এইটা আমার ব্লগ। সাভারের রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আগের দিন, ওই ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ওই ফাটল দেখা দেয়ার পরেও ওই ভবনের সকল গার্মেন্টস কারখানা পরদিন খোলা হয়, কিন্তু ব্র্যাক ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। ব্র্যাক ব্যাঙ্ক যে খুব মানব দরদী এবং কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান তাও না। গার্মেন্টস শিল্প গুলোর মতই ব্র্যাক ব্যাঙ্ক একটি উপার্জনমুখী প্রতিষ্ঠান।
তাহলে, ব্র্যাক ব্যাঙ্ক কেন বন্ধ ছিল, গার্মেন্টস গুলো খোলা হইছে ?
আলোচনায় আমরা দেখব, বাংলাদেশের গার্মেন্টস এখন ভয়াবহ রকম লাভ জনক। এত বেশি লাভ জনক যে, টাকার লোভ এ মালিক এর হিতাতীত লোপ পেয়ে যায়। লাভ একটা ভালো জিনিস। একটা দেশের ইন্ডাসট্রিয়ালিজেসানের এর জন্যে কাপিটাল একামুলেসান খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু দেশের টাক্স ফাকি দিয়ে এবং শ্রমিক দের ঠকিয়ে এই ভাবে বছর এর পর বছর সুপার নরমাল প্রফিট করা টা, আলটিমেটলি ওই ইন্ডাস্ট্রি এর পতন এর কারণ হয়ে দাড়াবে বলে মনে হচ্ছে ।
এই বিষয় টা আমি একটা পোশাক শিল্প কারখানার বাস্তবিক প্রফিটেবিলিটি হিসেব করে দেখাবো।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা
আজ থেকে ৮/৯ বছর আগে, পোশাক শিল্পে মারচেন্ডাইজার আর সিনিয়র মার্চেন্ডডাইজার হিসেবে কাজ করেছিলাম বেশ কয় এক বছর। খুব কাছাকাছি থেকে ইন্ড্রাজট্রিটা দেখেছি এবং সজ্ঞানে ঐ ইন্ডাস্ট্রি টা সুইচ করেছি অনেক গুলো কারনে ।
আমি জীবনে অনেক ধরণের চাকুরী করছি, যার মধ্যে অনেক গুলো কঠিন এবং প্রচন্ড ডিমান্ডিং। সব চাকুরির মধ্যে আমার কাছে সব চেয়ে চেলেঞ্জিং মনে হইছে, গার্মেন্টস এর মারচেন্ডাইজার হিসেবে কাটানো চাকুরীর কয় একটা বছর।
মনে পরে, তখন স্বপ্নের মধ্যে দেখতাম শিপমেন্ট ফেইল হইছে, ফ্যাক্টরি তে আমার অর্ডার ঢুকে গেছে কিন্তু ওয়ার্কাররা লাইন বন্ধ করে বসে আছে কারন আমার একটা ট্রিমস সাপ্লায়ার ডেলিভারি দিতে ফেইল করছে, বায়ার মিটিং এ কস্টিং এর সিটে একটা শুন্য কম দেয়ার কারনে অর্ডার এর ভ্যালু ভুল হইছে এবং তাতে এল সি ভালু ১ লাখ ডলার কমে গেছে, আর ডাইরেক্টর আমার পেছনে খোলা মাঠে বন্দুক নিয়ে দৌড়েছে। প্রচণ্ড চেলেঞ্জিং ছিল চাকুরীটা। আমার অফিস ছিল একটা ফাক্টরীর সাথে লাগানো। ফলে, খুব কাছ থেকে দেখেছি একটা ফাক্টরী তে পি এম থেকে শুরু করে একটা সুইং অপারেটর বা হেলপার কি অসম্ভব পরিশ্রম করে। ফলে এই ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট সকলকেই, আমি প্রচণ্ড রেস্পক্ট করি মনে মনে ।
সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু আলোচনা করছি।
আমাদের পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, বাংলাদেশের এক একটা গার্মেন্টস ফেক্টরী ভয়াবহ রকম প্রফিটেবল ।
বাংলাদেশে আর কোন ইন্ডাস্ট্রি তে এতো লাভ নাই। ঐ জন্যেই এই ইন্ডাস্ট্রিটা এত বুম করছে। আমি একটা বড় গ্রুপ এ ছিলাম।
যে গ্রুপ এ, প্রায় ৮০ টা লাইন ছিল। প্রায় ৯ বছর আগে, সেই সময় তাদের টার্ন ওভার ছিল ছিল, প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার এর কাছাকাছি এবং এখন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে বলে শুনেছি।
ব্র্যাক ব্যাংক কেনো বন্ধ থাকে, কিন্তু গার্মেন্টস কেনো বন্ধ থাকেনা সেই আলোচনা করতে গেলে আপনি দেখবেন। ব্র্যাক ব্যাংক এর পোস পাস বেশী থাকতে পারে এবং একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেখতে আনকুল এবং খ্যাত মনে হতে পারে, রানা সেন্টার এর সুসজ্জিত ব্র্যাক ব্যাংক থেকে তার উপর এর তলার সারি সারি বদ খত মেশিনের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি গুলো অনেক বেশী প্রফিটেবল । অনেক অনেক বেশী প্রফিটেবল ।
এই প্রফিট টা বেশি হওয়ার কারণে একটা গার্মেন্টস এর মালিক আর কাছে তার ফ্যাক্টরি এক মিনিটের জন্যে বন্ধ করার স্টেক টা অনেক হাই ।
ঐ প্রফিট টা এতো ভয়াবহ রকম বেশী যে, এক একজন ফ্যাক্টরি মালিক লোভ এ, কামনায় অন্ধ হয়ে যায়। তার কাছে, একজন ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার হয়ে যায় ক্রিতদাস এর চেয়ে অধম । মানুষ তার কাছে হয়ে যায়, সংখ্যা। মানবিকতা শুধু মাত্র তার নিজের সন্তানদের জন্যে প্রযোজ্য।
বাকি সব তার কাছে, কর্পোরেট সোসিয়াল রেস্পন্সিবিলিটির শো অফ । সামনে সামনে অনেক ভদ্র হলেও, তার মনে এক মাত্র হিসাব থেকে প্রফিতিবিলটি আর শিপমেন্ট।
তাই তারা শ্রমিক দের ফ্যাক্টরির তালা মেরে দরজা আটকে রাখে যেন একজন শ্রমিক এক মিনিটের জন্যে বাহিরে যেতে না পারে। তাই বিল্ডিং এর পিলার এ ফাটল ধরলেও সবাই কে ডেকে এনে কাজে বসায়, তাদের মাথায় ও আসেনা দুর্ঘটনার সম্ভাবনার কথা । কারণ, একজন শ্রমিকের প্রতি মূহুর্তে সুইং মেশিনের এর পুলিতে ববিন এর এক একটা ঘূর্ণন তার কাছে, কাচা টাকা।
অনেক অনেক টাকা। যে টাকার লোভ সামলানো মুশকিল। তাই সে কোন মতোই তার ফাক্টরী বন্ধ হতে দিবেনা।
ব্যাক্তির এবং প্রতিষ্ঠান এর প্রফিট করাটা আমি অন্যায় মনে করিনা। কিন্তু অতিরিক্ত প্রফিট খারাপ।
কারণ, অতিরিক্ত প্রফিট অতিরিক্ত লোভ এর জন্ম নাই। এবং অতিরিক্ত লোভ থেকে মানুষের হিত অহিত এর বোধ লোপ পায় ।
