আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলছবি .।। ( তৃতীয় অংশ)

জলছবি .। ( তৃতীয় অংশ) -ইমরান হোসেন ( আগের ২ অংশ ব্লগে আছে ) অর্কের পিছু পিছু তিন হাত ওয়ালা এক লোক আসছে । তার ছবি আঁকার ঘরে । লোকটার গায়ে অদ্ভুত একটা গন্ধ । মাতাল মাতাল লাগে গন্ধটা নাকে গেলে ।

- এই যে ...। দেখেন । প্রায় শেষ । চারদিকের বর্ডারে কিছু কাজ বাকি আছে । - অর্ক ।

মেয়েটার চোখে কি একটু রুক্ষ রুক্ষ লাগছে না ? - মোটেও না । আপনি আমাকে যেমন দেখিয়েছিলেন তেমনি একেছি । - হম । - তুমি জানো এই মেয়েটা কে ? - আপনি কে , এটাই তো আমি জানিনা । ওই মেয়ে কে চিনব কিভাবে? - ওহ ।

তাইতো । তিন হাতওয়ালা অদ্ভুত লোক ফিচ ফিচ করে কাঁদছে । চোখ দিয়ে লাল জেলির মতো কিছু পরছে । - জনাব । আপনি কাঁদলে আমার মেঝেতে লাল রঙ পড়বে ।

যদি একটু কান্না থামাতেন । উপকার হত । - অর্ক । তুমি বড়ই নিষ্ঠুর । আচ্ছা ।

আমি কয়েকদিন পরে আসব আবার । এখন যাই । আবার একটা গোঙ্গানির মতো আওয়াজ শুরু হোলও । হঠাৎ সব থেমে গেলো । লোকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

এই লোক কোত্থেকে আসে , কিভাবে আসে , কিছুই জানেনা অর্ক । একদিন গভীর রাতে অর্ক তার মোবাইল এ একটা কল পায় । অদ্ভুত নাম্বার । কোনও পরিচিত ডিজিট নয় । ডান দিকে ২ টা দাগ ।

মাঝখানে ৩ টা ক্রস বাম দিকে ২ টা দাগ আর শেষে ৭ টা ডট । কল রিসিভ করার পর প্রথমে অদ্ভুত কিছু শব্দ । আস্তে আস্তে শব্দগুলো পরিষ্কার হচ্ছে । - অর্ক বলছেন ? - জি? কে? -আমাকে কিছু ছবি এঁকে দেওয়া যাবে ? - ওই মিয়া , ফাইজলামি করেন ? এত রাতে আপনার মনে পরছে ছবির কথা ? - দয়া করে রাগ করবেন না । আমার খুবই দরকার ছবি গুলো ।

- কিসের ছবি ? - আমি আপনার সাথে দেখা করে কিছু ছবি দেখাবো । ওঁগুলো আপনি এঁকে দিবেন । - ও । আচ্ছা । টাকা কত দিবেন ? - জনাব আমি আপনাকে টাকা দিতে পারব না ।

আমাদের এখানে যে টাকা চলে সেটা আপনার দুনিয়ায় চলবে না । অর্ক ফোন কেটে দিলো । নিশ্চিত কেউ মজা করছে । সাথে সাথেই কল আসলো । অর্ক ফোন কেটে মোবাইল অফ করে ঘুমিয়ে গেলো ।

প্রায় ঘণ্টা খানেক পর একটা গোঙ্গানির মতো আওয়াজ শুরু হোলও । আওয়াজ টা বাড়ছে । অর্ক লাফ দিয়ে উঠলো । শব্দের উৎস খুজতে লাগলো । হঠাৎ তার সামনে এক তিন হাতওয়ালা লোক চলে আসলো ।

অর্ক ভয়ে দরজার দিকে দৌড় দিলো । লোকটা করুন কণ্ঠে ডাক দিলো । “জনাব অর্ক । দয়া করে দৌড় দিবেন না । “ অর্ক থামলো ।

‘ কি চান আপনি? - আমাকে কয়েকটা ছবি এঁকে দেওয়া লাগবে । - আপনার হাতের সমস্যা কি ? আপনার হাত তিন টা কেন ? - আমাদের সবার তিন টা হাত । কাজের কথা বলি । এই যে ছবি গুলো । -আপনি টাকা না দিলে আপনার ছবি কেন আঁকবো ? - আপনাকে এমন কিছু দেওয়া হবে যে কল্পনা করতে পারবেন না ।

- আমার টাকা দরকার । - টাকার চাইতেও মূল্যবান কিছু দেওয়া হবে । - দেখি , আপনার ছবি । লোকটা ৩ টা ছবি বের করলো । বিকট দর্শন ছবি এক একটা ।

সব চাইতে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে ছবির কালার । এমন কিছু কালার আছে যেগুলো পৃথিবীর মানুষ কখনো দেখেনি । অদ্ভুত সুন্দর কিছু কালার - আঁকতে কতদিন লাগবে ? - এক একটা গড়ে ৪ দিন । - খুব ভালো । আপনি চাইলে আরও দুই একদিন বেশি নিতে পারেন সেই শুরু অর্কের , এর পর থেকে প্রায় প্রতি মাসে এরকম কিছু ছবি আঁকার নির্দেশ পায় ।

বিনিময়ে তাকে দেওয়া হবে অপার্থিব একটা অনুভূতি । অদ্ভুত একরকম মুক্তি । ৭। অর্ক ছবি এঁকে যায় । দিন রাত ।

