ব্র্যাক ও ব্র্যাক ব্যাংক: সৃষ্টির সীমানায় সীমাহীন
স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ ও জাতি গঠনে বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। ব্র্যাক ও ব্র্যাক ব্যাংক সেই মিছিলের একটি ক্ষুদ্র আলোকবর্তিকা।
ব্র্যাক (BRAC) বিশ্বব্যাপি বিস্তৃত একটি বাংলাদেশী সাহায্য সংস্থা। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্র্যাকের জন্ম। স্যার ফজলে হাসান আবেদ, কেসিএমজি (জন্ম:২৭ এপ্রিল, ১৯৩৬,হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে) বিশ্বের বৃহত্তম এই সুনামধন্য বেসরকারী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ, এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল হন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এশিয়ার জীবন্ত কিংবদন্তি স্যার ফজলে হাসান আবেদ বর্তমানে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
ব্র্যাক, পূর্বে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন এ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি নামে পরিচিত ছিল যা বর্তমানে বাংলাদেশ রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি (Bangladesh Rural Advancement Committee) সংক্ষেপে BRAC নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির ৮০% কর্মকাণ্ডই চলে নিজেদের অর্থায়নে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বর্তমানে পৃথিবীর আরও বেশ কয়েকটি দেশে ব্র্যাক সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছে।
• এশিয়া
o বাংলাদেশ
o আফগানিস্থান
o পাকিস্থান
o ফিলিপাইন
o শ্রীলংকা
• আফ্রিকা
o লাইবেরিয়া
o সিয়েরা লিওন
o দক্ষিণ সুদান
o তাঞ্জানিয়া
o উগান্ডা
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আমেরিকা
o হাইতি
ব্র্যাকের অন্যান্য কার্যক্রম
• উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম
• কারুশিল্পীদের পণ্য বিপণন কেন্দ্র 'আড়ং'
• অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি (সিএফপিআর-টিইউআর)
• ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
• ব্র্যাক ব্যাংক
বিশ্ব সেরা ব্র্যাক
সুইজারল্যান্ডের দ্য গ্লোবাল জার্নাল সাময়িকীর বিচারে বিশ্বের সেরা ১০০ এনজিও’র তালিকায় ব্র্যাক প্রথম স্থান লাভ করেছে। প্রভাব, উদ্ভাবন ও স্থায়িত্ব- এ তিন মানদণ্ডের ভিত্তিতে ৪৫০টি এনজিও’র মধ্যে ব্র্যাক তালিকার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে।
জার্নালটি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এ তালিকা তৈরি করলো। ২০১২ সালের তালিকায় ব্র্যাকের অবস্থান ছিল চতুর্থ। এবার অক্সফাম, কেয়ার ও সেভ দ্য চিলড্রেনকে পেছনে ফেলে ব্র্যাক শীর্ষস্থান লাভ করেছে। এবারের ঘোষণায় বলা হয়, ব্র্যাকের বিশাল ব্যাপ্তি ও প্রভাব আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়। প্রায় ১৩ কোটি জনগণ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
এ সংস্থা ১০ কোটি জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে তার ১ লাখ ২ হাজার কর্মী রয়েছে। ৫ লাখ ঋণগ্রহীতার কাছে ব্র্যাক প্রায় ১০০০ কোটি ডলার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে। এ সংস্থা বর্তমানে ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করছে। স্যার ফজলে হাসান আবেদ মুক্তিযুদ্ধের পর ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ উন্নয়ন সংস্থাটি বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১১টি দেশে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। দ্য গ্লোবাল জার্নাল-এর তালিকায় শীর্ষস্থান প্রাপ্তিতে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, এ স্বীকৃতি দরিদ্র জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আরও উদ্ভাবনী ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে ব্র্যাককে উৎসাহিত করবে। ব্র্যাক কর্মীদের কাজের নিষ্ঠা ও আত্মনিবেদনের ফলেই আজকের এ অবস্থানে উন্নীত হওয়া সম্ভব হয়েছে। (দৈনিক মানবজমিন,শনিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০১৩)
Click This Link
দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টারের মত আমিও ব্র্যাক পরিবারের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।
ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ
“The economic structure of a country depends on the banking system of that country.” অতএব দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা এমন রুপ লাভ করেছে যে একটি ছাড়া আরেকটির উন্নয়ন চিন্তাও করা যায় না।
আধুনিক ব্যাংকিং আজ যে বৃত্তে দাঁড়িয়ে সেখানে কোন বিশেষণই তার গুণকীর্তনে যথেষ্ট নয়। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন পুরাতন অর্ধশতেরও বেশি ব্যাংক। কারও কারও ইতিহাসও অনেক পুরাতন। কিন্তু ২০০১ সালে যাত্রা করে ব্র্যাক ব্যাংক আজ যে উচ্চতায় নিজেকে মেলে ধরেছে তা কেবল পুরাতন কেন সমসাময়িক কালের কেউ পারেনি। একটাই কারণ সেবায় নতুনত্ব।
