এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com
নোমান বিন আরমান : কাক নাকি কাকের মাংস খায় না। এ সত্য কি না, প্রত্য ইলম আমার নেই। তবে এক মিডিয়া যে অন্য মিডিয়ার নাম (বিজ্ঞাপন ছাড়া) করে না, এ ব্যাপারে কিঞ্চিৎ হলেও ধারণা আছে।
প্রায়ই একটা বিষয় চোখে আটকে, নিজের মিডিয়ায় (প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক) অন্য মিডিয়ার নাম পারতপে নিতে চায় না। http://www.numanbinarmansyl.blogspot.com সূত্রের দরকার হলেও, ‘খবরে প্রকাশ’ বা ‘পত্রিকায় প্রকাশ’ বলে একটা ‘সূত্র’ দিয়ে ওই বিষয়ে সংবাদ, সম্পাদকীয়, মন্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করেন। ‘সূত্র’কে এইভাবে কাফন পরিয়ে রাখার কাণ্ডটি বেশি পরিমাণে ঘটে সমমানের মিডিয়ার েেত্রই। এ কেনো? এটা যৌক্তিক না, অযৌক্তি_ সে তর্কে আমি যাব না।
ব্যতিক্রম, মিডিয়াওয়াচ।
এর জন্মটাই (বোধকরি) অন্য মিডিয়া নিয়ে আলোচনার জন্যই। এটি আমার দৃষ্টিতে শুধু ভালো এমনটি বলবো না, দরকারিও। কারণ সমালোচনা না হলে নিজেকে শোধরানো যায় না। এই আলোচনা, সমালোচনায় প্রথম আলো একটি অমোঘ বিষয় হয়ে গেছে বললে _ উত্তোক্তি হবে কি না, বলতে পারছি না। তবে খুব যে প্রথম আলো প্রসঙ্গ থাকছে, এতো (প্রায়) প্রতিসংখ্যায়ই জানান দিচ্ছে।
পত্রিকাটির ছোটবড় সব প্রসঙ্গ নিয়েই _ রস, ঊষ্ণ ও তীব্র লেখা থাকছে। এতে করে মিডিয়াওয়াচকে প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন কৌশল ভেবে কেউ ভুল করলে, অবাক হবার (সম্ভবত) কিছু থাকবে না। এ কারণে অনেকবার ইচ্ছে থাকার পরও পত্রিকাটি নিয়ে বলবার অনেক কিছু বলা হয়নি। বলা হয়নি, পাছে গড্ডলিকায় নাম লেখালাম বলে বদনাম হয়, এই ভয়ে। কিন্তু এইবার সেই ভয়টার বশে থাকা গেল না।
দেশের প্রধানতম ও ‘শ্রেষ্ঠ’ পত্রিকার অহম ও গমর দু’টোই প্রথম আলোর আছে। এই কারণেই গোষ্ঠিসুদ্ধ মিডিয়াকে ‘সাংবাদিকতা’ শেখানোর একটা অঘোষিত দায়িত্ব সে তার কাধে নিয়ে রেখেছে। এই দায়িত্ব সে যখন-তখন আদায় করতে যায়, না চাইলেও পাওয়া যায়’র মতন ‘সুসাংবাদিকতা’ ফলায়। এই আচার (নাকি অত্যাচার) এখন তার প্রতিশ্র“ত।
কিন্তু প্রথম আলোর এই ‘সুসাংবাদিকতা’ এখন প্রশ্নবাণে জর্জরিত ও একই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ।
বড় রকমের প্রশ্নবাণে পড়েছে সাংসদদের সংসদের আলোচনায়। যদিও এটিকে সংবাদপত্রের প্রতি ‘হুমকি’ বলে পত্রিকাটিকে এই অতর্কিত প্রশ্নের হাত থেকে উদ্ধার করতে চাইছেন অনেকে। তাদের উদ্দেশ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই সামনের ক’টি কথা বলব। এই অতর্কিত প্রশ্ন যে খুব অস্থির করেছে প্রথম আলোকে তা সম্পাদক মতিউর রহমানের কাতরানি ও কান্নাকাটি দেখলেই বুঝা যায়। কেন এই কাতরানি, কোন দুর্বলতায়_ প্রশ্নটি প্রথম আলোর মহান সম্পাদকের জন্য করা থাকল।
