আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুদে এক কলম্বাসের গল্প

নিরপেক্ষ আমি

সেই মধ্যযুগে ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ভাস্কো-দা-গামারা কাঠের নৌযানে চড়ে অতল সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছেন নোনা হাওয়ার টানে। ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর সেই একই টানে সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছিল এক কিশোর। ভাস্কো-দা-গামাদের মত নতুন ভূখন্ড সে আবিস্কার করতে পারেনি বটে; কিন্তু নিজের নামটা লিখিয়ে ফেলেছে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’র পাতায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সী সেই ব্রিটিশ কিশোর একা একটি নৌকা নিয়ে গোটা পৃথিবী চক্কর দিয়ে এসেছে। একালের সেই কিশোর ‘কলম্বাস’-এর নাম মাইকেল পেরহ্যাম।

ব্রিটেনের হের্টফোর্ডশায়ারের পেরহামকে বাবা-মা আদর করে ডাকেন—মাইক। মাইক এখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। এরই মধ্যে দক্ষ নাবিক হিসেবে সে গোটা দুনিয়ায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। মাত্র সাত বছর বয়সে মাইকের নৌ-চালনায় হাতেখড়ি বাবা পিটার পেরহ্যামের কাছে। চৌদ্দতে পা রেখেই মাইক নৌকা নিয়ে প্রথম ভেসেছিল সমুদ্রে।

২৯ ফুট লম্বা চিকিমাঙ্কি নামের ছোট্ট সেই নৌকায় করে সে আটলান্টিক পাড়ি দেয়। সেবারের সফর শেষে মাইক তার প্রিয় চিকিমাঙ্কি বেচে দেয়। সেই টাকায় কিনে ফেলে ৫০ ফুট দীর্ঘ হালকা নৌযান, ইয়ট। এবার লক্ষ বিশ্বজয়। ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর।

পোর্টসমাউথের গুনওয়ার্ফ কুয়েজ বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করল মাইকের ‘টোটালিমানি ডট কম’। পৃষ্ঠপোষক এই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকেই অভিযানের মূল টাকা পেয়েছিল বলে মাইক তার ইয়টের নাম রেখেছে প্রতিষ্ঠানটির নামে। প্রথমটায় মাইক ধরে নিয়েছিল, সাড়ে চার মাসে সে বিশ্বভ্রমণ শেষ করতে পারবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া তার সেই পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিল। ৩০ হাজার মাইল পাড়ি দিতে তাকে টানা ২৮২ দিন নৌকায় কাটাতে হয়েছে।

গত ২৭ আগস্ট কর্নওয়ালের লিজার্ড পয়েন্ট অতিক্রম করল মাইকের ‘টোটালিমানি ডট কম’। সঙ্গে সঙ্গে তাকে অর্ভথ্যনা জানাতে ছুটে এল ব্রিটিশ রাজকীয় নৌ বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও নৌযান। রীতিমত এসকর্ট করে বন্দরে নিয়ে আসা হল মাইকের ইয়টকে। বেজে উঠল বাজনা, ঝলসে উঠল ফ্লাস। শেষ হল মাইকের বিশ্ববিজয়।

১৬ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করা ছেলেটি ১৭ বছর ১৬২ দিন বয়সে ইতি টানল তার এবারের যাত্রার। ডাঙায় পা রেখেই মাইক তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বললো, ‘আমি পেরেছি, আমি আমার স্বপ্নকে সার্থক করতে পেরেছি। ’ দীর্ঘ এই সফরে বেশ বড় বড় বিপদে পড়েছিল মাইক। নৌকার অটোপাইলটে একাধিকবার ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সারাইয়ের কাজে তাকে পর্তুগাল, ক্যানরি দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় দু দুবার থামতে হয়েছে।

একবার অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকার মাঝামাঝি জায়গায় বৈরী আবহাওয়া তাকে খুব কাবু করে ফেলেছিল। ৫০ ফুট উঁচু দৈত্যাকৃতির একেকটা ঢেউ আছড়ে পড়ছিল ইয়টের ডেকে। মাইকের বহু পেছনে অবশ্য একটি উদ্ধারকারী দল সর্বক্ষণই ছিল। কিন্তু তাতে কি আর ভয় কাটে! বিশ্বজয়ের এই ভ্রমনে শারীরিক অনেক ‘চ্যালেঞ্জ’ও মোকাবেলা করতে হয়েছে মাইককে। দিনের পর দিন জলে ভাসতে হলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন।

তাই প্রচুর পাস্তা ও ভাত খেয়েছে সে। শরীরটাকে চাঙা রাখতে ঘন্টায় ঘন্টায় কিছু না কিছু খেতে হয়েছে মাইককে। ঘুমানোর সময় ইয়টের দায়িত্ব থাকতো অটোপাইলটের ওপর। ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে মাইকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল জ্যাক সুন্ডেরল্যাণ্ড নামে আরেক অভিযাত্রীর সঙ্গে। মাইকের মতোই নৌকা নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছিল।

গত জুলাইয়ে জ্যাক ১৭ বছর সাত মাস বয়সে তার ভ্রমণ শেষ করেছিল। কিন্তু গিনেজ বুকে তার নাম স্থান পায়নি। কারণ সফরের মাঝামাঝি সময় সে ডাঙ্গায় উঠেছিল। মাইকের রেকর্ডটি অবশ্য এরই মধ্যে ভাঙতে চেয়েছিল লরা ডেকার নামের এক কিশোরী। নিউজিল্যান্ড ও জার্মানের নাগরিক এই কিশোরীর বয়স মাত্র ১৩।

কিন্তু বাধ সাধেন আদালত। এত অল্প বয়েসী একটি মেয়েকে এমন বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া সমীচিন নয় বলে গত ২৮ আগস্ট আদালত রায় দেন। আদালতের রায়ে আপাতত থেমে গেল লরার অভিযাত্রা। কিন্তু লরা-মাইকরা কি আর থামার পাত্র! তারা যে সেই কলম্বাসদের গোত্রের মানুষ। —ওয়েবসাইট অবলম্বনে সুত্র: প্রথম আলো।

আবুল হাসনাত | তারিখ: ১১-০৯-২০০৯ আরো তথ্য জানুন http://digitalvillagebd.blogspot.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।