একটু আমরা দেখি একটা গার্মেন্টস কি পরিমান লাভ করা।
এই লাভ তা যে মাত্রাতিরিক্ত বেশি সেটা বোঝার জন্যে আমি আজকের হিসেবে একটা অত লাইনের গার্মেন্টস ফাক্টরীর প্রফিট কেলকুলেট করব। আমি আপনাদের দেখাব, একটা ফাইভ পকেট জিন্স এর একটা অর্ডার করতে একটা ফ্যাক্টরি কি পরিমান প্রফিট করে ।
আমরা ছেলেরা যে জিন্স প্যান্ট গুলো পরি -ফাইভ পকেট জিন্স তাই।
হিসাব টা আমি করব সি এম দিয়ে। সি এম হচ্ছে,কাটিং এবং মেকিং চার্জ। একটা ফাইভ পকেট জিন্স এর সি এম ১.২ ডলার থেকে শুরু করে ২.৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। স্পেশিয়াল কেস এ, এইটা ৫ ডলার ও হতে পারে, কিন্তু সেই গুলো স্ট্যান্ডার্ড হিসেব নয়।
আমি হিসেব এর সুবিধার জন্যে, ধরবো একটা ফাইভ পকেট জিন্স এর সি এম , ১.৫ ডলার।
এবং একটা ৬৫ মাশিনের এর স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাক্টরির ফাইভ পকেট জিন্স এর দৈনিক প্রডাক্টিভিটি ১০০০ থেকে ১২০০ পিচ। আমি হিসাব আর সুবিধার জন্যে ধরলো ৯০০ পিস । যেইটা কম ও না বেশীও না।
একটু বলে নাই।
ঐ ধরনের হিসেব কখনোই একুইরেট হয়না। ঐ হিসেবেটা যারা ডাইরেক্ট বায়ার বা বায়িং হাউসে দিয়ে ইন্টারমেডিয়ারি হিসেবে কাজ করছে তাদের জন্যে প্রযোজ্য। সাব কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরি গুলোর প্রফিট অনেক কম হয়।
যাই হোক, হিসাব টা দেখেন।
কাটিং এন্ড মেকিং চার্জ সর্ব নিম্ন ১.৫ ডলার ১১৭ টাঁকা
নেট প্রফিট ১৫% অফ সি এম ১৭.৫৫ টাঁকা
একটা ৬৫ মেশিন স্ট্যান্ডার্ড লাইন এর দৈনিক প্রোডাক্টিভিটি ৯০০ পিস
একটা স্ট্যান্ডার্ড লাইন এর দৈনিক লাভ ৯০০ পিস x ১৭.৫৫টাকা =১৫৭৯৫ টাঁকা
ছোট একটা ৮ লাইনের ফ্যাক্টরির দৈনিক লাভ ১৫৭৯৫ টাঁকা x ৮ লাইন = ১২৬,৩৬০ টাঁকা
মাসিক লাভ ৩, ১৫৯,০০০ টাঁকা বা, ৩১.৫৯ লাখ টাঁকা
বছরে যা হবে, ৪ কোটি টাকার কাছাকাছি।
লাইন বাড়লে প্রফিট আর বেশী। এবং আমাদের দেশের হিসেবে ৮ লাইন আর ফ্যাক্টরি কে ছোট ফ্যাক্টরি হিসেবে ধরে হয়।
এই হিসাব টা অনেক কঞ্জার্ভেটিভ হিসেব করছি। ঐ লাভ টা এর অনেক দিক দিয়ে বারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কমতেও পারে, কিন্তু সেইটা এক্সেপ্সান ।
এবং ঐ প্রফিট টাকে ধরে রাখার জন্যে জন্যে, প্রতি টা ফ্যাক্টরি ভয়াবহ রকম ওভার বুকিং করে থাকে
একজন বায়ার এর কাছে তার ঠিক টাইম এ শিপমেন্ট খুব ক্রিটিকাল একটা ইস্যু।
কারণ ইউরোপে, আমেরিকা তে কাপড় কেনা বেচা হয় সিজন অনুসারে।
ফলে দেখা যেই, ওভার কাপাসিটি বা প্ল্যানিং এর ভুল এর কারণে, একটা ফ্যাক্টরিতে সব সময় শিপমেন্ট ডিলে হওয়ার ভয় এর মধ্যে থাকতে হয়। কারন ফ্যাক্টরি মালিক অর্ডার নেয়ার সময় ৯৯% ক্ষেত্রে কন্টিনজেন্সি বা দুর্যোগ এর জন্যে আলাদা হিসাব রাখেনা।
