আমাদের দেশ কোন পথে হাটছে? আসলে এ দেশের কোন ভবিষ্যত আছে কিনা? এ বিষয়ে কি সকলেই দিন দিন আরো বেশী সন্দিহান হয়ে পড়ছে না? প্রতিনিয়ত বিচার বিভাগ নিয়ে কথা উঠছে। আসলে বিচার বিভাগ আর তার ভাবমূর্তি? শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা যাবে কি? নাকি ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় যোগ হতে বিচার বিভাগও তার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে। আমরা শুনেছি ইংল্যান্ডের মত একটি দেশে সংবিধান দুই ধরনের, একটি হল লিখিত। এবং অপরটি হল অলিখিত সংবিধান। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত অথবা প্রচলিত ও জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া বিষয়গুলো সেখানে সংবিধান স্বীকৃত আইন হিসেবে গন্য হয়ে যায়।
এসবের স্বীকৃতির জন্য দুই তৃতিয়াংশ সংসদ সদস্যের প্রয়োজন নেই। তবে নতুন নিয়ম বা আইন প্রচলন করার বিষয়টি ভিন্ন। এটি করা হয়েছে এজন্য যাতে সংবিধান কখনো জনস্বার্থের বিরোধী হয়ে পশ্চাদপদ না হয়। মানুষের অগ্রগতীর পরিবর্তে সংবিধান যাতে কখনো পেছনের দিকে টেনে না ধরে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় সেটাই করা হয়েছে।
রীতিমত ঠান্ডা মাথায় বাংলাদেশকে অকার্যকর করার জন্যই কি সেটা করা হয়েছে?এসব কথা উঠতো না। কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হলেও এসব কথা উঠছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গনতন্ত্র পুন: প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে গণতন্ত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যা তারাই করেছিল যারা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে দাবী করে। সে গণতন্ত্রকে কবর থেকে বের করে এনেছিল জিয়াউর রহমান।
সংবিধানের সে সংশোধনীর ফলেই সামরিক একনায়ক স্বৈরতন্ত্র থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। কয়েকটি সফল নির্বাচনের পর বাংলাদেশের গনতন্ত্র যখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই কোর্টের এজলাস থেকে বেরিয়ে এল পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত বিষয়ে যখন কারো আপত্তি ছিলনা। পক্ষ-বিপক্ষ সবাই যখন সেটাকে মেনে নিয়েছিল তখন কোর্টের এমন সিদ্ধান্ত বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হল। সে বিচারের রায়ে প্রচলিত হয়ে যাওয়া জনস্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত জনপ্রিয় বিষয়কে কোন মতামত বা এমিকাস কিউরি নিয়োগ করা ছাড়া সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে, যেটা অলিখিত সংবিধানের স্বীকৃতি অনুযাযী ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হওয়ার কথা।
কোর্টের এ রায়ের ফলে কি হল, বাংলাদেশ এখন স্ববিরোধী আচরণে লিপ্ত। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এক একজন একেকভাবে কথা বলছে। খবরে প্রকাশ সংবিধান এখন প্রেসে মুদ্রিত হচ্ছে পরিবর্তনের জন্য। পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংসদে না গিয়ে যাচ্ছে প্রেসে। কি ভয়াবাহ আতকে উঠার মত খবর! সংবিধানকে সরকার এবং একটি সাধারণ কমিটি ইচ্ছামত কেটে কুটে মুদ্রিত করে দিলে যদি তা সংবিধান হিসেবে গন্য হয়ে যায় তবে মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের সাথে এর কি পার্থক্য থাকতে পারে? এটা কি কোন কথা হল? তাহলে কি মনে চাইলে সবাই এভাবে প্রেসেই সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলবে জনমত উপেক্ষা করে? কারণ কোর্টের রায় অনুযায়ী যদি এটি হয় তাহলে রায় তো তখনো বজায় থাকবে।
সারা জীবনই বজায় থাকবে যতক্ষন না অন্য কোন বিচারপতি এসে এই রায়কে অবৈধ হিসেবে গন্য না করেন। হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ। অন্য দিকে পঞ্চম সংশোধনী যদি অবৈধ হয় তবে কোর্টের রায় অনুযায়ী এখন চতুর্থ সংশোধনী প্রতিষ্ঠিত। যত দ্রুত সম্ভব দেশকে বাকশালে পরিণত না করলে তা কি আদালতের রায়কে উপেক্ষা করা হবেনা? আর যদি সংসদ ছাড়া অন্যকোনভাবে সংশোধনী আনা হয় তাহলে সেটি কি সংবিধান সম্মত হবে? আদালতেরতো সংবিধান পরিবর্তনের কোন এখতিয়ার নেই। যদি তাই থাকতো তাহলে পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ হবে কি কারণে? সেটিতো সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিই বৈধতা দিয়েছিল।
