একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব যখন নিরসনের অযোগ্য পর্যায়ে চলে গেছে বলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে কিছু না কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন প্রায় শত্রুতার রূপ ধারণ করেছে। শিক্ষকেরা উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন প্রায় তিন মাস ধরে। তাঁরা এমনকি উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি নন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চস্তরের বিদ্যাপীঠের এমন অবস্থা কি কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায়?
শিক্ষকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তি আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা, পঠন-পাঠনের সার্বিক পরিবেশের জন্য এটা দলীয় লেজুড়ভিত্তিক তথাকথিত ছাত্ররাজনীতির থেকেও বেশি ক্ষতিকর রূপ ধারণ করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, সেখানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের আচরণের ফলে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি শিক্ষকদের ‘আন্দোলনের’ ফলে। উপাচার্যের পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষকদের দলাদলি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই কমবেশি আছে। কিন্তু উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তিন মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় অচল করে রাখার দৃষ্টান্ত সম্ভবত জাহাঙ্গীরনগরেই প্রথম দেখা যাচ্ছে।
সেখানে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল গত জুন থেকে। কয়েকজন শিক্ষক এ ব্যাপারে আদালতে রিট আবেদন করার পর আদালত প্রশাসনিক ভবনের অবরোধ সরিয়ে নেওয়া আদেশ দিলে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’-এর ব্যানারে। ঈদের ছুটির পর তারা আবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে এবং আরও কর্মসূচির উদ্যোগ নিচ্ছে।
কিন্তু এসবের ফল কী? এর মাশুল দিতে হচ্ছে কাদের? নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের এবং তাঁদের অভিভাবকদের, যাঁরা কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। এমন পরিবেশে কি তাঁদের পড়াশোনায় মনোযোগ থাকতে পারে? অনিশ্চয়তা ও হতাশা কি তাঁদের মনকে গ্রাস করছে না?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার করা জরুরি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় অপারগ হলে স্বয়ং আচার্যের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।