আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিনা ভাড়ার যাত্রী

লেখক/কবি

ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের মনে বাড়ী ফেরার তাড়া। অন্যদিকে বাস সহ বিভিন্ন পরিবহন কর্মীদের নজর এখন বিনা ভাড়ার যাত্রীদের ওপর। তাদের লক্ষ্য পাছে ভাড়া না দিয়ে কেউ সটকে পরে। কেবল ফাঁকিবাজ কিছু লোকই যে বিনা ভাড়ায় ঘুরেবেড়ায় তা কিন্তু নয়। পৃথিবির সবচেয়ে চতুর বিনা ভাড়ার যাত্রী আসলে কিছু জীবানু।

এরা মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী সব অসুখের জন্ম দেয়। অকালে জীবন কেড়ে নেবার চেষ্টা করে। এদের চিনে নেয়া কিন্তু অত সহজ হয়নি। জীবানু ঘটিত বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে প্রথম প্রথম সঙ্গ নিরোধ বা কোয়ারেনটাইন নামের পদ্ধতি প্রচলন করেন চিকিৎসা গবেষকেরা। এতে ভাল ফল পাওয়া গেলেও অজানা এক কারণে পুরো সফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

সঙ্গ নিরোধের পরও কিছু কিছু রোগ ছড়িয়ে পরতে থাকে। কিভাবে রোগটির জীবানু ছড়িয়ে পরছে তাই নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা নাকানি চুকানির কোন এক পর্যায়ে এমন বিনা ভাড়ার যাত্রীদের সন্ধান পান। এরপরই কেবল গৌন পোষকের মাধ্যমে রোগ ব্যধি ছড়িয়ে পরার কৌশল সমন্ধে জানা যায়। রক্ষা হয় কোটি কোটি মানুষের প্রাণ। ডাক্তাররা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পারলেন পৃথিবীর সবচেয়ে খাটি বিনা ভাড়ার যাত্রী হচ্ছে রোগ সৃষ্টির কারণ কিছু কিছু জীবানু, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া।

ম্যালেরিয়ার জীবানু এমন একটি জীবানু তা আজকাল কম বেশি সবারই জানা। এর নির্দিষ্টি বাহনটি হচ্ছে স্ত্রী অ্যানোফিলিন্স মশা। জীবনুটি একজনের শরীর থেকে অন্য কারো শরীরে সরাসরি যাতায়াত করতে পারে না। চুরি করে জীবানুটি স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার শরীরে সাওয়ার হয়। এর অণ্যতম কারণ হলো অ্যানোফিলিন্স মশার স্ত্রী প্রজাতাটিই কেবল মানুষের রক্ত পান করে।

বংশ বিস্তারের জন্য দরকারি প্রটিন সংগ্রহে রক্ত তার খুবই দরকার। ম্যালেরিয়া রোগীর শরীরে রক্তের জন্য চুমুক দেবার সময় ম্যারেরিয়ার কিছু জীবানুও নিজের অজান্তেই শুষে নেয় সে। এরপর আবার কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ালে জীবানুটি প্রবেশ করার সুযোগ পায়। মশার শরীরে জীবানুটির জীবন চক্রের একটি অংশ সম্পন্ন হয়। তবে মূল ব্যাপার কিন্তু একই।

এ কারণে কোয়ারেনটাইন তথা সংঙ্গ নিরোধের পরও রোগটিতে মানুষের আক্রন্ত হবার সম্ভাবনা কিন্তু সমানই থেকে যায়। এমন করে এক একটা প্রাণঘাতী রোগের জীবানু এক একটা বাহকের ডানায় ভর করে সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় আমাদের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের চিনে নেয়া কিন্তু খুব সহজ কাজ ছিলনা। পিত জ্বর, এডিস মশার কয়েকটি প্রজাতীর মাধ্যমে, টাইফাস উকুনের সাহায্যে, মরণ ঘাতি বুবনিক প্লেগ রেট ফ্লির ঘাড়ে ভর করে মানুষ থেকে মানুষে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগটি এত দ্রুত ছড়িয়ে পরলে কি হবে, এ ধরনের রোগীর সাথে দেখা করা ও তার সাথে চুটিয়ে আড্ডা মারা কিন্তু একদম নিরাপদ, যদিনা ঘটনা ক্রমে সেখানে বিনা ভাড়ায় যাত্রী বোঝাই কোন ফ্লি উপস্থিত থাকে।

