আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহিব একদা থাইল্যান্ড গিয়েছিল - ২

আল বিদা

ঈদের দিন ঘর আর বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যা কাটিয়ে দিলাম ঘুম। ঘুমের মধ্যেই স্বপ্ন দেখলাম কিসব কুকর্ম আমি করব তার একটা চেকলিস্ট। ঘুম থেকে উঠে ভোর ৬টায় চলে গেলাম এয়ারপোর্ট। এই আমার প্রথম একলা দেশের বাইরে যাওয়া। চেক ইন, ইমিগ্রেষন শেষ করে বসে আছি প্লেনে উঠার জন্য।

একলা যাচ্ছি বলে অনেকেই টিপ্পনি দিচ্ছিল। অনেকেই একা যেতে মানা করছিল। মানুষ ভর্তি এয়ারক্রাফটে উঠে দেখলাম অনেকেই বন্ধু বা কলিগ নিয়ে এক টীম করে যাচ্ছে। অনেকেই ছোট ছেলেমেয়েসহ ফ্যামিলি নিয়ে যাচ্ছে। থাইল্যান্ড সম্বন্ধে আমার যে ধারনা ছিল তাতে ফ্যামিলি নিয়েও যে যাওয়া যায় তা আমি ভাবতেই পারতাম না।

দেখলাম আমার মত ব্যাকুব যে একলা যাচ্ছে এমন আর একটাও নাই। নিজেকে অবশ্য ব্যাকুব না ভেবে একস্ট্রা অরডিনারি ভাবছিলাম। আমি জানি আমি কেন যাচ্ছি। ২ ঘন্টা ১৫ মিনিটে পৌছে গেলাম ব্যাংককের সুবর্নভূমি এয়ারপোর্ট। পথে পার হলাম সবুজ সুন্দর পাহাড়ী মিয়ানমার।

আকাশে মেঘের খেলা যা আমি কারুকে বলে বুঝাতে পারব না। কি সুন্দর আহা কি সুন্দর। এই দৃশ্য আমি একা দেখলাম! ২ ঘন্টায় ব্যাংকক চলে গেলেও ব্যাংককের ইমিগ্রেষন পার হতে আরও ১.৫ ঘন্টা লেগে গেল। একসাথে মনে হয় সারাদিনের সব ফ্লাইট চলে এসেছে। সাদা চামড়া আর লাল পাসপোর্ট দেখে ভাবলাম সবাই ব্রিটিশ।

পরে আমার ভূল ভাঙল। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানী, চীন সব দেশ থেকেই ট্যুরিষ্ট এসেছে ব্যাংককে। আর এয়ার এশিয়ার তো মনে হয় দিনে ১০টা ফ্লাইট শুধু ব্যাংকক ছেড়েই যায়। লাগেজ তুলে নিয়ে চলে গেলাম বেসমেন্টে যেখান থেকে বিভিন্ন দিকের বাস/ট্রেন যায়। পাতায়াগামী একটা বাসের টিকেট কেটে অপেক্ষা করলাম।

এই সময়েই পরিচয় হল কোন সুন্দরী মেয়ে না, পাতায়া গামী এক কেনিয় ভদ্রলোকের সাথে। বেলা ৩টায় রওয়ানা হলাম পাতায়ার দিকে। আমার মনে হল ভলভো এই এসি বাসের ড্রাইভার স্টিয়ারিং সোজা করে বাসে স্টার্ট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কারন পাতায়াগামী পথে কোন ব্রেক, হর্ন, ডান-বাম কিছুই করতে হল না শুধু একবার টোল দেয়া ছাড়া। রাস্তাঘাট যে কি বানিয়ে রেখেছে রয়েল থাইল্যান্ড তা না দেখলে বিশ্বাসই হত না।

আরও ২ ঘন্টায় চলে গেলাম পাতায়া। বাসস্ট্যান্ডে নেমে এক পিকআপ টেম্পুতে করে বীচ রোড চলে গেলাম। কেনীয় ভদ্রলোক যে হোটেলে উঠল আমিও আর না খুজে সেই হোটেলেই উঠে গেলাম। সুই (রোড) ৭ এর এসটিনি হোটেল। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।

একটু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দুটি বড় রোডের সাথে কানেকটিং রোড এইটা। ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তার দুই দিকে দোকান/হোটেল। বেশীরভাগ দোকান বার নয়ত হোটেল। বারে স্বল্প বসনা মেয়েরা ডাকাডাকি করছে।

অন্যকিছু না তার সাথে বসে ড্রিংক করার জন্য। সাথে পুলও খেলতে পারে। এই ডাক অগ্রাহ্য করা প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। এছাড়া গো গো পার্টি, ডি-জে তো চলছেই। সারারাত ধরে হই হুল্লোড় চলছে।

বীচেও অনেক মানুষ। পুরোটাই শুধুমাত্র যেন ট্যুরিষ্টদের জন্য। এমনকি ট্যুরিষ্ট রাস্তা পার হতে চাইলে পুলিশ এগিয়ে আসে, গাড়ী থেমে যায়। সবখানেই নারীদের হাতছানি। বিশ্বের সব বড় বড় রেষ্টুরেন্ট আর ব্যান্ডের ব্রাঞ্চ এখানে।

আর সবচেয়ে ভাল যা দেখলাম তা হল প্রতিটা মোড়ে ফিক্সড রেটে ব্যাংকের মানি এক্সচেজ্ঞ বুথ। অনেক রাত পর্যন্ত রাস্তায় হাটাহাটি করলাম। এতই করলাম যে বারের লোকজন পর্যন্ত চিনে ফেলল, তারা আর ডাকল না আমাকে। সকালে উঠে আবার সেই হাটাহাটি। এবার ক্যামেরা নিলাম।

তবে ছবি তোলার কোন আগ্রহই পেলাম না। পাতায়া সিটি লেখা এক জায়গায় সব লোকজন ছুটছে। আমি বুঝলাম একটা কোন রহস্য আছে সেখানে। কিন্তু আমার আর যেতে ইচ্ছা করল না। লোকজন বীচে হাটছে, বসে রোদ পোহাচ্ছে, সাইক্লিং করছে, বোটে ঘুরছে, প‌্যারাসুট রাইডে উড়ছে।

কত আনন্দর না ব্যবস্থা আছে এখানে। যে যা করতে চায়। দৃশ্য আর মজা দুটোই উপভোগ করার ব্যবস্থা থাকছে। কিন্তু আমি ১০ টায় চেক আউট করে চলে গেলাম পাতায়া বাসস্ট্যান্ডে। ব্যাংকক চলে আসব।

এই বাসস্ট্যান্ডেই পেলাম চরম এক শিক্ষা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.