেলে কিন' তার নিয়ম ছিল খুব কড়া। এতটুকু ভুলচুক তার সহ্য হোত না। যে রানী পাঁচবার হারতো রাজার কাছে, রাজা তাকে বনবাসে পাঠিয়ে দিতেন।

খালি ঘরে পরীক্ষা দিয়ে এস বসত অন্যদেশের আনকোরা রানী। হিসাবরক্ষকরা কড়া হিসাব রাখত সাপলুডু খেলার। রোজ বিকালে বিশাল স্কোরবোর্ডে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হত। ভাস্করেরা ছেনি হাতুড়ি দিয়ে পাথর কুদে কুদে স্কোর খোদাই করে দিত পাহাড়ে পায়ে। সেটাই ছিল বেশ্বের সর্বপ্রথম স্কোরবোর্ড।

শিল্পীরা তৈরি করত হরেক ডিজাইনের লুডুর নকশা। রাজা হারলে সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলা হত লুডুর নকশা আর আগের শিল্পীর হত ফাঁসি। একদল সাংবাদিক সর্বণ বসে থাকত পাহাড়ের চূড়ায়। তারা দূরবীণ ঘুরিয়ে নিয়ে আসত আন্তর্জাতিক সাপলুডুর খবর। আর দেশী সাংবাদিকরা ছিল সব ভেজাল, সারাদিন বসে বসে সাপলুডু খেলত আর ইন্টারনেটে মনগড়া সব সাপলুডুর খবর ছাপত।

গল্প-কবিতা-গান লিখতে ও গাইতে দেশে কোন বিধি-নিষেধ ছিল না, রাজা আসলেই সেগুলো পছন্দ করতেন। একজন দাড়িওয়ালা দার্শনিক অনেক হিসাব-কিতাব করে প্রমাণ করে দিয়েছিল সমস্ত গল্প কবিতা গানই রূপক আর অলঙ্কারের আড়ালে সাপ লুডুর কথা, রাজা ভয়ানক খুশি হয়ে স্কুলে কলেজে সেগুলো বাধ্যতামূলক করে দিলেন সাপলুডু খেলার সঙ্গে। চিরকালই কিছু মানুষ থাকে বেয়াড়া, উল্টো পথে হাঁটে, রাজার কথা শোনেনা, দেশের ও দশের কথা ভাবে না, নিয়মকানুন তো মানেই না। লুডু খেলতে দেখলে হা হা করে হাসে। তাদের লাইফ স্টাইল ছিল অদ্ভূতরকম।

নদীর নীল স্বচ্ছ পানির বদলে গোসল করতো বিশাল কড়াইতে ফুটন্ত তেলের মধ্যে। চাউমিন-পিৎজার বদলে খেতো শাক-সব্জি-মাছ। রাজা তাদের নিয়ে বেশি মাতা ঘামাতেন না। ফটোগ্রাফার আর ফিল্মমেকারদের দিয়েছিলেন তাদের পেছনে লেলিয়ে। যাঃ ক্যামেরা দিয়ে খোঁচা ইবলিসের বাচ্চাগুলোকে।

এই ভাবে তাদেরকে দেওয়া হত নরকযন্ত্রণা। মৃত্যুর আগে তাদের উদ্ধৃতি নিয়ে কৌটায় ভরে ফরম্যালিনে চুবিয়ে রেখে দেওয়া হত ফ্রিজের ভেতরে। যে রানীরা পাঁচবার হেরে বনবাসে চলে যেত, রাজা অবশ্য তাদের পুরোপুরি ভুলে যেতেন না। মাঝে মাঝে হেলিকপ্টারে সেনা পাঠিয়ে দিতেন তাদের দেখভাল করার জন্য। তারা জরিপ করে এসে রাজাকে জানাত সাপলুডুর নায়িকাদের খবর।

একদল মানুষের কাজ ছিল সেগুলোকে বিশ্লেষণ করা। তারা টেলিভিশন চ্যানেলে সারাদিন বসে সেগুলো বিশ্লেষণ করত। রাজজ্যোতিষীরা খুবই উচ্চমার্গের ওয়াজ-মেহফিল করে ঘোষণা দিতেন কবে কোন রানীকে সাপে কাটবে, কবে কোন রানী অন্ধকোর্টে পড়বে। প্রাসাদে কামরা নং ১০০ আর ৯৮ এর মধ্যে ছিল একটি অন্ধকার কামরা। সে ঘরে যে কী আছে তা সত্যিই কেউ জানত না।

অন্ধকার ঘরে দান পড়া রানীরা কাঁদতে কাঁদতে মন্তব্য দিয়ে সেই ঘরে ঢুকে পড়তো। যেহেতু আজ পর্যন্ত কেউ সেই ঘর থেকে বেরোয়নি তাই তার ভেতরে যে ঠিক কী আছে তা কেউ জানেনা। রাজার একটা আন্দাজ ছিল বটে কিন' সেটা ঠিক না ভুল তা তিনি জানতেন না। একদিন লুডু খেলতে খেলতে রাজার দরকার ছিল দুটি, পড়ল পুটুস। সর্বনাশ রাজার গুটি গেল সেই ঘরে।

আর যায় কোথায়। নিয়মানুসারে তাকেও ঢুকতে হল সেই ঘরে, যাওয়ার আগে শেষ মন্তব্য দিয়ে সশঙ্কচিত্তে তিনি প্রবেশ করলেই সেই অন্ধঘরে। রাজার শেষ ইচ্ছা ও মন্তব্য অনুসারে তার মৃত্যুর ঠিক ৪৭৫২৭১ বছর পরে নতুন করে লাপলুডু খেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। যত্তসব। [ সংবিধিবন্ধ সতর্কীকরণ : এই সাপলুডুটিতে ১০০ ও ৯৮ এর মধ্যবর্তী কালো ঘরে গুটি পড়লে সে আর এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

] ডাউনলোড লিঙ্ক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।