শুধু আড্ডা কেন এমন ভয় না থাকলে রোগীর সাথে নিশ্চিন্তে বসে কয়েক দান তাস খেলে আসুন। কোন ভয় নেই। বিষয়টি জানার পর রোগ নিয়ন্ত্রনে আরো বেশি ফলপ্রসু পদক্ষেপ নেয়া অনেক সহজ হলো। ঠিক জীবানুর সংম্পর্সে আনতে পারে এধরনের সম্ভাব্য জায়গা গুলো চিহ্নীত করে পুরাতন সঙ্গ নিরোধের ধারণার মতই পদ্ধতিটির প্রয়োগ হতে থাকে। তাই সঙ্গ নিরোধের ক্ষেত্রে এর পর থেকে বাহন গৌন পোষকের অথাৎ কীট পতঙ্গের ওপর দৃষ্টি ফেরানো হলো।

এভাবে ম্যালেরিয়া, প্লেগ, পিতজ্বর, টাইফয়েড এর মত আরো আধ ডজন ভয়ানক রোগকে ঠেলে জঙ্গলের গভীরে পাঠিয়ে দেয়া সম্ভব হলো। তাই ঈদে বাড়ি যাবার পর কিন্তু সবার এধরনের জায়গা থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকা বুদ্ধি মানের কাজ হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল থেকেও সাবধান। যা বলছিলাম এভাবে টাইফাস এর মত জীবানুকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হলো। কৌশলটি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য কর্মী ও ডাক্তাররা প্লেগ, ম্যালেরিয়ার মত রোগের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে।

এখন এসব রোগ তাদের হাতের মুঠোয়। তারপরও বলতে হয় রোগ কারণ এসব জীবানুরা খুবই শক্ত প্রকৃতির। এক সময় বিজ্ঞান দেখতে পেল এদের নিয়ন্ত্রন করতে বাহকের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়াই যথেষ্ট নয়। যদিও এতে অল্প বিস্তর কাজ হচ্ছিল তবুও পুরোমাত্রায় নিয়ন্ত্রনে এর চেয়েও জোড়ালো পদক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দিল। এ পর্যায়ে চিকিৎসক ও গবেষকেরা সরাসরি শত্রুর শিবিরে হানা দেবার কথা ভাবলেন।

তারা খুব ভাল করেই জানতেন মানুষ সহ আর সব প্রানের মতই রোগ জীবানুকেও খাবার খেতে হয়। অথবা দেহ গঠনকারী উপাদান সংগ্রহে অন্য জীবের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ পর্যায়ে তাদের খাবার সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা হলো। জীবানুর সংখ্যা বাড়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হল দুধ। তাই জীবানু কর্ষনে দুধ ব্যবহার করা হয়।

বিশেষ করে টাইফয়েড ও যক্ষার জীবনুর জন্য। ডাক্তাররা এসময় গরুকে পরীক্ষা নিরিক্ষা ও এদের কাজে ব্যবহার করা হয় এমন পাত্র গুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বল্লেন। এভাবে জীবানুর বংশ বাড়া নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়। এমন পরিস্থিতিতে তারা আবার পানিয়- জল পরিশোধনের কথা বলতে লাগলেন। তখন থেকেই অতি উৎসাহিরা পান করার সার্বজনিন এ তরলটিতে ওষুধের স্বাদ আসার আগ পর্যন্ত নানা রকম পরিশোধক রসায়ন বাছবিচারহীন মেশাতে শুরু করে আমাদের সর্বসাধারনকে এক প্রকার চিন্তার সাগরে ভাসিয়ে দিলেন।