ফলে হরতাল হোক, আগুন হোক, বিল্ডিং এর পিলার ধ্বসে পরুক -ফ্যাক্টরি মালিক এর প্রতি দিন ফ্যাক্টরি চালু রাখার বাধ্য বাধকতা থাকে। ঐ খানে মানবিকতা, হেলথ এন্ড সেফটি কোন ইস্যু থাকেনা ।
এবং একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির একমাত্র কন্সিদারেশান থাকে –বায়ারের শিপমেন্ট।
বাংলাদেশের মতো দুর্যোগ পূর্ণ দেশে, সারা বছর এঐ ধরনের অপ্টিমাল লেভেল এ ফ্যাক্টরি চালানোর এই প্রবনতার মধ্যে শ্রমিকের প্রতি সামান্য মানবিকতা দেখানোর সুযোগ থাকেনা ।
তাই ঘুরে ফিরে দেখবেন, অদক্ষতা তো আছেই ঘুরে ফিরে, কিন্তু লোভ ই হয়ে পরে ঐ দুর্ঘটনা গুলোর মূল নিয়ামক।
তাই দেখবেন, একটা গার্মেন্টস এ আগুনে পুড়ে , ১২০ জন মানুষ মরে যাওয়ার পরেও একজন মালিক এর চিন্তা থাকে তার শিপমেন্ট কয়টা মিস হইলো। তার কয়টা এল সি মিস গেল।
কটা শ্রমিক মরলে, ১০টা আসবে। কিন্তূ একটা বায়ার এর শিপমেন্ট মাইর গেলে, সেই বায়ার আর নাউ আসতে পারে।
ফলে একটা অমানবিক এবং অসম্ভব সিস্টেম আর উপর পুরো ইন্ডাস্ট্রিটা দাঁড়ানো।
এবং ঐ প্রফিট এর উপর গার্মেন্টস মালিক রে এক টাকাও কর্পোরেট ট্যাক্স দেয় না।
ঐ টার জন্যে আমাদের দেশের প্রতিটা পোশাক মালিক একট টেকনিক এপ্লাই করে।
যা বাংলাদেশের প্রতিটা ইনকাম ট্যাক্স এর লোক এর জানা, ব্যান্ক এর লোক এর জনা সবার জানা শুধু অর্থমন্ত্রী ছাড়া ।
সেইটা হলো, পোশাক শিল্প এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড হওয়ার কারনে, পাঁচ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স সুবিধা পায়। (ঐ বছর এর হিসেব টায় একটু ভুল হতো পারে) মালিকেরা যেইটা করা, তা হইলো, ঐ ফ্যাক্টরি টারে, ট্যাক্স হলিডে এক্স্পায়ারী পর্যন্ত প্রফিটেবল দেখায়। তারপর যখন ট্যাক্স হলিডে শেষ হয়,ওই সেম জায়গায় সেম ফেক্টরিকে তারা নাম পাল্টায় এবং আরেকটা নামে এনলিস্ট করে। এবং পুরান ফ্যাক্টরি কে লুজিং হিসেবে দেখায়।
এবং এক টাকাও দেশ কে কর্পোরেট ট্যাক্স দেয় না তারা।
শুধু মাত্র, এল সি ভালু থেকে সরকার একটা এই আই টি (advanced income tax)কেটে রাখে। যেইটা আগে ছিল .৫ যা লাস্ট বাজেটে বাড়িয়ে বোধ হয় ১% করে হইছে, যেই টা আমি আমাদের অর্থমন্ত্রীর বিগত পাঁচ বছরের এক মাত্র ইনটেলিজেন্ট সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
প্রফিট করা কোন অন্যায় না। অর্থনীতি কে সামনে আগাতে হলে, নতুন ইনভেসমেন্ট এবং ক্যাপিটাল একুমুলেশানের জন্যে প্রফিট খুবই প্রয়োজনীয় একটা জিনিস।
