আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেগাসিরিয়াল: ঢাকা কলেজ এবং আমরা .........শেষ পর্ব

My scars remind me that the past is real, I tear my heart open just to feel........

আগের পর্বগুলো: পর্ব১: টিচার এবং পারিপার্শ্বিকতা পর্ব২: নবীনবরণ এবং ফার্স্ট ইয়ারের আরো কিছু মজার কথা পর্ব৩: ক্লাশ এবং প্র্যাকটিকাল নামের কিছু প্রহসন! পর্ব৪: সেসময়ের ছাত্ররাজনীতি! পর্ব৫: আরেকটু ছাত্ররাজনীতি! পর্ব৬: তখনকার পরিবহন ব্যবস্হা আর এখনকার অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবহন ব্যবস্হার সাথে মিল/অমিল! পর্ব৭: আমার প্রিয় একটা জায়গা-লাস্ট ওয়ান; আর নামকরণগুলো! পর্ব৮: পরীক্ষা, পরীক্ষার গার্ড এবং ঢাকা কলেজের ব্যাচ নিয়ে কিছু কথা! প্রারম্ভিক কথা: রেগুলার লেখা হয়না, কিন্তু তাই বলে মেগাসিরিয়ালকে তো অন্য নাম দিতে পারিনা! ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ের কিছু কথা নিয়ে শুরু করেছিলাম এই সিরিজ, সমাপ্তি টানছি আজকের পর্বে। ভাল লাগলে, সেটাই আমার প্রাপ্তি, কারণ কলেজে ঢুকার সময়ও কেউ টের পায়নি, বের হওয়ার সময়ও না। পড়ুন আর উপভোগ করুন দেশের একমাত্র বিজ্ঞাপনবিরতি বিহীন মেগাসিরিয়ালের শেষ পর্ব। শুরু হচ্ছে মেগাসিরিয়াল ঢাকা কলেজের ৯ম এবং শেষ এপিসোড, ঢাকা কলেজ:৯; কিছু রিকমন্ডেশন, তবু যদি কারো মতিভ্রম হয়...! মজা, বিটলামি, দৌড়ানি খাওয়া, নামকরণ, পলিটিকস সবই তো বলা শেষ ঢাকা কলেজের। শেষ পর্বে এগুলোই তবে আরেকবার রিভিউ করি, দেখি নতুন কিছু মনে পড়ে কিনা!! ২০০১ এর জানুয়ারির এক শীতের সকালের কথা বলি।

বেশ কুয়াশা ছিল সেদিন, স্যারের বাসায় পড়া ছিল, পড়ে ভাবলাম কলেজের নোটিশবোর্ড-টা একবার দেখে যাই। ঢুকে দেখি পুরা অন্ধকার! সামান্য আলো আসছে করিডরের শেষ মাথায়, কয়েকজনের নড়াচড়াও যেন চোখে পড়ল! কিন্তু দূর থেকে দেখে যা মনে হল, ওদের হাতে রাইফেল বা লাঠি টাইপের কিছু একটা! মারছেরে! পা টিপে টিপে বের হলাম কলেজের ভেতর থেকে, বাইরে এসে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করতে থাকলাম আসলে কারা ছিল ওখানে! খিকজ, বাইরের আলোতে ওরা বের হওয়ার পর দেখলাম- বিএনসিসির ছেলেরা ছিল ওখানে, কাঠের ডামি রাইফেল নিয়ে হাঁটছিল করিডরে, পরে বাইরে এসে বিভিন্ন মহড়া দেয়ার জন্য নিয়ে আসছিল ওগুলো! হা হা হা, পলিটিকাল জুজুর ভয়, এড়ানো টাফ!! পলিটিকস নিয়ে আরেকটা কথা মনে পড়ে গেল। সবার মাঝেই ভয় কাজ করত, কঠিন পলিটিক্সের কলেজে এসেছি পলিটিক্সের জন্য পড়ায় কোন হ্যাম্পার হয় কিনা! উত্তর- এই প্যাটার্নে কখনো হয়নি আমাদের সময়, পলিটিকাল লিডাররা আমাদের কোন স্টুডেন্টকে কখনো ডাকেনি সক্রিয়/নিস্ক্রিয় কোন ধরণের পলিটিকসের জন্য! নিজে থেকে কেউ কোন পার্টিতে জয়েন করতে চাইলে অবশ্য না করতনা, বরং মাঝে মাঝে দুয়েকজন সিনিয়র লিডার তখন ডিসকারেজ করত পলিটিক্সে আসার জন্য, ইন্টারের স্টুডেন্টদের। তবে অনার্স লেভেলে- ডোর ইজ অলওয়েজ ওপেন!! ফিজিক্স ফার্স্ট ইয়ারে যেই স্টিফেন হকিংসের কাছে পড়তাম, ঐ স্যারের ব্যাচে একজন একদিন পড়া শুরু হওয়ার আগে বলছে ব্যাপক ভাব নিয়ে, "লীগে জয়েন করলাম গতকাল"! ঢাকা কলেজের ব্যাচ, কিন্তু বাকি ১৪জন স্টুডেন্ট একসাথে বলেছিলাম একটা ওয়ার্ড ওর উদ্দেশ্যে- "ছাগল!" তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের এই অধঃপতনের কারণ ছিল একটাই- হঠাৎ করে পাওয়া অসীম স্বাধীনতাটুকু! আর সেকেন্ড কারণ ছিল ইন্টারের বিশাল সিলেবাস! এসএসসি লেভেল পর্যন্ত কমবেশি সবাই গার্জিয়ানদের চোখে চোখে থাকে, ছেলেগুলো হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতার প্রোপার সদ্ব্যবহার করতে যেয়ে নিজেদের পায়ে নিজেই কুড়াল মারে। একটা কলেজে ন্যুনতম যেটুকু শাসন দরকার সেটাও নেই, ফল তো এরকমই হবে! টিচার ক্লাসে না এসে বলেন, "তোমাদের খুঁজে এসেছি, ক্লাসে তোমরা কেউ ছিলেনা", আর ১৯৫ জনের সেকশনে ক্লাস করতে আসে ১৫জন! শুধু ঢাকা কলেজ না, ওভারঅল ইন্টার লেভেল নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে- এসএসসি আর এইচএসসি, দুইটা লেভেলে টাইমের ডিস্ট্রিবিউশন মোটেও গ্রহণযোগ্য না।