এসব কাজ কারবার আর সবার পছন্দ না হলেও জীবনাবুদের বিরুদ্ধে নেয়া আমাদের পদক্ষেপকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিল। বেশির ভাগ পানিবাহিত রোগই একজনের পর একজনকে সংক্রমিত করে ভয়াবহ মহামারি সৃষ্টি করে। অপরিশোধিত পানির রয়েছে এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা। স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে পানি ও শৌচাগার ব্যবহারের কারণে আজকাল আর আমাদের মাঝে টাইফয়েড, আমাশায়, ডায়রিয়া মত রোগগুলো ভয়াবহ আকার নিতে পারছেনা। তারপরও কিন্তু জীবনুদের বংশ বিস্তার করার মতো আরো অনেক গুলো জায়গা চোখে চোখে রাখার দরকার রয়েছে।

দৃষ্টত মাছ, মাংশ, বাসি পচা ফল, মেসাই, পায়েস সারা দেশে ডায়রিয়া ছড়িয়ে দেবার মত যথেষ্ট পরিমানের জীবানু তৈরি করতে পারে। সাধারণ গৃহস্থালীর মাছি এসব অতিমাত্রায় উৎপাদিত জীবানু সৈনিকদের যান্ত্রিক বছরের হয়ে অতি বিশ্বস্তের মতো রোগ ছড়াবার কাজে নেমে পরতে পারে। জীবানুদের ইচ্ছা অনুযায়ী এরা তাদের ছয় পায়ের প্রতিটিতে লাখ লাখ জীবানু তুলে নিয়ে আমাদের পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর আর খাবার টেবিলের চারপাশে অতি স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে থাকে। তাই একটি মাছি চাটি মেরে মেরে ফেল্লে শুধু একটি মাছিই মারা হয়না অসংখ্য জীবানুকে ও লক্ষ ভ্রষ্ট করা হয়। এসব জানতে পারার পর ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবানুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা আর তাদের খাবার সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টির মতো কৌশলগুলো প্রয়োগ করে খুব সফল ভাবে জীবানুদের আক্রমন প্রতিহত করছিল।

কিন্তু তার পরও দেখা গেল আরো বড় ধরনের আবিস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। প্রশ্নটা শুরু হয় আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে। কিভাবে তাকে আরো ভালো ভাবে ট্রেনিং দেয়া যায়। এক সময় এমন অদ্ভুত ভাবনা পেয়ে বসে বিজ্ঞানিদের। জীবানুগুলো যখন কোন না কোন ভাবে বাতাস, পানি খাবার অথবা গৌন পোষকের সাহায্যে বাহিত হয়ে আমাদের শরীর নামের প্রাসাদের ত্বক নামের দেয়ালটি টপকে, নজর এড়িয়ে কোন না কোন ভাবে এর ভেতর ঢুকে যেতে সমর্থ হয়।

তখনই কিন্তু শরীর নামের প্রাসাদে সাধারণ একটি ঘন্টা ধ্বনি বেজে ওঠে। শরীর সেটা সাথে সাথে শুনতে পায়। আমদের নিজস্ব সেনাবাহিনী তাৎক্ষনাত এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শ্বেত রক্ত কনিকা, তার সাথে বিভিন্ন এটিন্টবডি, এন্টিটক্সিন যুদ্ধে যোগ দেয়। এদের প্রধান সেনার ভূমিকা নেয় আতিকায় শ্বেত রক্ত কনিকা গুলো।

জয় বা পরাজয় নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত যুদ্ধটা চলতে থাকে। এরপর সামর্থ অনুযায়ী কোন এক পক্ষের জয় হয়। শরীরের জয় হলে সে শত্রু মুক্ত হয়। পরাজিত হলে ধুকে ধুকে মৃত্যু অনিবার্য। এই রূপ রেখা ধরে এগিয়ে বিজ্ঞান খুব নিবিড় ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষন করেছে।

সোয়াইন ফু্লর মতো প্যানডেমিকা পর্যায়ের প্রকট মহামারিতে গুটি কতোক লোক মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে কিছু লোক বেশ কিছু দিন রোগে ভুগে পর আপনা আপনি সেরে উঠছে। কি অবাক ব্যাপার তাইনা? কিন্তু কেন এমন হয় বলতে পারেন কি? এরপর আরো একটা আশ্চার্য বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষন জরুরী। কোন কোন রোগের প্রকোপে পুরো একটি জাতী নিবংশ হযে যাবার ভয় থাকে। তবে এদের মধ্যেও কিন্তু কিছু লোক একসময় পুরোপুরি সেরে ওঠে।

