আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুদে কণ্ঠের ৯ ক্ষুদে গানরাজের কথা

গভীর কিছু শেখার আছে ....

প্রায় ৮০ হাজার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ হাজার ৫০০ শিশু প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় গত বছরের শুরুর দিকে ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগিতার জন্য। তারপর মে মাসে ৪১ জনকে নিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এরপর ক্ষুদে গানরাজরা কণ্ঠ দিয়ে মাতিয়ে রাখে টেলিভিশনের পর্দা। প্রতিটি পর্বে গানের ভিন্নতার মাধ্যমে তারা প্রকাশ করছে নিজ নিজ প্রতিভা। প্রতিযোগিতার মূল দুই বিচারক কুমার বিশ্বজিৎ ও সামিনা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ২৪ জনকে পাঠানো হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে।

এখানেই তাদের গানের তালিম দিয়ে প্রচার করা হয় বিভিন্ন পর্বগুলো। ১৩ ফেব্রুয়ারি ক্ষুদে গানরাজের ফাইনাল অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সেরা ৫ জনের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে সাবরিনা আফরিন পড়শি, মো. জুয়েল রানা, নোশিন তাবাস্সুম স্মরণ, ঝুমঝুম আকতার ঝুমা ও সদ্য সাবরিনা আফরিন পড়শি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে সাবরিনা আফরিন পড়শি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। কাসে পড়শির প্লেস খুব আহামরি কিছু না, আবার খুব খারাপও না। বাবা এহসানুর রশীদ, মা জুলিয়া আমিন আর এক ভাই নিয়ে পড়শিদের ছোট্ট পরিবার।

মায়ের উৎসাহই পড়শিকে গানের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। ওস্তাদ নিয়াজ মামুনের কাছ থেকে গান শেখার সময়ই পড়শির স্বপ্ন ছিল একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অবস্থান গড়ার। আর হয়তো সে জন্যই ক্ষুদে গানরাজে এখন পর্যন্ত শীর্ষ ৫-এ থাকা পড়শিকে অনেকেই চেনে ভালো কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। ক্ষুদে গানরাজে পড়শির গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ এই দুনিয়া এখন তো আর, যখন থামবে কোলাহল, কেন আশা বেঁধে রাখি, ঘুম ঘুম চোখ মেলে, বিমূর্ত এই রাত্রি আমার, আমি যে আঁধারে বন্দিনী, জনমে জনমও গেল, আইলা না আইলা না, তারা ভরা রাতে, প্রেমে পড়েছি প্রভৃতি। পড়শির ভালো লাগে মিতালী মুখার্জি, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সামিনা চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ প্রমুখের গান শুনতে।

ক্ষুদে গানরাজে বিজয়ী হলে কী করবেÑ জিজ্ঞাসা করলে পড়শি হেসে জবাব দেয়, এখনো চিন্তা করিনি কী করবো। তবে একজন ভালো শিল্পী হতে চাই, ভালো গাইতে চাই। সাহাবুদ্দীন সাজ্জাদ উদয় কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের ক্ষুদে গায়ক সাহাবুদ্দীন সাজ্জাদ উদয় চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তাই স্বাভাবিকভাবেই আদরের পাল্লাটাও ওর দিকেই বেশি থাকে। ওস্তাদ শেখ আলাউল, নান্টু সরকার ও মেজো ভাই ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখনের উৎসাহ ও প্রত্যক্ষ গাইডেনসই উদয়কে ক্ষুদে গানরাজের শীর্ষ ৯-এ উঠতে সাহায্য করেছে।

এছাড়া বাবা গোলাম সরওয়ার চেয়ারম্যান ও মা শামিমা সুলতানার উৎসাহ তো ছিলই। মেহেরপুরের চিতলা প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র উদয়ের ফোক গানের প্রতিই উৎসাহ একটু বেশি। ক্ষুদে গানরাজে উদয়ের গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বন্দে মায়া লাগাইছে, আমার গায়ে যতো দুঃখ সয়, নারী হয় লজ্জায় লাল, তুই যদি আমার হইতি রে, তুমি যে প্রাণের বধূ, আমার মন্দ স্বভাব, স্কুল খুইলাছে মওলা, হইলোনারে হইলোনারে আমার প্রভৃতি। মো. জুয়েল রানা দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. জুয়েল রানার গান শেখার জন্য কোনো ওস্তাদ ছিল না। বাবা মো. জালাল উদ্দিন ও মা মোসাম্মৎ হলিমা খাতুনের উৎসাহে টেপ রেকর্ডারে শুনেই গান আয়ত্ত করেছে জুয়েল।

