জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতায় আমি এখন মার্স্টাসের ছাত্র। কিন্তূ আগামী ডিসেম্বরে এই বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে আমার ছাত্রত্ব কেড়ে নেবে। না, না, শংকিত হবার কোন কারণ নাই। আমি এমন কোন গুরুতর অপরাধ করি নাই যে বিশ্ববিদ্যালয় আমার ছাত্রত্ব বাতিল করবে কিংবা কোন আদেশের বলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হবে। েআগামী ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আমার সেসনের (২০০৮-০৯) স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে।
সেই সাথে শেষ হয়ে যাবে আমার পৌনে ছয় বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। শেষ হয়ে যাবে পিঠে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোর লাইসেন্সের মেয়াদ। ফেলে যেতে হবে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে। তুলে নিতে হবে ক্যাম্পাসের যেকোন প্রান্তে দাড়িয়ে “আমার” বলার অধিকার। ছেড়ে যেতে হবে শহীদ সালাম বরকত হল কে।
কি শিখেছি এই সাড়ে পাঁচ বছরে ? কি পেয়েছি ? হ্যা, পেয়েছি। পেয়েছি রুনু ভাই, শরীফ ভাই এর মতো কিছু বড় ভাই, পেয়েছি ভাস্কর, শরীফ, হিমেলের মতো হাতেগোনা কয়েকজন বন্ধু, আর পেয়েছি কিছু আদরের ছোট ভাই। জীবনের যেকোন সময়ে, যেকোন প্রান্তে এদের কে ভুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। মন বারবার ফিরে আসতে চাইবে শহীদ সালাম বরকত হলের ২২৯ এ, যেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনগুলি পার করছি। যেখানে বসে এই লেখাটি লিখছি।
মনে পড়বে নাজির ভাই এর দোকানের কথা, হলের টেবিল টেনিস বোর্ডের কথা। খুব মিস করবো জমজমাট আড্ডাগুলোকে, মিস করবো খেয়ালের বসে করে বসা পাগলামীগুলোকে। মিস করবো ডেইরী, প্রান্তিক, ট্রান্সপোর্ট, মেহের চত্বর, ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডা, মুক্তমঞ্চের নাটক। খুব কষ্ট হবে চলার পথে “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়” লেখা সবুজ বাসগুলোর হাতছানি উপেক্ষা করা। মনে পড়বে পুরাতন কলা ভবনের কথা, যেখানে আমার বিভাগে প্রতিনিয়ত আমার আসা যাওয়া।
দুখু মিয়ার “আনটিল কেয়ামত ফিক্সড মেনু” সিঙ্গারা, সমুচা, চা ও একটা বেনসন দিয়ে সকা্লের নাস্তা করার ইচ্ছা বোধহয় জাগবে বহুবার। আর যখন তখন কোন কারণ ছাড়াই রিক্সা নিয়ে ক্যাম্পাসে চক্বর দেওয়ার কথা কি সহজে ভোলা যাবে ? খুব মনে পড়ছে ক্যাম্পাসের প্রথম দিনের কথা, হলের প্রথম রাতের কথা। আর ভাবছি, শেষ দিনটা কেমন য়াবে ? জানি না কেমন যাবে, তবে এটুকু জানি যে তার আর বেশী দেরী নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।