সাংসদদের ওই আলোচনার পর থেকে প্রথম আলো সম্পাদকের লেখা ও বক্তব্যের বিষয় এখন একটিই, তিনি বা তার পত্রিকা কোনোভাবেই ‘তদারকি’ (ত্রি উদ্দিন) সরকারের সহায়ক ছিলেন না। তাদের মতায় বসাতে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন, তিনি ও তার পত্রিকা। এই বিষয়টি সকলকে হজম করানোই এখন প্রথম আলো সম্পাদকের মহান ব্রত হয়ে দেখা দিয়েছে। এবং তিনি সেটি নিষ্ঠার সঙ্গে করছেনও। আমি তার আশপাশের কেউ নই।
তবে ধারণা করি, নিজেকে ‘পবিত্র’ দাবি করার এই ব্রত কোনো সুযোগেই তিনি মুখছাড়া করেন না। উদাহরণের জন্য সর্বশেষ (আমার জানা মতে) ২১ অক্টোবর প্রথম আলোর ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তার বক্তব্য ও ৪ নভেম্বর ২০১০ তারিখে পত্রিকাটির যুগপূর্তি সংখ্যায় তার মন্তব্য প্রতিবেদনের কথা বলা যায়। বক্তব্য ও মন্তব্য প্রতিবেদন দু’টোতেই তদারকি সরকারের সহায়কের গোনাহ থেকে নিজেকে পবিত্র প্রমাণের প্রসঙ্গটিই বড় করে এনেছেন মতিউর রহমান। নিজের বেগুনাহ দাবির পে প্রমাণ (!) হিসেবে এনেছেন মোটা দাগে তিনচারটি বিষয়। ১. ওইসময় সব সেনা সদরে, ক্যাম্পে, ক্যান্টমেন্টে তার পত্রিকা ‘বেআইনি’ ছিল।
এসব জায়গায় প্রথম আলো প্রবেশ করতে দেওয়া হত না। ২. তার পত্রিকার ১৪জন সাংবাদিককে ক্যাম্পে নিয়ে ‘ভয়ভীতি’ প্রদর্শন করা হয়েছিল। ৩. ‘জঙ্গিগোষ্ঠিকে’ তার পত্রিকার বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া হয়েছিল। একই সাথে পত্রিকাটি বন্ধে করার চেষ্টাও হয়েছিল। এইসব বলে মতিউর রহমান প্রমাণ (!) করাতে চাইছেন ‘এক-এগারো’ সৃষ্টিতে তাদের কোন ইন্ধন বা ভূমিকা ছিল না।
তদারকি সরকারের কারিগরি থেকে প্রথম আলো বা তার সম্পাদক পবিত্র কি না, সে প্রসঙ্গ আমার এই আলোচনার বিষয় নয়। আমি যেটি বলার জন্য ‘ভয়ের’ বশ থেকে বেরিয়েছি, ফিরে যাচ্ছি সেই প্রসঙ্গে।
তদারকি সরকারের সময় দেশে কি নরকসময় ছিল, সেটির উল্লেখ করে এখানে সময় নষ্ট করব না। এতটুকু বলা দরকার যে, মানুষ কথা বলার জন্য পানির পিপাসার চাইতেও বেশি তৃষ্ণার্থ ছিল তখন। তৃষ্ণা ছিল বেইনসাফি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলার।
কিন্তু এতটুকু সুযোগ তখন ছিল না। জরুরি আইনে সব কিছু ছিল বন্দি। এই বন্দি সময়ে প্রথম আলোর একটি ‘দুঃখজনক’ ঘটনা জীবনের মায়া ত্যাগ করিয়েছিল। জরুরি আইনকে উপো করে রাস্তায় নেমেছিল হাজারও মানুষ। বিােভ হয়েছিল, মিছিল হয়েছিল Ñ তদারক সরকারের বিরুদ্ধে, প্রথম আলোর বিরুদ্ধে।