হাম এমনই একটি রোগ। এখন আর আমরা এ রোগটিকে তেমন একটা গুরুত্বের সাথে নেই না। শুনলে অবাক হবেন ১৮৭১ সালের দিকে এই একই রোগ হামের মাহামারিতে প্রশান্ত মহাসাগরিয় দ্বিপরাষ্ট্র ফিজিতে এক বছরে সত্তর হাজারেরো বেশি লোক অকালে প্রাণ হারান। এক্সিমো, দক্ষিণ মহাসাগরিয় দ্বিপ গুলোর ইন্ডিয়ানেরা সাদা মান্যুষদের রোগের প্রকোপে প্রায় বিলুপ্ত হবার ভয়ে ছিল অনেক দিন। টাইফয়েড, যক্ষা, ডিফথেরিয়া এমনকি হাম, সাম্‌পস পর্যন্ত তাদের অনেক বেশি ভুগিয়েছে।

সম্ভবত গুটি বসন্ত একাই কলহ, বিদ্রোহ কিংবা যে কোন যুদ্ধের চাইতেও বেশি সংখ্যায় উত্তর আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের নিপাত করতে ভূমিকা রেখেছে। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার হেরফেরের কারণেই এমনটি হয় বলে ধারণা করা যায়। জীবানু সংক্রমিত ঔষুধের প্রতি অধিক প্রতিরোধী হাবার কারণেই সাদামানুষেরা এসব রোগ থেকে বহুলাংশে রক্ষা পেয়েছে। অন্যদিকে বিপদে পড়ছে ইন্ডিয়ান, এক্সিমোর মত জাতী গোষ্ঠী গুলো। বিষয়টি কিন্তু এর বিপরীত ভাবেও সত্য।

উত্তর আফ্রিকার আরববা গত শতাব্দির প্রায় পুরোটা জুড়ে আমাশয়ের মত রোগে ভূগেছে। শেষ পর্যন্ত তারা এই ত্রুটির বিরুদ্ধে দৈহিক ভাবে স্থায়ী প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এখন আমাশয় তাদের কাছে একদম ভয়ের কিছু নয়। এ রোগে সাদা মানুষেরা আক্রান্ত হলে এখনো ভয়ষ্কর কিছু ঘটা অস্বাভাবিক নয়। বাঙ্গালিদের ক্ষেত্রেও এটি হয়তো সত্য।

নিগ্রো তথা কালো মানুষেরা সাদাদের চাইতে অনেক বেশি দিন ম্যালেরিয়া অঞ্চলে বসাবস করেছে। ফলে এ রোগের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও সাদাদের চেয়ে বেশি। এই প্রতিরোধ অর্জিত হয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু চিকিৎসা গবেষকেরা তার চেয়েও ভিন্ন ধারার একটি বিষয় পর্যবেক্ষন করেছেন। কেউ যদি একবার ডিফথেরিয়া অথবা জলবসন্তে আক্রান্ত হয়, সেই একই রোগে দ্বিতীয় বার সে আর সচারাচর আক্রান্ত হয় না।

আগে কোন এক সময় যদি আপনার নামে মাত্র গুটি বসন্ত হয়ে থাকে, তাহলে মারাত্মক গুটি বসনেত্ম আক্রানত্ম রোগীর সাথে একই বাড়িতে, একই ছাদের নিচে আপনি অতি নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন। আপনার ত্বকে মরণ কামড় বসবার মত ধার কিন্তু তখন আর এর থাকবেনা। আবার সেই একই প্রশ্ন, কেন জানেন কি? কেন আপনি এই প্রতিরোধ ক্ষমতার আধিকারি হলেন? কিভাবে? এমন প্রশ্ন জাগার আরো অনেক পরে চিকিৎসা গবেষকেরা এর উত্তর জানতে পারলেন। আর তাতে করেই সেই জীবানু বাহিনিকে আরোক দফা মোক্ষম ভাবে জব্দ করা সম্ভব হলো। বলতে গেলে কি ঠিক কোন জীবানুই কিন্তু সরাসরি আমাদের হত্যা করেনা; আসল ঘাতক হচ্ছে জীবানু নিঃশ্রিত বিশেষ ধরনের বিশ বা টক্সিন।

