আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা শহরে ফুটপাতের শিশুঃ



ঢাকা শহরে ফুটপাতের শিশু ঢাকা শহরের রাস্তা, অলি-গলি, ফুটপাতে বস্তিতে শিশুর জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন। নবজাত এই হেলাফেলার শিশুরা প্রাকৃতিক নিয়মে বেঁচে থেকে ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে। সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর জীবন যাপনের কোনো সুযোগ এদের সামনে নেই। সম্পূর্ণ অবহেলিত অবস্থায় সমাজের অবজ্ঞা দুর্ব্যবহারের ভেতর দিয়ে এদের জীবন শুরু। সুস্থভাবে যদি তাদের বাঁচার সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে চুরি, ছিনতাই মাস্তানি করে নিজের খাবার যোগাড় করে নেবে তারা এটাই স্বাভাবিক।

এরা বেড়ে চলে সমাজ ও পৃথিবীর সম্পর্কে গভীর অবিশ্বাস আর ঘৃণার মনোভাব নিয়ে। ঢাকার রাস্তার ফুটপাতে মলিন রুগণ্ শিশু বা কিশোরদের দেখে সাধারণত আমাদের মনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। চায়ের দোকানে ছোট ছেলেটি দোকানদারের হুকুমমতো বিরাট জ্বলন্ত চুলা, বড় বালতি ভরতি করে পানি টানে সর্বশক্তি দিয়ে, ধোলাই খালের ওয়ার্কসপে ছোট বালক লোহা কাটতে বড় হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে অথবা হাত পেতে পয়সার জন্য দাঁড়িয়ে চার বছরের এক শিশু। । এ সবই তো প্রতিদিনের দৃশ্য।

আমরা যদি দেশের অন্যান্য শহর এলাকাতে যাই, প্রায় একই ছবি দেখতে পাবো। বাংলাদেশের শতকরা ৬৫ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের শিশু ও কিশোররা কোনো স্তর থেকেই নিরাপত্তা ও সহানুভূতি তো পায়ই না, উল্টো ঘৃণা অবিশ্বাস অত্যাচারে এদের জর্জরিত হতে হয়। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় এক রিপোর্টে পড়েছিঃ-বাংলাদেশের শতকরা ৬৫ ভাগ শিশু দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের ১ বছরের মধ্যেই শতকরা ১০ ভাগ শিশু মারা যায়। প্রধানত পেটের অসুখে শতকরা ৫০ ভাগ, ফুসফুসের অসুখে শতকরা ৩০ ভাগ, বাকি ২০ ভাগ অন্যান্য কারণে।

এইসব রোগের শতকরা ৯০ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শতকরা ৭০ ভাগ শিশুর ওজন কম, বৃদ্ধির হার কম এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এই ৭০ ভাগের মধ্যে ২৫ ভাগ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ প্রথার হাত থেকে শিশুদেরও রেহাই দেয়া হয়নি। দেশের বিভিন্ন শহরে সামান্য বেতনে অর্ধবেলা খেতে দিয়ে শিশুদের ক্রীতদাসের মতো বিভিন্ন জায়গায় কাজ করানো হয়।

তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়। আবার দেশের অনেক কারখানায় কাজ শেখানোর নামে বিনা পয়সায় কাজ করানো হয়। বাংলাদেশে বিড়ি তৈরির কারখানায় হাজার হাজার শিশু কাজ করে। বেশিরভাগ শিশু শ্রমিক যক্ষ্মা ও অপুষ্টি রোগে আক্রান্ত। সমাজ বিরোধীদের একটি অংশ শিশুদের অপহরণ করে বিক্রি করে দেয় অথবা তাদের ভিক্ষা করতে বাধ্য করে।

শিশুরা যে ভিক্ষা সংগ্রহ করে সেটা তারা আত্মসাৎ করে। নাবালিকাদের ফুসলিয়ে পতিতা বৃত্তির কাজে লাগায় ও তাদের উপার্জিত টাকা আত্মসাৎ করে। অবস্থাটা ভয়াবহ কোনো সন্দেহ নেই। দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর ভবিষ্যৎ কী? এমন অনেক ছোট ছেলেমেয়ের দেখা পাওয়া যায় ফুটপাতে, রেলস্টেশনে। ।

যারা পিতা-মাতা কাউকেই চেনে না। বেশ কিছু অল্পবয়সী ছেলে ও মেয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে, আর ফিরে যায়নি। দোকান বা কারখানায় চায়ের দোকানে যেসব শিশু ও কিশোর কাজ করছে, তারা মনে করে যত কষ্ট হোক একটা কিছু করে নিজেদের ভাত যোগাড় করতে হবে। সমাজবিরোধী কাজকর্মেও অনেকে জড়িয়ে পড়েছে। বালক ও কিশোরদের একটি বড় অংশই অপরাধ জগতের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।

এদের কারো কারো সৃজনশীল মন এখনো মরে যায়নি। সুযোগ পেলেই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.