গাজীপুরের শ্রীপুরে মিজান মডেল একাডেমীর ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র জুয়েল তাই তার সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে পৌঁছে গেছে শীর্ষ ৫-এ। ক্ষুদে গানরাজে জুয়েলের গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ সেই তুমি, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, সবুজের বুকে লাল, মা তুমি আমার আগে যেও না, গান গাই আমার মনরে বুঝাই, গ্রামের নওজোয়ান প্রভৃতি। ক্ষুদে গানরাজে বিজয়ী হলে কী করবেÑ জিজ্ঞাসা করলে সিরিয়াস কণ্ঠে জুয়েল বলে, আমি বিজয়ী যদি নাও হই তবুও আমি গান ছাড়বো না। যেহেতু আমার সামর্থ্য নেই বড় কোনো ওস্তাদের কাছে গান শেখার তাই পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেই চেষ্টা করবো ভালো শিল্পী হয়ে উঠতে। আশা ক্ষুদে গানরাজের বিস্ময়কর প্রতিভা আশা শীর্ষ ৯ বাছাইকালে বাদ পড়ে গিয়েছিল।

পরে দর্শক এসএমএসে আশা ফিরে আসে। সাত বছর বয়সী আশার উচ্চতা মাত্র ২ ফুট ১ ইঞ্চি। দিনাজপুরের সুজালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী আশার ওস্তাদ ছিলেন কাজী গোলাম ও আকবর মিন্টু। বাবা মো. আবুল কাসেম, মা আমেনা বেগম এবং চার ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন আশার আদর-আবদার তাই স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি। ক্ষুদে গানরাজে আশার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ শুধু গান গেয়ে পরিচয়, তুমি যে আমার কবিতা, কাল সারা রাত, অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান, আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল, ও আমার মন কান্দে, চোখের আলোয় দেখেছিলাম, বসন্ত বাতাসে সই গো, আচ্ছা কেন মানুষগুলো এমন হয়ে যায়, চল না যাই বসি নিরিবিলি প্রভৃতি।

জারিন তাসনিম তুবা সিরাজগঞ্জের মেয়ে তুবা। উদয়ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী তুবার প্রিয় খাবার চকোলেট। তুবার মতে, এতো প্রতিযোগীর মধ্য থেকে এ পর্যন্ত আসাটাও তার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। যারা তাকে এসএমএসের মাধ্যমে ভোট দিয়ে এ পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছে তাদের প্রতি তুবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইমরান ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের ছেলে ইমরান।

থাকে ঢাকাতেই। ইমরান রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। ইমরানের প্রিয় খাবার মাছ ভাজা। ইমরান আগের পর্বগুলোতে যে গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছে সেগুলো হলো কেউ প্রেম করে কেউ প্রেমে পড়ে, এক আকাশের তারা তুই একা থাকিস না এবং মেলায় যাইরে। ইমরানের ইচ্ছা সে বড় হলে একটা ব্যান্ড দল গঠন করবে।

নোশিন তাবাস্সুম স্মরণ নীলফামারীর মেয়ে স্মরণ। বাবা মো. তারিকুল আলম বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের সহকারী অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী স্মরণের প্রিয় খাবার চায়নিজ ও আইসক্রিম। ইতিমধ্যে স্মরণ দর্শক ও বিচারকদের বিচারে পৌঁছে গেছে শীর্ষ ৫-এ। এর আগের পর্বগুলোতে স্মরণের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান দুটি ছিল আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি ও যে অভিমানে আমি কষ্ট দিয়েছি তোমায়।

স্মরণ যদি ক্ষুদে গানরাজের বিজয় মুকুট অর্জন করতে পারে তাহলে সে সর্বপ্রথম সৃষ্টিকর্তা ও বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে। সেই সঙ্গে গানের টিচার আবদুল আওয়াল ও অনুষ্ঠানের বিচারকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সদ্য ফরিদপুরের ছেলে সদ্য ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে শীর্ষ ৫-এ। সদ্য ঢাকার গ্রিনফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। তার প্রিয় খাবার চকোলেট, পায়েস ও এনার্জি ড্রিঙ্ক টাইগার।

আগের পর্বগুলোতে সদ্যের গাওয়া গানগুলো হলো ধিকিধিকি আগুন জ্বলে, আমার ভালো থাকার কথা শুনে, বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলে বেলার গান প্রভৃতি। সদ্যের বাবা একজন ব্যবসায়ী। সে তার বাবা-মার কাছে গান শিখেছে। সদ্যের ভাষায়, সে একজন সঙ্গীত পরিবারের সদস্য। সদ্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছে যেন সে বড় হয়ে একটা ব্যান্ড দল গঠন করতে পারে এবং সঙ্গীত জগতে টিকে থাকতে পারে।

ঝুমঝুম আকতার ঝুমা ১০ বছর বয়সী ঝুমা গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। ঝুমার প্রিয় খাবারের মধ্যে জুস অন্যতম। বাবা পুলিশ বাহিনীর সদস্য। ঝুমা ক্ষুদে গানরাজে এ পর্যন্ত আসতে পারায় সবার প্রতিই কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধন্যবাদ তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য।

ঝুমার মতে চেষ্টা ও বিশ্বাস থাকলে অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব। দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ঝুমা জানায়, আমি সবার সহযোগিতা পেয়েছি এবং সামনের জন্য তাদের কাছে দোয়া চাই যেন এ সঙ্গীত জগতে থাকতে পারি। [ ফটো ক্যাপশন : (বা থেকে) পড়শি, সদ্য, ঝুমা, জুয়েল, আশা, উদয়, তুবা, ইমরান ও স্মরণ ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।