জরুরি সরকারে বিরুদ্ধে মাঠে নামতে যে দুয়েকটি ‘ইস্যু’ মানুষকে সাহসি করেছে এই ঘটনা তার অন্যতম। রাজনৈতিক শক্তি যে এই ‘সাহসকে’ ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল তাও কোন গোপন বিষয় নয়। গতিকে তদারক সরকারের নটক নড়তে সময় লাগেনি। প্রথম আলোর চে’ তখন তাদেরই কাঁপুনি ছিলো বেশি। তাই এই ঘটনার একটি সমাপ্তির তাগাদা ছিলো প্রথম আলো ও তদারক সরকার, দুপরই।
এই তাগাদা প্রথম আলোর ছিলো প্রতিষ্ঠান আর তদারক সরকারে গদি রার জন্য। এতে করে ওইসময় প্রথম আলোর বোধোদয় না হলে পত্রিকার প্রকাশনা যে নিষিদ্ধ হত, এটা অনেকটা পরিষ্কার ছিল। যেটাকে এখন মতিউর রহমান পত্রিকা বন্ধের চেষ্টার কথা বলে সুযোগ নিতে চাচ্ছেন। আমরা দেখলাম ওই টান টান মুহূর্তে মলিন মুখের মতিউর রহমানকে Ñ হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন বায়তুল মোকাররমের (মরহুম) খতিব উবায়দুল হকের সামনে। তার এমন দাঁড়ানোই পত্রিকাটির ‘সুসাংবাদিকতার’ ওই যাত্রার ত্রাণকর্তা হয়।
নাহয় সুঁচালো পিন এখন যেমন রসময় হয়েছে, প্রথম আলোকে অন্য আলোয় প্রকাশ হতে হত। অথচ এই বিষয়টিকেই মহান সম্পাদক এখন বলছেন, তার পত্রিকার বিরুদ্ধে জঙ্গিগোষ্ঠিকে উসকে দেয়া হয়েছিল। এই চোখের কাছের বিষয়টি এভাবেই বদলে দিতে চাইছেন মতিউর রহমান। একেই বুঝি প্রথম আলো, ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ বলে।
খতিবের কাছে মাপ্রার্থনার ওই ছবিটি এখনো নিশ্চয় অনেকে হাতের কাছেই আছে।
নেই সম্ভবত মতিউর রহমানের কাছে। সেটি তাকে আরেক বার দেখানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক বলে কথা, সেই ছবিটিকেও নিশ্চয় ‘বদলে দাও’র ‘সুসাংবাদিকতায়’ ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। তাই এত কিছুতে না যেয়ে, তার কাছে ছোট্ট একটি প্রশ্ন; আলপিনের সেই কার্টুনের কারণে ‘জঙ্গিদের’ কাছেই তাহলে মাফ চেয়েছিল প্রথম আলো!
এমনটি যদি হয়ে থাকে_ বলব, বিষয়টি প্রথম আলোর জন্য সাংঘাতিক রকমের দুঃসংবাদ। কারণ, পুরোবিশ্বে যদি একজন জঙ্গিবিরুধী ব্যক্তির নাম চাওয়া হয়, সেটির উত্তর যেমন, বুশ হবে।
তেমনি এদেশে জঙ্গিদের অবিষ্কারক কারও নাম যদি চাওয়া হয়, তখন একক উত্তর হবে প্রথম আলো। এই দাবি আমার নয়, খোদ প্রথম আলোই সেটি দাবি করছে। এবং এই দাবির পে তারা বিদেশি পত্রিকার সনদও দাখিল করেছে। তো এমন মহান কৃতিত্বের দাবিদারকেই যদি শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের কাছে মা চে’তে হয়, তখন তো বিষয়টি_ দুঃসংবাদই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।