কখন সময় চলে যায় , কখন সকাল হয় , কখন সন্ধ্যা আসে । কিছুই টের পায় না মাঝে মাঝে । এক অদ্ভুত নেশায় ডুবে থাকে সারাদিন । শুধু দুপুর টা বুঝতে পারে যখন বিথি আসে । তবে বিথি আর ঘন ঘন আসেনা এখন ।

২ – ৩ দিন পর পর আসে । আরেক যন্ত্রণা যুক্ত হয়েছে এখন । যখন তখন ফোন করে । এখন মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখে অর্ক । অদ্ভুত তিন হাতওয়ালা লোক তাকে একটা নাম বলেছিল ।

দিউ হারমিস । অদ্ভুত নাম । যে মেয়েটার ছবি আঁকতে দিয়ে গেছে তার নাম জারনিল প্রমতু । অর্ক মাঝে মাঝে ভাবে , এই লোক কে ? সে কি সত্যিই এই লোক কে দেখে ? নাকি সবই কল্পনা । লোকটা কখনো দিনে আসেনি ।

গভীর রাতে । কিভাবে আসে তাও জানেনা । ছবি গুলো অর্কের খুবই ভালো লাগে । অস্বাভাবিক কালার । চমৎকার সুন্দর ।

------------- অর্কের বাবা জয়নাল সাহেব । নিশিকান্তপুর গ্রামের একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক । দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত তিনি সেখানে পড়াচ্ছেন । অর্কের সাথে যোগাযোগ নেই প্রায় ৩ বছর । সবাই তাকে পাগলাটে শিক্ষক বলেই চেনে ।

শীত , গরম সব সময়ই তিনি একটা জোব্বা গায়ে দিয়ে থাকেন । এজন্য ছাত্র ছাত্রীরা তাকে আড়ালে জোব্বা স্যার বলে ডাকে । মাথাতে চুলে নেই বললেই চলে । এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে কয়েকটা আছে সেগুলোও চরম বেখাপ্পা । অর্কের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই এই অবস্থা ।

নিজেই নিজের খাবার রান্না করেন । চোখে আর আগের মতো দেখেন না । একটা চশমা কিনেছিলেন , সেটা দিয়েও এখন আর কাজ হয় না । চোখের সমস্যা নাকি চশমার , জয়নাল সাহেবের মাথায় ঢুকছে না । জয়নাল সাহেব কিছুদিন কিছু নতুন গণিত নিয়ে কাজ করছেন ।

Quartic equation এর নতুন একটা সমাধান । Decartes–Euler solution , Ferrari”s solution এর চাইতে আলাদা । খুব সহজে সমাধান বের হয়ে যাবে । কয়েক ধাপে । তবে জয়নাল সাহেব এর চোখের কারনে এখন মাথা বেথাও বেড়েছে ।

তবে অংক করতে বসলে এসব আর মাথায় থাকেনা । নেশা নেশা লাগে । গণিত নেশা । অর্কের যেমন ছবি আকার নেশা । জয়নাল সাহেবের গণিতের নেশা ।

কুসুম নামের এক মেয়ে প্রতিদিন তাকে রান্না করে দিয়ে যায় । তবে কঠিন নিষেধ আছে যেন কোনও কাগজ , খাতা না ধরে । জয়নাল সাহেব কাগজ এর ধারাবাহিকতা মনে রাখার জন্য , সব কাগজের উপর সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে রাখেন । কোনও কাগজ হারিয়ে গেলেও সমস্যা নেই । যেদিন পান , সেদিনই সিরিয়াল এর মধ্যে রেখে দেন ।

কাগজ হচ্ছে কাটাকুটির সমাহার । কিন্তু এই কাটাকাটি গুলই খুব গুরুত্বপূর্ণ । কাটাকুটির মধ্যেই ভুল এর সংশোধন গুলো আছে । Quartic equation এর পর The Mendelbrot set নিয়ে পড়া লেখা করতে চান । complexity তাকে বেশ আকর্ষণ করে ।

জয়নাল সাহেব এর পড়া লেখা খুব বেশি না । উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত । সব সাবজেক্টে টেনে টুনে পাশ করলেও , গনিতে অসাধারণ নাম্বার পেলেন । তিনি ৩ ঘণ্টায় সব গুলো ম্যাথ প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেললেন । এবং নির্ভুল ।

যেটা মোটামুটি অসম্ভব । এর কিছুদিন পরই জয়নাল সাহেবের বাবা মারা যান । এলাকার স্কুল এর শিক্ষক দের আগ্রহে তিনি সেখানে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন । এবং কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ছাত্রদের খুব পছন্দের শিক্ষকে পরিনত হন । শেফালি আক্তার স্কুল এর প্রধান শিক্ষকের মেয়ে ।

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন গণিতের পাগল জয়নাল মাস্টারকে ধরে বাড়ি নিয়ে গেলেন । পাগলা মাষ্টার , তার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন , শেফালি আক্তারকে পাশ করাতে । শেফালি আক্তার সব বিষয়ে পাশ করলেন । কিন্তু গনিতে ১৮ পেলেন ।

কিন্তু ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেলো । প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন অত্যান্ত রেগে , পাগলা মাষ্টার এর সাথে শেফালি আক্তার এর বিয়ে দিয়ে দিলেন । অবশ্য শেফালি আক্তার মনে মনে খুশিই হলেন । কিন্তু জুব্বা মাষ্টারের তেমন কোনও ভাবান্তর হলও না । জয়নাল সাহেব বউ কে প্রথম দিনই ডেকে বললেন , “ অংক বই নিয়া আসো , সামনের বার পাশ না করলে বাড়ি থেকে বাহির কইরা দিবো “ ....................চলবে .........।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।