এসএসসির সিলেবাস দেড় বছরে শেষ করার মত ছিল আমাদের সময়, সেটা পড়তে হয় রেজাল্ট দেয়া পর্যন্ত হিসেবে আড়াই বছর! আর কমপক্ষে তিন বছরের সিলেবাস ইন্টারে- সেটা পড়ানো হয় রেজাল্ট দেয়া সহ দুই বছরে। একটা লেভেলে প্রচন্ড অলস বানানো হচ্ছে, পরেরটাতে পাগলের মত খাটানো হচ্ছে!! এটা কেমন সমন্বয়?! ঐতিহ্যবাহী একটা কলেজ, যেটার ছাত্রদের একটা আলাদা গৌরব থাকার কথা এখন (এককালে ছিল সেটা) হারিয়ে যাচ্ছে কেন? কারণ অল্প কয়েকটা! টিচিং ফেসিলিটি এবং কোয়ালিটি অসাধারণ বললেও কম হয়! কিন্তু টিচার/স্টুডেন্টদের মাঝে সঠিক কোঅর্ডিনেশনের অভাব, টিচারদের ক্লাস টাইমে বাসায় পড়ানোর ট্রেন্ড, স্টুডেন্টদের ভর্তি হওয়ার অন্যতম দুই কারণ (কলেজের সেই বিখ্যাত সাজেশন আর জটিলসব টিচারদের কাছে বাসায় যেয়ে পড়ার জন্য অফুরন্ত সময় পাবে এই আশায়!)! এই সাজেশন আজ পর্যন্ত কারো কাছে দেখিনি কেউ পেয়েছে এরকমও শুনিনি কোথাও। কিন্তু গুজব আছেই - ও ও পেয়েছিল ১৫টা প্রশ্ন দিয়েছিল সাজেশনে ১২টাই এসেছিল,... হেন তেন!! আমার ব্যাচেও শুনেছিলাম দিয়েছিল। হা হা হা, ঐ জিনিষ দিলে যে অল্প কয়েকজনের পাওয়ার কথা আমি তাদের একজন ছিলাম। আমি বা আমাদের ব্যাচের কেউ পাইনি কেন?! বিচার চাই!! লাভের লাভ যেটা হচ্ছে, কলেজটা দিনদিন আরো পেছাচ্ছে! নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে একটা কথা বলি, ক্লাসে টিচার-স্টুডেন্টের যে ইন্টারএকশন, ডাইরেক্ট কনটাক্ট (আই কন্টাক্ট আর স্পিচ/ডিসকাশন দুটাই) এটাই বেস্ট টিচিং মেথড, এটার সাইকোলজিকাল ইফেক্টই আলাদা- পৃথিবীর কোন সিসটেমই এটার ইকুইভ্যালেন্ট না, হতে পারবেও না।

