বাবার ওপর বিথীর খুব রাগ। আলাভোলা মানুষ। অল্প বেতনের কেরানীর চাকরিটা নিয়েই মেতে আছেন। পেট চলে না টাকার অভাবে। তারপরও সততার পিছু ছাড়তে রাজী না একবিন্দু।
সৎ থাকুন সমস্যা নেই। চাকরির পর বাড়তি কিছু করেও সেটা পোষানো যায়। সেটাও করবেন না। দুনিয়ার অলস। তবে সেটা শুধু বাসার কাজে।
ছেলে মেয়ের লেখাপড়ারও কোন খোঁজ নেন না। কিন্তু স্বপ্ন দেখেন সবাই অনেক বড়ো হবে !
বিথীরা ৪ ভাই ২ বোন। বিথী সবার ছোট। বাবা মা দু'জনই ফর্সা। বাকী ৫ ভাই বোন বাবা মা'র গায়ের রঙ পেয়েছে।
বিথী শ্যামলা। ভাইয়েরা ক্ষ্যাপায় মা কালী বলে। ভীষণ ফর্সা ভাইদের কাছে শ্যামলার কোন দাম নেই। এ নিয়ে সবার ওপর বিথীর খুব রাগ। ও তো নিজে যেচে শ্যামলা হয়নি।
ও পেয়েছে ওর দাদার গায়ের রঙ। চেহারাও পেয়েছে দাদার।
সবাই বসে একত্রে টিভি দেখছিলো। এমন সময় বাবা এলেন বাসায়। রাত প্রায় আটটা।
পেপারটা ওদের সামনে রেখে ভেতরে গেলেন। সব ভাই বোন পেপার নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগিয়ে দেয়। পেপার সকালে বের হলেও ওদের ভাগ্যে জোটে রাতে। বাবার অফিসের সবাই মিলে পেপার রাখেন। সবার পড়া শেষ হলে বাড়ী আসার সময় বিথীর বাবা সে পেপার নিয়ে আসেন।
ওরা সেটা পড়তে পায়।
কাড়াকাড়ির মধ্যে চোখ পড়লো পেপারের প্রথম পাতায় বেশ বড়ো একটা বিজ্ঞাপন। ফেয়ার এন্ড লাভলী'র। ওটা ছোট ভাইয়ার চোখে পড়তেই বিথীকে ক্ষেপাতে শুরু করে- এবার আমাদের মা কালী বিশ্ব সুন্দরী হয়ে যাবে। ওকে এক বস্তা ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনে দিলেই কেল্লা ফতে।
ছোট ভাইয়ার এই নিষ্ঠুরতায় খুব কষ্ট পেলো বিথী। আস্তে করে বের হয়ে সে নিজের রুমে চলে যায়। ওখানে ও আর আপু থাকে। আপু মা'র সাথে রান্না ঘরে ব্যস্ত বলে একান্তে পেলো ঘরটা। মাথা গুঁজে বসে রইলো।
রাগেও কাঁদলো না সে।
হঠাৎ একটা হাতের ছোঁয়া পেলো মাথায়। চোখ তুলে দেখলো বাবা দাঁড়িয়ে। বললেন, কেমন আছিস মা ? বাবা তার খবর নিচ্ছেন ! অবাক হয়ে গেলো বিথী। সামলে নিয়ে বললো, ভালো।
কিছু সময় নীরবতায় গেলো বাবা মেয়ের। বিথী জানতে চাইলো, কিছু বলবেন বাবা ? তিনি বললেন, না তেমন কিছুনা। এটা রাখ তুই। বলেই হাতে একটা প্যাকেট গুঁজে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে চলে গেলেন।
বিথী কাগজের প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা ফেয়ার এন্ড লাভলীর কৌটা ! ওর আলাভোলা বাবার নিজে কেনা প্রথম উপহার !
চোখের পানি আটকাতে না পেরে হু হু করে কেঁদে ফেললো বিথী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।