যতটুকু আছে সব উজার করে দেব...............
সেই ১৯৯০ সালের কথা। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের বাসা ঝালকাঠী ডিসি অফিসের অপজিটে। আমি, আমার ইমিডিয়েট বড়ভাই ( আমার চেয়ে ১১ মাসের বড় ) আর আমার দুই বন্ধু। এই চারজনে মিলে বাসায় বসে ভি.সি.আর দেখছি, রাত ১২ টায় দেখা শেষ হয়।
আমার মাথায় তাখন একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। সবাইকে বলি, চল আমরা ডাব চুরি করে খাই। আমার বন্ধুরা বললো, তোদের গাছ থেকে ? আমি বললাম, না, কোর্টের গাছ থেকে। সবাই একমত হলাম।
আমি আমার প্লান বললাম, আমি গাছে উঠব ( আমি গাছে ওঠায় খুব পারদর্শী।
ছোটবেলা থেকেই গাছে ওঠার অভ্যাস ছিল ), আমার ভাই আশ পাশে নজর রাখবে, তোরা দুইজন একটা কাঁথা নিয়ে গাছের নীচে দাড়িয়ে থাকবি। যাতে ডাব নীচে পড়লে কোনো শব্দ না হয়। আমি কোমড়ে ১ টা ''দা'' নিয়ে ( বরিশালের ভাষায় ''দা'' বলে। খাঁটি বাংলায় কি বলে, তা জানিনা। ) গাছে উঠে পরলাম।
প্রায় ৯০ ভাগ ওঠার পর হঠাৎ পুলিশের বাঁশীর শব্দ শুনতে পাই। তখন কোর্টের ভিতর থেকে আরো ২ জন পুলিশ চলে আসে। যারা ট্রেজারী ব্যাংক পাহারায় ছিল। ঝালকাঠী ট্রেজারী ব্যাংক তখন কোর্ট কম্পাউন্ডের মধ্যে ছিল। বর্তমানে আমাদের বাসার নীচ তলায়।
ট্রেজারী ব্যাংকে ২৪ ঘন্টাই পুলিশ পাহারা থাকে। পুলিশের টের পেয়ে নীচে থাকা আমার সঙ্গী ৩ জন ভোঁ দৌড়। আমি পরলাম মহা বিপদে। এখন আমি কি করব। পুলিশের হাতে ধরা পরলে- জেল না হলেও মিনিমাম আজকের বাকী রাতটা থানাতেই কাটাতে হবে।
তাই অত ভাবাভাবি না করে, গাছের উপর থেকে দিলাম হাত পা ছেড়ে। শোঁ শোঁ করে নীচে নেমে এলাম। ডিসি অফিসের চারপাশে বাউন্ডারী থাকায় পুলিশের আসতে একটু দেরী লাগলো। সেই সময় গাছের কাছেই ছিল একটা পূরাতন মঠ ( হিন্দুদের সমাধী )। আমি দৌড়ে ঐ মঠের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
রাতের বেলা তো দুরের কথা, দিনের বেলাতেও কোন মানুষ এই মঠের ভিতর ঢুকতে সাহস করবেনা। আমি মঠের মধ্যে হাতে ''দা'' উঁচু করে দাড়িয়ে আছি। চিন্তা করছি, পুলিশ যদি আসে তাহলে মাবো এক কোঁপ। যা হবার হবে। কিন্তু ধরা পরলে চলবেনা।
একটা পুলিশ মঠের পাশে এসে একা একা বলছে, এক শালা এই দিকে দৌড় দিল, এখন শালাকে দেখিনা। কিছুক্ষন পর পুলিশের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে আমি কোর্টের দেয়াল টপকে দিলাম বাসার দিকে দৌড়। তখন একটা পুলিশ আমাকে দেখে ফেললো। আমি দৌড়ে বাসায় এসে আমার বিছানার মধ্যে ঢুকে পরি। কিছুক্ষন পর একটা পুলিশ এসে বাসার দরজা নক করে।
আমি ঘুমের ভান করে মুখে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে বলি কি হয়েছে ? পুলিশ বললো, এদিকে একটা চোর দৌড় ডিয়েছে, দেখেছেন ? আমি বললাম, না, আমিতো ঘুমে ছিলাম। তখন পুলিশটা আমাকে ঘুমাতে বলে চলে যায়। আমি যেন দেহে নতূন করে প্রান ফিরে পেলাম। একটু দম নিই। এরপর হঠাৎ আমার পায়ের কোথায় যেন ঠান্ডা অনুভব করি।
তখন লুঙ্গি উঠিয়ে দেখি, আমার সমস্ত বাম পা রক্তে ভেজা। থাই তে বড় একটা কাটা দাগ। সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এরপরে মনে হলো যে, গাছ থেকে নামার সময় গাছে পূতে রাখা লোহায় কেটে গিয়েছে। তখন আমি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ক্ষতস্থানটা একটু পরিস্কার শুকনো কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখি।
এরপর আমার মাথায় চিন্তা আসে যে, আমার সাথের বাকি ৩ জন কোথায় গেলো। ধরা পরল নাতো ? কি আর করা, সকালে দেখা যাবে। এরপর আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ৩ জনের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে। ওদের জিগ্গাসা করলে ওরা বলে যে, আমরা এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম।
পুলিশের ভয়ে রাতে আসিনি। আমি আমার ঘটনার কথা ওদের বললাম। এরপর সবাই মিলে সে কি হাসাহাসি।
আজ বুঝতে পারছি, তখন দুষ্টামির ছলে কি ভূলটাই না করেছিলাম। কত বড় বিপদের মুখ থেচেই ন চলে এসেছি।
এখনো সেই কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।