..
ষ্টেশনে ট্রেইনের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। মাকে দেখলাম রেললাইনের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কেমন জানি ভয় লাগলো। মাকে ধরে টেনে দূরে নিয়ে আসলাম। তখন দূরে দেখলাম ট্রেইনটা দেখা যাচ্ছে।
ট্রেইনটা দেখতে খুবই অদ্ভুত লাগছে। ট্রেনের দু'পাশে অনেক মানুষ ঝুলে আছে। আরও অদ্ভুত লাগলো যখন ট্রেইনের হুইসেলের বদলে নিজেরা চিৎকার করে ট্রেইনের উপস্হিতি জানান দিতে লাগলো। কি অদ্ভুত!
মা আমার সাথে একদমি কথা বলছেনা। ট্রেইন কাছে এসে থামতেই মা ট্রেইনে উঠে গেলো।
আমি উঠতে গিয়ে খুব অবাক হলাম। কারণ, ট্রেইন লাইন হলো বাঁশের, এই লাইনে ট্রেইন চলা কি করে সম্ভব! মা ট্রেইন থেকে নেমে গেলো আমিও নামলাম। পাশে দেখি একটা খুব সুন্দর ট্রেইন। ও মা! এটা এলো কখন? কি জানি! মা'র পিছু পিছু আমিও ঐ ট্রেইনের দিকে গেলাম। ট্রেইনটা খুব সুন্দর।
নীলচে রং-এর, ট্রেইনের সিঁড়িগুলো খুব উঁচু উঁচু, উঠলাম অনেক কষ্ট করে। কিন্তু আমার ছোট বোনটা উঠতে পারছেনা। আমি ওকে টেনে হিঁচরে ট্রেইনে তুললাম। ট্রেইনে খুব ভিড় কোথাও বসায় জায়গা নেই। আমরা পিছনের দিকে যেতে থাকলাম।
কিছুদূর যাবার পর দেখি আমার একটা কাজিন! কত্তোদিন পর দেখলাম। কতো বড় হয়ে গিয়েছে!
আমরা একদম পিছনে যায়গা পেলাম। আমার ভাই ও আমাদের সাথে এসে বসলো। ট্রেইনটা উপরের দিকে চলতে শুরু করলো। হঠাৎ ট্রেইনের পিছনের বগির দরজাটা খুলে গেলো।
আমি ভয়ে মা আর বোনকে ধরে রাখলাম, যদি ওরা পড়ে যায়! একটু পর আপনা-আপনি দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো। আমি আর আমার ভাই গিয়ে সেই দরজাটায় হেলাম দিয়ে পুরনো এ্যালবাম দেখতে লাগলাম। আমাদের ট্রেইনটা ভীষণ গতিতে উপরের দিকে ছুটে চলছে...
***********************************************************************
আমার ঘুম ভেংগে গেলো। যাক ঘুমিয়েছি তাহলে! ঘড়িতে দেখলাম মাত্র ১০ মিনিট ঘুমিয়েছি। সারারাত পর সকালে ১০ মিনিট ঘুম! মাথা ব্যাথায় মা, আম্মু...বলে কঁকিয়ে উঠলাম।
মা'কে ভীষণ কাছে পেতে ইচ্ছা করলো। কেঁদে ফেললাম...মা তুমি এখন কাছে থাকলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই হয়ত মাথা ব্যাথাটা কেটে যেত...মা, আম্মু...প্লিয একটু মাথায় হাত রাখো না...চোখের জলে বালিশ ভিজে উঠে...
আমার চোখের সামনে একটা বড় চকোলেট কেইক ভাসে। কেইকের উপর ১৩টা মোমবাতি জ্বলছে। ১৩টা মোমবাতি কেনো!?! ১৩ তো আনলাকি আমি কি আবার ঘুমিয়ে গেলাম! চোখ খুলে আমার কেইক খেতে ইচ্ছা করে...চকোলেট কেইক...
আমি চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকি। আম্মুকে ডাকলে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বললে হাত বুলিয়ে দিবে কিন্তু আমার ডাকতে ইচ্ছা করেনা।
আমি শুয়ে শুয়ে তা'এর কথা ভাবি। ওর কি এখন মাথা ব্যাথা হয়? হয় না বোধহয়। এখন তো আমি কাছে নেই, বক বক করে, ঝগড়া করে ওর মাথা ধরাই না। এক আধটু হলে আম্মু নিশ্চয়ই হাত বুলিয়ে দেয়। ব্যাথা না হলেও দেয়...আমি জানি।
আমার মাথা ব্যাথা হলে ও সবসময় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। ওর আমার মাথায় হাত রাখলেই মনে হতো আমার সব ব্যাথা নেই! মাথা ব্যাথা হলে ও হাত বুলিয়ে দিবে তাই ঔষুধ খেতাম না। ও আমাকে বলে বলে ঔষুধ খাওয়াতো। আমার খুব ইচ্ছে করে ওকে ডেকে বলি, "আমার খুব মাথা ব্যাথা..."। ও শুনে নিশ্চয়ই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো আর আমার খুব ভালো লাগতো, মনে হত আমার মাথা ব্যাথা সেড়ে যাচ্ছে...কিন্তু আমি কাউকে ডাকি না, চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকি।
শুয়ে শুয়ে ছড়া বানাই,
রেলগাড়ি রেলগাড়ি
উড়ি উড়ি
মেঘের দেশে
যায় ভেসে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।