সেটা যত ভাল টিচারের বাসায় পড়েই হোক আর যত মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ইউজ করেই হোক!! তাই যারা ঢাকা কলেজে পড়তে যায় তিন টাইপের স্টুডেন্ট পাবেন- (১) পড়তে চায় (সিরিয়াস স্টুডেন্ট), কলেজের টিচিং স্টাফদের কাছ থেকে কিছু শিখতে চায়, (২) পড়তে চায় তবে অন্যভাবে- ক্লাস হয়না রেগুলার টিচারদের বাসায় যেয়ে যেয়ে পুরা ইন্টারের সিলেবাস শেষ করবে (নিজের উপর কনফিডেন্ট থাকলে আর স্বাধীনতার অপব্যবহার না করলে এরা ভাল করে), আর (৩) আড্ডাবাজ, পলিটিকসে ঢুকতে চায় (এরা কম) নতুবা গ্যালাক্সি বারের প্রোপার ইউজ করা পাবলিক! ৩ নং টাইপের লোকজন খুবই কম, ৮০০ জনের মাঝে ১৫/২০ জনের বেশি হবে না। ঢাকা কলেজ প্রথম টাইপের স্টুডেন্টের জন্য না! কলেজের কু-সিসটেমের গ্যাঁড়াকলে পড়ে এদের ফিউচারটাই নষ্ট হয়, ক্ষতিটা এদেরই হয়- আর কেউ সাফার করে না। টাইপ ২এর যারা স্বাধীনতার পুরা ফেসিলিটি নেয় এদেরকেও সাফার করতে হয়! এজন্য মাঝে মাঝে বলতে শুনা যায়- ইন্টারে এই কলেজ থেকে হয় খুব ভাল রেজাল্ট নিয়ে বের হয় আর না হয় তলানিতে পড়ে, মাঝামাঝি বলে কিছু নেই!! যাকগে, অনেক সিরিয়াস কথা বলে ফেললাম শেষপর্বে! একটা ছোটখাট মান্ধাতার আমলের ফানের ঘটনা বলে পোস্ট এবং মেগাসিরিয়াল শেষ করি! তখনকার সময়ে মানুষ হলে অনেক যেত এখনকার চেয়ে, মুভি দেখতে! আর কিছু কিছু সিল খাওয়া সিনেমা হলের স্পেশাল একটা শো থাকত এক টিকিটে দুই ছবি নামে! মুভিদুটাই থাকত স্পেশাল, প্রথমটা দেখাত খালি একশনের (আর্মড, আনআর্মড দুটাই) আর পরেরটা থাকত কামরূপ কামাখ্যার (নাউজুবিল্লাহ! ) আর এই টিকিট বিক্রি হত বা এই ধারাটা বেশি চলত কেবল পরের মুভিটার জন্যই ! ঐটাইপের হলগুলোর সামনে আলাদা লোকই থাকত টিকিট বিক্রির জন্য; সমানে রাস্তায় চেঁচাতো, এক টিকিটে দুই ছবি, এক টিকিটে দুই ছবি বলে! পুরা জিনিষটা জানতে পেরেছিলাম গুলিস্তানে বাস চেন্জ করার জন্য হলের পাশে দিয়ে হাঁটার সময় (পরে এক্সপ্লানেশনটা পেয়েছিলাম এক এক্সপেরিয়েন্সড ফ্রেন্ডের কাছে)! স্টুডেন্টলাইফে আমি নিজে সিনেমা হলে ঢুকেছি আজ পর্যন্ত মাত্র দুইবার (জয়যাত্রা দেখতে ২০০৪এ আর ২০০৮ সালে এক তাবলীগি ছাগলের রিকোয়েস্টে কি একটা বাংলা মুভি দেখতে- ছাকিব কানের!)! তো আমরা যখন ঢাকা কলেজে পড়ি, অল্প দুচারজন ফ্রেন্ড মোবাইল ইউজ করত, ওদের কারো মোবাইলে ফোন আসলে যখন কথা বলতে নিত, পাশে যেয়ে বলা শুরু করতাম- এক টিকিটে দুই ছবি, এক টিকিটে দুই ছবি..... ভাই দিমু একটা টিকিট? নতুন কঠিন একটা থিরি আইছে, লন না ভাই একটা...এক টিকিটে দুই ছবি, এক টিকিটে দুই ছবি.....!! এইজন্যই আমার সামনে ফোন আসলে পারতপক্ষে কেউ রিসিভ করত না কিছু ছবি: ঢাকা কলেজ! পর্ব:৫ -এ এই তীর চিন্হ দেয়া জায়গার ড্রেনেই সোডিয়ামের টুকরা ফেলেছিলাম! সেই প্রিয় পুকুরপাড়!! লিংকস: ঢাকা কলেজ, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ঢাকা কলেজ, উইকিপিডিয়া লিংক ***************The End***************

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।