কিন্তূ, দেশের সস্তা শ্রম এর সুযোগ নিয়ে, দেশের প্রতি কোনো দায় পরিশোধ না করে, এতো প্রফিট করার পর ঐ শ্রমিক গুলোর প্রতি সামান্য দায়বধ্যতা না দেখানোটা ভয়াবহ একটা অন্যায়। তাই দেখা যাচ্ছে, ঘুরে ফিরে সমস্যা একটাই অতিরিক্ত প্রফিট।
ঐ লোভ কে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, কিন্তু দেশের নাগরিক যেন ঐ লোভ এর বলি না হয় সেটা দেখার দায় কিন্তু রাষ্ট্রের।
এই জন্যেই রাষ্ট্রকে আইন সৃষ্টি করতে হয়। একটা প্রতিষ্ঠান এর নিয়ম কানুন কি হবে, শ্রমিক অন্যায় এর শিকার হল তার প্রটেকশান কোথায় চাইবে , তার শ্রম এর মুল্য কত হলে ন্যায্য হবে, তাকে কি কি সুবিধা দিতে মালিক বাধ্য থাকবে।
কিন্তূ, ঠিক এই কাজ গুলোই বাংলাদেশে ন্যায্য ভাবে, সমতার ভিত্তিতে হয় নাই। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে লেবার ল করা হইছে বটে কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভাবে মালিক এর স্বার্থ রক্ষার জন্যে সৃষ্ট-এবং পোশাক মালিক এর সীমাহীন প্রফিট টাকে প্রটেকশান করার পারস্পেক্টিভ থেকেই ঐ ২০০৬ এর লেবার ল করা হইছে।
যেমন বাংলাদেশের লেবার ল তে অনেক ভাল ভাল কথা বলা আছে, কিন্তু শ্রমিক দের পেনশন বা গ্রাচুইটি নামক কোন কনসেপ্টই নাই। ইউরোপ আমেরিকা বাদ দান, ইন্ডিয়া তেও লেবার লতে শ্রমিক দের যত টুকু প্রটেকশান দেয়া হইছে, তার সামান্য টুকু বাংলাদেশের লেবার ল তে নাই।
ফুলে শুধু গার্মেন্টস নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সহ সকল প্রতিষ্ঠানেই শ্রমিক এর উপর একটা ভয়াবহ শোষণ নিশ্চিত করা হইছে ২০০৬ এর লেবার ল এর মাধ্যেমে।
বিজেএমইএ।
মালিক দের স্বার্থ রক্ষার জন্যে গড়া প্রতিষ্ঠান কে দিয়েই যদি ঐ লোভ কে নিয়ন্ত্রন করতে হয় তো যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তার সব চেয়ে চমৎকার এক্সাম্পল বিজেএমইএ। । যার প্রথম কাজ হচ্ছে ডিনায়েল এর জন্যে গ্রাউন্ড সৃষ্টি করা এবং মালিক এর স্বার্থ রক্ষা করা। বিজেএমইএ কোন দিন , শ্রমিক দের স্বার্থ রক্ষা করবেনা।
এইটাতাদের কাজই না। কারন আমাদের দেশের পোষাক শিল্প যেই নীতির ভিত্তিতে দারাইছে তার এসেন্স তেই হলো, মালিক এবং শ্রমিক প্রতিপক্ষ। মালিক এর কাজ হইলো তার অসীম লোভ টাকে নিবৃত্ত করের জন্যে সর্ব নিম্ন মজুরি দিয়ে শ্রমিকের শ্রম কে কেনা। আর শ্রমিক এর স্বার্থ হচ্ছে, এই কাজ এর জন্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা। কিন্তু, মালিক পক্ষ সুসংগঠিত এবং শ্রমিক এর কোন নিজস্ব প্রতিনিধি না থাকাতে বর্তমান নিয়মে স্রমিকেরা তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চরম ভাবে ব্যারথ হচ্ছে।