মানব সেবায় নতুন ধারার উদ্ভাবন। তেমনই একটা উদ্ভাবন বিকাশ। মূলত ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে শাখাবিহীন ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনার জন্যই ব্র্যাক ব্যাংকের এ মহৎ উদ্যোগ।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে দেশের অর্থনৈতিক বাজারে রীতিমতো বিপ্লব ঘটায় ডাচ বাংলা ব্যাংক। অর্থ পরিবর্তনের নিয়ামক।
কিন্তু সেই অর্থই কখনও কখনও জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত নগদ অর্থ বহন রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। সময়ের চাহিদায় ব্যাংকগুলোর নব সংস্করণ হয়ে আসে ATM ও CDM সেবা। আজকাল কাঁচাবাজার বা পোষাকাদি কেনাকাটাতেও লোকে আর নগদ অর্থের ঝুঁকিতে যায় না। পকেটের একটা ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ডই যথেষ্ট।
স্বাধীনতাত্তোর দেশে ব্যাংকিং যাত্রা শূন্য থাকেনি। কিন্তু ২০০১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সেই যাত্রায় আনে নব দিগন্ত। এ কথা আগেই বলেছি। ডাচ-বাংলা ব্যাংক দেশে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে আরও ১০টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে।
কিন্তু সেবার আধুনিকতা ও প্রচারণায় গ্রাহক মনে ব্র্যাক ব্যাংকের bKash(বিকাশ) এর কাছে অন্যান্যরা কেমন যেন ম্রিয়মান।
টাকা পাঠানোর পাশাপাশি গ্রাহকরা ব্যালেন্স চেক, এটিএমে টাকা উত্তোলনসহ নানা রকম সুবিধা পাচ্ছেন বিকাশে। দেশে তিন মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক মোবাইল ফোনের বাজারের ৯২ শতাংশ দখল করে আছে। এই তিন কোম্পানির মোবাইল ব্যবহারকারীরা বিকাশ সেবা নিতে পারছেন অতি সহজেই। অতএব, ব্যবধানটা সহজেই অনুমেয়।
আসলে বিকাশের সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে সমাজের প্রান্তিক সীমানায়। গুলশান-বনানী-বারিধারাতে নয়। লেনদেনের অঙ্ক বেশি নয়, তবু এর সামাজিক প্রভাব যে কত বড় তা ফলভোগী মানুষের মুখের হাসি দেখলেই বোঝা যায়। যে অর্থ পরিবারের সুখশান্তির পরিপাঠক সেই অর্থের ওপর বিকাশ সমাজের গরিব মানুষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে। ব্র্যাক ও ব্র্যাক ব্যাংক যেমন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে নিজের পরিচিতি করে নিয়েছে।
বিকাশও তেমনি দেশ ছাড়িয়ে নিজেকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ লেনদেনের সীমানায় নিয়ে এসেছে।
বিদেশ থেকেও টাকা আসবে বিকাশে
মুঠোফোনের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানের প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ গ্রাহকদের জন্য একটি নতুন সেবা সংযোজন করেছে। বিকাশের গ্রাহকেরা এখন প্রবাসীদের পাঠানো টাকা সরাসরি তাঁদের মুঠোফোনের বিকাশ অ্যাকাউন্টেই পাবেন বলে প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
নতুন চালু হওয়া এই সেবার কারণে এখন ঘরে বসেই রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারবেন বিকাশের গ্রাহকেরা।
বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ব্র্যাক ব্যাংক মনোনীত এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে বিকাশে টাকা পাঠাতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
ব্র্যাক ব্যাংক মনোনীত এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো হলো—সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল রোস্তামানি ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ (এআরআইই), আল আহালিয়া মানি এক্সচেঞ্জ ব্যুরো ও ওরিয়েন্ট এক্সচেঞ্জ। শিগগিরই যুক্তরাজ্যের ব্র্যাক সাজান এক্সচেঞ্জও যুক্ত হতে যাচ্ছে এই সেবার আওতায় এবং অন্যান্য দেশে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দ্রুত এই সেবা ভোগ করতে পারবেন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রেরককে শুধু টাকা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে বিকাশকে নির্ধারণ করতে হবে, বাংলাদেশে প্রাপক টাকা পেয়ে যাবেন তাঁর মুঠোফোনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। প্রাপক নির্ধারিত সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে ক্যাশ-আউটসহ বিকাশ প্রদত্ত যেকোনো সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান বিকাশের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রসারের উদ্দেশ্যে মুঠোফোনের মাধ্যমে দ্রুত এবং সুবিধাজনক আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা।
বিকাশের সেবাগুলো বর্তমানে রবি, গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক নেটওয়ার্কে পাওয়া যাচ্ছে। ( প্রথম আলো অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ০৪-০১-২০১৩)
Click This Link
তথ্য সংগ্রহঃ-
১) উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ
২) দৈনিক মানবজমিন
৩) প্রথম আলো অনলাইন ডেস্ক
৪) বিবিসি নিউজ জার্নাল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।