আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলবোর্ড দখলঃ শুরু কোকোর হাত ধরেই

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
আপনারা জানেন আলোচিত বিলবোর্ড গুলো সরানো শুরু হয়েছে। ঢাকার রাস্তায় বিলবোর্ডের রাজত্ব শুরু ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। বিএনপি সরকারের প্রথম মেয়াদে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবর্তনের মাধ্যমে পণ্য বাজারজাতকরণ এবং বাজার দখলের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, বিলবোর্ড তারই ‘বাই প্রডাক্ট’ (উপজাত)। কিন্তু, এই ‘বাই প্রডাক্টই’ একসময়ে পণ্যের চেয়েও মহামূল্যবান হিসেবে দেখা দেয়।

তাই, শিল্পকারখানার বিনিয়োগ, পণ্য উৎপাদন এবং এর বাজারজাতকরণ খরচের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের হিসেবে একটি বড় বাজেট যোগ হয় প্রচারণার। কিন্তু, ৯০-এর ওই সময়ে দেশের প্রচারণার অন্যতম খাত বেসরকারি টেলিভিশন হয়ে না ওঠায় কেবলমাত্র বিটিভি এবং গুটিকয়েক দৈনিক পত্রিকাই যখন হাতিয়ার, তখন হঠাৎ করেই রাস্তার পাশে শোভা পেতে শুরু করে হরেক রঙের বিলবোর্ড। অনিয়ন্ত্রিত আকারে ঢাকার আকাশ ঢেকে যেতে শুরু করে বিশাল বিশাল বিলবোর্ডের আড়ালে। বিলবোর্ডের এই আগ্রাসন শুরু হয় বিজ্ঞাপনি ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ব্যবসা সরে যাওয়ার পর থেকেই। জোট আমলে বিলবোর্ড বাণিজ্যের রাজা-রাজাধিরাজ ছিলেন একজনই।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, ভাগিনা ডিউক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব কাজী জেসিন, তারেক জিয়ার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দীন মামুন মিলে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে দেশের বিলবোর্ড বাণিজ্য রাতের আঁধারে দখল করে নেন। তাদের এই একচেটিয়া বিলবোর্ড আগ্রাসনেই প্রকৃত বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ীরা পথে বসেন। কোকোর ওই সিন্ডিকেট বিলবোর্ডের ব্যবসার ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ২০০১-এর নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর। রাতের আঁধারে অন্যের বসানো বিলবোর্ড দখলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। বিজ্ঞাপন দিতে বাধ্য করা হয় পণ্য বাজারজাতকারী সংস্থাগুলোকে।

অন্যদিকে, রাস্তা, আবাসিক ভবন, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, ফসলের ক্ষেত, সড়কের মোড়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সবই ছেয়ে যায় বিলবোর্ডে। পুরো ঢাকা শহরে বিলবোর্ডের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই। বড় ভাই তারেক রহমান রাজনীতি এবং এতদসংক্রান্ত নানা বিষয়ে মনোযোগী থাকলেও কোকো ছিলেন নিস্পৃহ। চোখে পড়ার মতো বড় ব্যবসা-বাণিজ্যে তার আগ্রহ কম থাকলেও আগ্রহ ছিল বিলবোর্ড ব্যবসায়ে। কোকো এখন পরবাসে।

একসময়ে বিজ্ঞাপনী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো ‘নিয়ন সাইন’, ‘অ্যাডকম’, ‘উদয়নের’ মতো বিখ্যাত সব বিজ্ঞাপনী সংস্থা। কিন্তু কোকো, ডিউক, মামুন সিন্ডিকেট এ চিরায়ত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেন। কেবল তাই-ই নয়, এ সিন্ডিকেটের দাপটে রাতারাতি বিলবোর্ডের ভাড়া বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিলবোর্ড ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মন্তব্য এক কোকো নেই, তাতে কী! এখন অনেক কোকো! রাজধানীর ফুটপাতসহ সব খালি জায়গাথ বিলবোর্ডের দৌরাত্ম্যে কিছুই বাদ পড়ছে না। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে সিটি করপোরেশন মাঝে মধ্যে হুঙ্কার ছাড়ে।

তারপর চুপচাপ। জরুরি অবস্থা আসতে না আসতেই বিলবোর্ডের অবৈধ রমরমা কারবারের নিয়ন্ত্রণ হারায় কোকোর অ্যাডভান্স অ্যাড। চারদলীয় জোট সরকারের সময় রোকেয়া সরণি, এয়ারপোর্ট রোডের পুরোটা অ্যাডভান্স অ্যাডের দখলে ছিল। ব্যবসায়ীরাও কৌশল হিসেবে এখন এক কোম্পানিকে কয়েকটি নামে নিবন্ধন নিচ্ছেন। আর মৌসুম বুঝে রাজনৈতিক নেতাদেরও বোর্ডের বড় পদে নিচ্ছেন।

একই কারণে জোট আমলের ব্রাদার্স অ্যাডভার্টাইজিং এখন রাহিলস মিডিয়া নাম নিয়েছে। প্রমাণ সাইজের একটি বিলবোর্ড মানেই চার থেকে সাত লাখ টাকার কারবার। যদি সেটি কোটি চোখ পড়ার মতো জায়গায় হয়, তাহলে এর দাম আরও বেশি। রাজধানীর হাজার পাঁচেক বিলবোর্ডে তাই বছরান্তে কয়েকশ কোটি টাকার হিসাব। বিলবোর্ডের ক্ষেত্রে সেটিই সবচেয়ে দামি হয়, যেটিতে পথচারীদের চোখ বেশি পড়ে।

সে বিবেচনায় শাহবাগ থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, এয়ারপোর্ট রোড, গুলশান, বিজয় সরণির র‌্যাংগস মোড় বিলবোর্ডের অভিজাত এলাকা। বছর সাতেক আগে টেলিযোগাযোগ ভবনের পেছনে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় প্রথম বোর্ড তোলে সুপরিচিত কোম্পানি সেঞ্চুরি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছয়টি বোর্ডই বেদখল। বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই বাড়তে থাকে বিলবোর্ড। প্রতিবছরই অনিয়ন্ত্রিত বিলবোর্ড কালবৈশাখীতে ভেঙে পড়ে মানুষও মারা যেতে থাকে।

কেবল রাজনৈতিক ছত্রছায়াই নয়, বিলবোর্ডের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশ, চাঁদাবাজ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ অনেকেই। বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের দাপট থেকে রক্ষা পায়নি বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট কিছুই। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, চারদলীয় জোট আমলে কেবল বিলবোর্ড থেকেই কোকোর আয় ছিল কয়েকশ কোটি টাকা। প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড থেকে প্রতি মাসে ভাড়া উঠতো ১২ কোটি টাকার ওপরে। সেই হিসেবে বছরে আয় হতো ৫০ কোটি টাকার মতো।

সুত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.