তাই শ্রমিক এর স্বার্থ রক্ষার জন্যে প্রয়োজন ট্রেড ইউনিয়ন। এইটা মুক্ত বাজার অর্থনীতির ফাউন্ডেশন বা পিলার -কালেক্টিভ বারগেইনিং রাইটস।
এখন তাই ট্রেড ইউনিয়ন একটা মাস্ট।
ট্রেড ইউনিয়ন
মানুষের প্রকৃতির সীমাহীন লোভ এর যে বৈশিষ্ট্য, তার থেকে মুক্তি পাওয়া তা অসম্ভব। তাই, মালিক এর হাত থেকে শ্রমিক রে রক্ষা করার জন্যে বাজার অর্থনীতির মৌলিক একটা চাহিদা হইলো, কালেক্তিভ বারগেইনিং রাইটস ।
ট্রেড ইউনিয়ন।
ট্রেড ইউনিয়ন যদি থাকে তো শ্রমিকেরা নিজেদের দাবী গুলো নিয়ে সংগঠিত হয়ে, মালিক দের সাথে দান দরবার করতে পারবে।
এইটা বিজেএমই জানে। ঐ জন্যে তারা ভুজুং ভাজুং বলে এতো দিন ধরে এইটা ঠ্যাকায় রাখছে। তারা বলা আমাদের শ্রমিকেরা এখনও রেডি না।
তাদের সেই মানসিকতা নাই। এইটা একটা পিউর বুলশিট।
প্রতি মানুষ জানে, সে কি চায়। প্রতি টা মানুষ তার হিস্যা আদায় করার জন্যে দাবী জানাতে সক্ষম। পোশাক শ্রমিক রাও তার ব্যাতিক্রম নয়।
সংগঠিত নয় বলেই বিজেএমই এত দিন এই অন্যায় টা চালু রাখতে পারছে। এইটা চালু রাখাই ট্রেড ইউনিয়ন এর দাবী না মানার এক মাত্র কারন।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প,ইনফান্সি স্টেজ পার হয়ে গেছে।
আজ থেকে ১০ বছর আগে আমি যেই সব ফ্যাক্টরি বা গ্রুপ দেখছি, ৮ বা ১০ লাইন এর, তার প্রতি টি এখন, ৩০ থেকে ৪০ লাইন হয়ে গেছে। মালিক দের অন্তরদন্দেরর কারনে বিপর্যস্ত হওয়া ফ্যাক্টরি বাদে সব ফ্যাক্টরি আগাইছে।
এবং আগাচ্ছে।
আমাদের ব্যাক ওয়ার্ড লিঙ্কেজ এখন অনেক গভীর। এখন ঐ ইন্ডাস্ট্রি পপাত ধরণী তল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। বরং ক্রিতদাসিi শ্রমিক দের নিয়ে আন্তর্জাতিক যে প্রচারনা, তা অত্যন্ত সত্য এবং বাস্তব- সেই নেগেটিভে ইমেজ তাই আজ আমাদের পোশাক শিল্পের সব চেয়ে বড় শত্রু।
পোশাক শিল্প কে বেঁচেতে হবে
অবশই বাচাতে হবে।
পোশাক শিল্প, আমাদের অর্থনীতির লাইফ বলদ। পোশাক শিল্প কে বাদ দিলে বাংলাদেশ সোমালিয়া হইয়ে যাবে। দুর্ভিক্ষ সহ ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। আমাদের সু ষিল সমাজ, মধ্যবিত্ত সমাজ, হালের কর্পোরেট বেনিয়া দের সারভ করা, শহুরে হাই ফাই সমাজ সবার অর্থনৈতিক ভিত্তই পোশাক শিল্প। এবং পোশাক শিল্প ধ্বসে পরলে এর সব কিছুই ধবসে পরবে।
কিন্তু বিজেএমইএ এর নেতারা ক্যামেরার সামনে আসলে যে বলেন, সোনার ডিম পাড়া হাস কে মেরে ফেলবেন না সেইটা একটা ভয়াবহ শঠতা ।
