আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেরাউনের পুত্রদের সন্ধানে



মিসরের প্রতাপশালী শাসক ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস-এর ৫২ জন পুত্র সন্তানের সমাধি কোথায় তার একটা হদিস সম্ভবত এবার পাওয়া যাবে। সম্প্রতি এ রকম একটা সমাধির বর্ধিত অংশের সন্ধান পাবার পর প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নতুন আবিস্কৃত সমাধির বর্ধিত অংশের খনন কাজ চলছে কায়রো থেকে ৫শ' কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাচীন নেকরোপলিসের ভ্যালি অব দ্য কিংস অঞ্চলে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এখন যে কমপ্লেক্সের খনন কাজ চলছে তার ঠিক নিচেই আরেকটি তলা রয়েছে এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছে দ্বিতীয় রামেসেস-এর পুত্র সন্তানরা। কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কেন্ট উইকস এই খনন কাজের নেতৃত্বে ছিলেন।

ছয় বছর আগে এই সমাধির সন্ধানে পাওয়া যায়। আর আগে এটা বছরের পর বছর ধরে বন্যার পানির সঙ্গে আসা পলিতে ঢাকা পড়েছে। পার্শ্ববর্তী তুতান খামেন সমাধি কমপ্লেক্সের খনন কাজ হবার পর সেখানখার কাদা বৃষ্টির পানির সাথে গড়িয়ে এসে এই ঢেকে ফেলার কাজকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। তবে উইকসের আগেও আরো একজন কেভি-৫ নামে পরিচিত এই সমাধিটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই ব্যক্তিটি হচ্ছেন একজন ইংরেজ পর্যটক।

১৮২০ সালে এই পর্যটক খনন কাজ চালিয়ে সমাধি কমপ্লেক্সের প্রথম তিনটি ঘর বের করতে সম্ভম হন। পরে তিনি এই খনন কাজ পরিত্যক্ত করেন। প্রায় দেড়শ' বছর পর মিসর সরকার উক্ত উপত্যকা অঞ্চলের একটা ভূ-প্রকৃতিগত মানচিত্র প্রণয়নের জন্য অধ্যাপক উইকস্কে দায়িত্ব দেন। উল্লেখ্য, বন্যার পানির কারণে উপত্যকাটিতে ব্যাপক ভূমিক্ষয় চলছিল। উইকস এই কাজ করতে গিয়ে ১৯ শতকের পর্যটকদের ডায়েরি এবং প্রাচীন মিসরিয় প্যাপিরাস লিপির ওপর ব্যাপক অধ্যয়ন চালান।

প্যাপিরাস লিপিতে রাজকীয় সমাধিগুলোতে চোররা কোনপথে আসতো যেতো তার উল্লেখ পাওয়া যায়। খৃষ্টপূর্ব ১১৫০ সালের একটি প্যাপিরাস লিপিতে উল্লেখ আছে যে, দ্বিতীয় রামেসেস-এর সমাধি থেকে কিভাবে একজন চোর আরেকটা পথ ধরে অন্য একটা সমাধিতে প্রবেশ করেছিল। সম্ভবত সে সমাধিটা ছিল কেভি-৫। পুরনো ডায়েরি এবং প্যাপিরাস লিপির ওপর অধ্যয়নের ভিত্তিতেই অধ্যাপক উইকস নতুন সমাধির প্রবেশ পথ পুনঃ আবিষ্কার করেন। উইকস্ বলেন, কেভি-৫-এর পুনঃ আষ্কিারের আগে দ্বিতীয় রামেসেস-এর পুত্রদের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না।

খনন কাজের পর ১৬টি স্তম্ভের ওপর নির্মিত একটা বিরাট ঘর বেরিয়ে আসে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল সেখানেই বুঝি ঘরটির শেষ। কিন্তু উইকিস সে ঘর থেকে একটি করিডোরের প্রবেশ পথ খুঁজে পান। দীর্ঘ করিডোরের পাশে রয়েছে ২০টি কক্ষ। করিডোরটি খাড়াভাবে অবস্থিত ২টি কক্ষ দ্বারা বিভক্ত এবং সে কক্ষ দু'টিরও উভয়পাশে রয়েছে ২০টি করে কক্ষ।

উইকস আশা করছিলেন দুই করিডোরের সিঁড়ি এবং সেগুলোর শেষ মাথা পর্যন্ত চালু পথ ধরে এগিয়ে যাবার মাধ্যমে সম্রাটের পুত্রদের মূল সমাধিস্থলে পৌঁছানো যাবে। এক লিখিত বিবৃতিতে উইকস বলেছেন, যেসব কারণে কেভি-৫ খুবই গুরুত্ব বহন করছে সেগুলো হচ্ছে যে, এটা রাজপুত্রদের সমাধিস্থল, এটা এক অন্যান্য পরিকল্পনায় নির্মিত একটা বিরাট আকারের সমাধিস্থল। এর কারুকাজ ও স্থাপত্য নকশা মিসরের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে রাজকীয় পরিবার সম্পর্কে তথ্যদিতে পারবে। ফেরাউন রামেসেস-এর ৫০ জন সন্তানের আবিষ্কৃত সমাধি মিসরে হযরত মূসা (আ-এর অবস্থানের প্রমাণকে আরো শক্তিশালী করেছে। মিসরে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সর্ববৃহৎ সমাধিতে ৬৭টি কক্ষ রয়েছে এবং সেখানে ফেরাউনের ৫২ জন সন্তানের মধ্যে ৫০ জনের কবর খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রত্নসম্পদ বিভাগের প্রধান বার্তাসংস্থাকে বলেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে হযরত মূসা (আ যখন মিসর ছিলেন তখন ফেরাউন মিসর শাসন করতো বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হব বলে আশা করা যায়। মিসরের রাজ উপত্যকার সমাধিগুলোর বেশিরভাগ লুণ্ঠিত অবস্থায় পাওয়া যায় কিন্তু সর্বশেষ আবিষ্কারটি ছিল পুরোপুরি অক্ষত। সমাধি ক্ষেত্রে প্রবেশের দরজাটি নীলনদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত এবং ১৯ শতকে সৌখিন প্রত্নতত্ত্ববিদরা ইতঃপূর্বে তা আবিষ্কার করে। তবে কয়েকটি কক্ষের দেয়াল ধসে পড়ায় তারা অধিক অগ্রসর হতে পারেনি। প্রবল বৃষ্টির কারণে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হয়।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।