আর তাই বৈধ অবৈধ এর ফাফড়ে পড়ে সংবিধান এখন হাসপাতালে। তাকে ইচ্ছেমত সার্জারি করে একটি রুপ দেয়া হবে। সঙ্গত কারণেই সে রূপটি হবে একটি বিকলাংগ প্রতিকৃতির। সংবিধানকি সামনে যাবে না পেছনে যাবে এ ধন্দে বাংলাদেশ এখন স্থবির। অনেকদিন আগে বিবিসির একটি টকশোতে দেখেছিলাম পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাকশাল প্রসংঙ্গে বলেছিলেন যে সেটি গণতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক সরকার সেটি করেছিল।
আমার প্রশ্ন হল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে কোন সরকার যদি অগণতান্ত্রিক অন্যায় কোন কাজ করে তাহলে সেটি কি বৈধ হবে? যদি তাই হয় তাহলে বিজেপি নির্বাচিত হয়ে সংখ্যগরিষ্ঠতার জোরে যদি সাংবিধানিকভাবে ভারতের সব মুসলমানের নাগরিকত্ত্ব বাতিল করে দেয় তাহলে সেটি কোন কোন যু্ক্তিতে অন্যায় হবে? নি:সন্দহে ভাল মন্দের একটি সিমারেখা আছে এবং সেটি সবাইকেই মেনে চলতে হবে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেই কোন সরকার গণতন্ত্রকে দুমড়ানো মুচড়ানোর অধিকার লাভ করতে পারেনা। যদি তাই হয়, তাহলে আওয়ামীলীগ সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসনকে প্রধান উপদেস্টা হিসেবে না মেনে সংবিধানের মারাত্মক লংঘন করেছে এবং এ অভিযোগে তাদের বিচার হতে হবে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোড়ে কেউ বাকশাকল কায়েম করলে সেটিকে কোন মতে বৈধ বলে মেনে নেয়া যায় কি? বাংলাদেশকে আধুনিক কায়দায় বারবার “মাইট ইজ রাইট” শক্তি মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে বলেই আমার কাছে মনে হয়। যদি তাই না হয় তাহলে এ ধরনের প্রসঙ্গ আসবে কেন? মাজদার হোসেন মামলার এই রায়টি কি যথেষ্ঠ হতোনা যে তিনি ন্যায় বিচার পাননি, অতএব তাকে তার ন্যায় বিচার ফিরিয়ে দেয়া হলো।
সে প্রসঙ্গের সূত্র ধরে যে বিষয় টেনে আনা হল সে বিষয়টি নিয়ে এখন বাংলাদেশ ধুকছে। অবস্থা এরকম যে হয় সংবিধান স্ববিরোধী হবে, আর না হয় আদালত স্ববিরোধী হবে। আর তাই এরকম জলজ্যান্ত সংকট তৈরী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারা এর মূল হোতা আসলে তারা কি চায়? উত্তর আমার মত আমজনতার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে যে ভয়ানকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে সে বিষয় স্পষ্ট।
ভয়ানক ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত বাংলাদেশের একটি দলীয় সম্প্রদায় বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে সে কথাও বলতে চান কেউ কেউ। সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া অনেকগুলো বিচারপতিদের মধ্যে দুজনকে নিয়ে যেনতেন বিতর্ক নয়, তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবাহ অভিযোগ। একজন হচ্ছেন হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী যেটি আদালতে মিমাংসাধীন ছিল। তাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পূর্বমূহুর্তে রাষ্ট্রপক্ষ স্বপ্রনোদিত হয়ে সে মামলা প্রত্যাহার করেছে। আর অপরজন খোদ প্রধান বিচারপতির কক্ষের দরজায় লাথি মেরেছেন।
এরা হচ্ছে দলীয় সেই সমস্ত ক্যাডার, যাদের কাছে স্বার্থ, দল এবং ক্ষমতার প্রশ্নে কোন নিয়ম-নীতি, আইন ও নৈতিকতার কোন বালাই নেই। সময়, সুযোগ পেলে এরা আইনের পোষাকে বেআইনি এবং অযথা বিতর্ক সৃষ্টির কোন দেরী করবেনা যে এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এই দুজনকে একজন প্রধান বিচারপতি শপথ পড়াননি। তবে মাননীয় নতুন প্রধান বিচারপতি এসেই সেই অসম্পূর্ণ মহত কাজটি দ্রুত সমাপ্ত করতে দেরী করেননি।
ইতিহাস সামনের দিকে তার ইতর ব্যাক্তিদের দ্বারাই পরিচালিত হবে বলেই মনে হয়।
তানাহলে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির ভাষায় রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রায় সকল পর্যায়ই বাজিকরদের পদচারণায় মুখরিত হবে কেন? আইনমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, যারা বেআইনি ভাষায় কথা বলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত তাদের সরকারের সৌজন্যে সরকারী প্রেসে যে সংবিধান মুদ্রিত হচ্ছে তা জনস্বার্থ বিটুইন আদালত অথবা উভয়ের কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করছে তাকি আদালত বলতে পারবে? যদি আদালত তা বলতে ব্যার্থ হয় তবে বাংলাদেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে একমাত্র আল্লাহই বাচাতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।