এসব পদার্থ শরীরকে বিপদ সংকেত দেয়। তাতেই সতর্ক হয়ে শরীর অতি দ্রুত তার নিজ বাহিনী তথা শ্বেত কনিকা, এন্টিবডি এবং এন্টিটক্সিনকে যুদ্ধে পাঠায় বহিরাগত এসব জীবানুদের হনন করতে, তাদের নিশ্রিত বিষ নিষ্ক্রিয় করতে। লড়তে লড়তে শরীর একসময় ঠিক ঠিক শিখে নেয় কিভাবে লড়তে হবে, জিততে হবে। টাইফয়েড জ্বরের কথাই ধরুন, একবার শেখা কৌশলটা শরীর পরে কখনই ভুলে যায় না। এরপর অন্য কোন সময় টাইফয়েডের জীবানু শরীরে ঢোকার পর, প্রায় সাথে সাথেই শরীর তার সেনা সদস্যদের যুদ্ধে নামিয়ে দেয়।

আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে গলা ধাক্কা দিয়ে জীবানুদের দেহরাজ্যের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে এর জন্য দেহযন্ত্রকে প্রতিটি রোগের জন্য কৌশলটি আলাদা আলাদ করে আয়ত্বে আনতে হয়। বেশির ভাগ অসুখে শরীর সঠিক ভাবে তা প্রতিরোধের উপর শিখে নেয়। কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে শরীর কখনই কৌশলটা আর রপ্ত করতে পারেনা। এর চাক্ষুশ সাক্ষি সাধারণ সর্দিজ্বর।

তবে সোয়াইন ফু্লও এমন কিছু একটা কিনা তা নিশ্চিত জানা যায়নি। এরপরই চিকিৎসা গবেষকেরা ভাবলেন তাহলে ভুয়া ঘন্টা বাজিয়ে শরীরকে একটু বোকা বানিয়ে যদি যুদ্ধে লাড়ার কৌশলটা শিখিয়ে পারিয়ে নেয়া যায় তাতেই বা দোষের কি? এবার কিন্তু এ কৌশলটা খুবই কাজে দিল। ফলে এটিকে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হতে থাকলো। ভয় পেয়ে যুদ্বে নেমে যাওয়ার কারণেই সেটা সম্ভব হলো। শত্রু পক্ষের কেউ যুদ্ধের ময়দানে থাকবেনা ঠিকই কিন্তু শুত্র"র ভয় ঠিকই থাকবে।

কখনো দূর হবেনা। এভাবে সে একা একা লড়ে শিখে যাবে শত্রু জয়ের কৌশল। এই হচ্ছে ভেক্সিন তৈরীর গল্প। ঈদের ছুটিতে আপন জনের টানে যে যার বাড়ি যাচ্ছেন। এসময় শুধু ফ্লু বা সর্দি জ্বরের আতষ্ক কেন ! আরো অনেক অসুখই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

একটু সতর্ক থাকলে সেগুলো আমাদের নাগাল পাবেনা। এ ধরনের সতর্কতার ক্ষেত্রে এই ফিচারটি অল্প বিস্তর কাজে আসতে পারে। তার পরও শীত আছছে বলে ফ্লু আর সর্দি জ্বর নিয়ে বিশেষ সতর্ক থাকা জরুরী। পরিচিত জন ছাড়া আগবাড়িয়ে ঈদে কোলা কুলিতে কিন্তু ভয় আছো। কে জানে কোথায় কে নিজের অজান্তে বিনা ভাড়ার এসব যাত্রীদের বয়ে বেড়াচ্ছেন।

কখন সুযোগ বুঝে সে কিনা আবার আপনার ঘাড়ে চেপে বসে। বিষেশ সতর্ক থাকা দরকার এ জন্য যে বিনা ভাড়ার এ সব যাত্রী ভাড়া দেয়া তো দূরের কথা, সাওয়ার হবার পর থেকে খুব দ্রত সে আপনার পকেট সাবার করতে ব্যস্ত হয়ে পরবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.