আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুজিব হত্যা: ইন্দিরার সন্দেহে ছিল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেলের সাম্প্রতিক এক বইয়ে উঠে এসেছে এ তথ্য।  
‘অ্যাভয়েডিং আর্মাগেডন: আমেরিকা, ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান টু দি ব্রিংক অ্যান্ড ব্যাক’ নামের বইটিতে তিনি লিখেছেন, “তিনি এক রকম নিশ্চিত ছিলেন, মুজিব হত্যার পেছনে তারাই (যুক্তরাষ্ট্র) ছিল; আর ১৯৭১ এর প্রতিশোধ নিতে এরপর তাকে (ইন্দিরা) হত্যা করতেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল সিআইএ। ”
ব্রুস রিডেলের এ বইটি প্রকাশ করেছে হার্পর কলিনস।  
সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দোস্তির ‘কোনো প্রয়োজন’ ইন্দিরার ছিল না। তবে তিনি মনে করতেন, রিচার্ড নিক্সন তার ‘শত্রুই’ ছিলেন।


‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক’ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে এক ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে’ নিহত হওয়ার পর সিআইয়ের ‘ষড়যন্ত্র’ নিয়ে সন্দেহ আরা পোক্ত হয় ইন্দিরার।   
তিনি মনে করতেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকার জন্যই ‘ষড়যন্ত্রের নীল নকশা করেছিল’ সিআইএ।  
১৯৭৪ সালের অক্টোবরে তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ভারতে আসেন একাত্তরের ‘ভুল-ত্রুটি’ মেনে নিয়ে ‘সম্পর্ক মেরামতের’ জন্য।    
রিডেল দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখেছেন, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনায় ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। কিন্তু একাত্তরের ঘটনা মনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পাকিস্তানের সঙ্গ ছাড়তে পারেনি।

  
দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের এই চেষ্টা শুরু হয় প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের আমলে। তবে তার উত্তরসূরী আইজেনহাওয়ার থেকে ওবামা- সবাই শেষ পর্যন্ত আবিস্কার করেছেন, কাজটি মোটেও সহজ নয়। আর এর পেছন মূল কারণ হলো ভারত ও পাকিস্তানের বিপরীতমুখী আগ্রহ ও লক্ষ্য।   
জওহরলাল নেহেরুর ভারত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তখনকার দুই পরাশক্তিশাসিত বিশ্বে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল। একইসঙ্গে স্বাধীন হলেও তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র আয়তন ও সামর্থ্যের পাকিস্তানের সেই আত্মবিশ্বাস ছিল না।

 
এরই মধ্যে পাকিস্তানের তখনকার শাসকরা সেনাবাহিনীর জেনারেলদের মাধ্যমে উৎখাত হলেন এবং নতুন শাসকরা প্রতিবেশী ভারতের ওপর ভরসা রাখার বদলে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বৃহত্তর কোনো শক্তির সহায়তা নিতে উদ্যোগী হলেন।   আর এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ‘পছন্দনীয়’ দেশ আর কোনটি হতে পারে?
দূর কোনো দেশ থেকে কোনো পরাশক্তির এমন ‘দাদাগিরির’ সম্ভাবনা খুব স্বাভাবিকভাবেই ভাল চোখে দেখেনি ভারত।   
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়ে গিয়েছিল সেই সময়ই, ব্রুস রিডেলের ভাষায় যার ধরন ছিল ‘আন্তরিক, তবে ঘনিষ্ঠ নয়’।  
রিডেল লিখেছেন, নেহেরু ও ইন্দিরার ভারত ‘কূটনৈতিক পথে’ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘স্বাগত’ জানালেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার পথে কখনো এগোয়নি।     
অন্যদিকে পাকিস্তানি জেনারেলরা অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘ব্যক্তিগত অতিথির’ মতোও আপ্যায়িত হয়েছেন।

অস্ত্র ও সহায়তার জন্য তাদের আবেদনগুলো সব সময় অগ্রাধিকার পেয়েছে।    
এই পথ পরিক্রমায় ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশ্বের সমর্থন আদায়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন, প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওভাল অফিস যেন তার সামনে দেখা দিল ‘ইটের দেয়াল’ হয়ে।   
আমেরিকানরা যে তখন ইন্দিরা গান্ধীকে ঠিকঠাক বুঝতে পারেনি, ইতিহাসে তা স্পষ্ট। এরপরই ভারতের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন ইন্দিরা।    
মজার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে সিআইএ যে বিভিন্ন সময়ে ‘ভুয়া’ প্রতিবেদন তৈরি করতে ‘সিদ্ধহস্ত’ তা আবারো উঠে এসেছে রিডেলের এই বইয়ে।

 
সেই সময়ে সিআইএর পরিচালকের দায়িত্বে থাকা রিচার্ড হেমস একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন, যাতে বলা হয়- ইন্দিরা গান্ধীর পরিকল্পনা কেবল ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নিয়ে নয়, যুদ্ধে পুরো পাকিস্তানকে ধ্বংসের ছক এঁকেছেন তিনি।
সেই প্রতিবেদনের প্রশংসায় নিক্সন সে সময় বলেছিলেন, সিআইএর কাছ থেকে হাতে গোণা যে কটি ‘সময়োপযোগী’ গোয়েন্দা প্রতিবেদন তিনি পেয়েছেন, তার মধ্যে সেটি একটি।  
তবে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে হেমস স্বীকার করতে বাধ্য হন যে ওই প্রতিবেদন ‘সঠিক ছিল না; কাজেই বিষয়টি ভুলে যাওয়াই সঙ্গত’।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.