কারণ, কেও যদি দায়ি হয় , বিজেএমইএ নিজেই সোনার ডিম পাড়া হাস কে মেরে ফেলার জন্যে দায়ী হবে । কারণ, সোনার ডিম টা পারছে কে? ঐ শ্রমিকেরা। অবস্যই একজন উদ্যোগতার কর্ম, পরিশ্রম এবং ঊদ্ভাবনি শক্তি দিয়ে, একটা ফ্যাক্টরি দাড়ায় যাতে, শ্রমিক দের কর্ম সংস্থান হয়। সেইটা কোন মতোই অসীকার করে যাবেনা।
কিন্তূ, বিজেএমইএ এর মালিকেরা যেইটা বুঝতে চান নে সেইটা হইলো, এই দেশে তাদের এন্টারপ্রাইজ এর মূল চালিকা শক্তি , শ্রমিক দের শস্তা শ্রম । উনাদের উদ্যোগ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু উনারা ব্যক্তি হিসেবে উদ্যোগ না নিলে অন্য কেও উদ্যোগ নিতো । কিন্তূ, ঐ সস্তা শ্রম প্রদান কারী শ্রমিক যদি না থাকে তো, ঐ ইন্ডাস্ট্রি টিকে না।
আমাদের নাটক, সিনেমাতে পোশাক মালিক দের সম্পর্কে একটা ধারনা মাঝে মাঝে প্রকাশ করা হয়।
সেইটা হলো , হঠাৎ টাকা পাওয়া অশিক্ষিত লোক জনেরাই গার্মেন্টস এর মালিক হয়।
এইটা একটা এবসলিউটলি ভ্রান্ত দেরনা। পোশাক শিল্পের ৯৯% মালিক উচ্চ শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত ফ্যামিলি থেকে উঠে আসছে । ঐ শ্রেণীর মধ্যে , একটা ব্যাপক শ্রেণী উন্নাসিকতা আছে। যেই, দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা রিকশাওয়ালা দের নিম্ন জাত এর মনে করি, ঘর এর বউ এর সোনার গয়না হারিয়ে যাওয়ার পর কাজ এর মেয়ের কপালে গরম শিক দিয়ে সেঁক দিয়া স্বীকারোক্তি আদায় করি-সেই শ্রেণী মানসিকতা নিয়ে একজন পোশাক মালিক তার শ্রমিক দের দেখে।
এই শিক্ষা সে তার ছোটকাল থেকে তার পরিবার থেকে পায় , সমাজ তার মনে প্রথিত করে এবং রাষ্ট্র তাকে সেই বিভাজন বেঁচে পয়সা কামানোর ক্ষেত্র তৈরী করা দেয়।
এর থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাত্র উপায় পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন দেয়া এবং রাষ্ট্র কে একটা সুন্দর জীবনের মিনিমাম চাহিদা হিসেবে করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে শ্রমিকের শ্রম এর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা দেয়া । এবং এমন একটা সীমা নির্ধারণ করা যাতে, পোশাক শিল্পে মালিকের যে সুপার নরমাল প্রফিট তার একটা বড় অংশ স্রমিকের হাতে পৌছায় –এর ফলে রিপল ইফেক্ট এ বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুন ভাবে বেনেফিটেড হবে এবং কারখানায় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। এবং পোশাক শিল্প ভয়াবহ একটা অন্যায় থেকে মুক্তি পাবে। বিজেএমই এর এর মুখ চেয়ে থাকলে, সেই কাজ কখনোই সম্পন্ন হবেনা।
সোনার ডিম পারা হাস টাকে আমাদের সবার বাঁচিয়ে রাখতে হবে, সুন্দর মত খাইয়ে পরিয়ে।
ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।