আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের অন্যের দেখাদেখি কপি পেস্ট করার স্বভাবটা কবে যাবে ??

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশ আমাদের। নিজের দেশকে নিয়ে গর্ব করে না এমন লোক পাওয়াই যায় না। সব দেশ সব নাগরিকেরই একটা মনের চাওয়া থাকে তার দেশকে নিয়ে। সে চাওয়াটা পূরণ করা সম্ভব না হলেও কেউ আশা ছাড়ে না। এ ভেবেই এগিয়ে যায় সময়।

যাক, এখন আসল কথায় আসি। প্রতিটা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক প্রতিভাদর মানুষ। কেউ কেউ খবর এর শিরোনাম হন আবার কেউ কেউ লোক চক্ষুর আড়ালেই থেকে যান। বাংলাদেশেও এর বেতিক্রম নয়। প্রচুর প্রতিভা আছেন এই দেশ এ।

তারা নানা কাজে নানা পেশায় নিয়োজিত আছেন। যখন কপি পেস্ট এর ব্যাপার নিয়ে বলতে চেয়েছি তখন বলতে খারাপই লাগছে। মনে কষ্ট নিয়েই বলতে হচ্ছে এই সব কথা। আমার এই পোস্ট এ বলবো শুধু গানের ক্ষেএ নিয়ে। গত কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে ভারত এর দেখা দেখি প্রতিভা অনেষ্যণ এর প্রতিযোগিতা।

এ ক্ষেত্রে ভারত তাদের কাজের সুফল এখন পাচ্ছে বা পাবে সামনে এটা বলাই যায়। কারণ বিগত অনেক বছর ধরে তাদের গায়ক গায়িকারা নিজেদের প্রমাণ করেছেন যোগ্য হিসেবেই। কিন্তু কপি পেস্ট করে সেই সব প্রতিযোগিতা আমাদের দেশ এ আয়োজন করে আমরা কি করতে পাচ্ছি? যে কয়জন প্রতিযোগি দেশ সেরা হয়েছেন তাদের কতজন নিজের নাম রাখতে পেরেছেন তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে? অথচ ভারতে দেখেন। তাদের গায়ক গায়িকা দের অভাব নাই। যে দিকে তাকাই দেখি খালি গায়ক আর গায়িকা।

তাদের সুযোগও তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে কেউ চাইলেও গান থেকে দূরে থাকতে পারছে না। প্রচুর আয়ও করছে তারা গান গেয়ে। কিন্তু আমাদের দেশ এ দেখেন । প্রতিযোগিতা শেষ হলে আর এদের খুজে পাওয়া যায় না তেমন।

টাকার পিছনে সবাই যেন ছুটছে। গত ৫/৬ বছর, এই সময়ে আমরা হাতে গোনা ভাল কিছু শিল্পী পেয়েছি কিন্তু তারা আসতে আসতে হাড়িয়ে গিয়েছেন। বা এখনও যাচ্ছেন। আমাদের তো মেধার অভাব নাই। তাহলে কেন এরকম হচ্ছে? এত আয়োজন করে এত পয়সা খরচ করে যে সব গান এর প্রতিযোগিতা গুলো করা হচ্ছে তাতে লাভবান কারা হচ্ছেন? এখানে যে একটা ব্যাবসায়িক স্বার্থ লুকিয়ে আছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

চ্যানেল গুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা আজকে দেখার মত। তারা একে অন্যের সাথে লড়াই এ জেতার জন্য নানারকম আয়োযন করে যাচ্ছে। অথচ তারা এটা ভেবে দেখেন না যে তাদের আয়োজন মান সম্মত হচ্ছে কি না। যাদের মধ্যে এখন গান করছেন তাদের বেশির ভাগ নিজেকে নিয়েই বেশি চিন্তা করছেন হয়ত। অথচ যখন আয়োজন চলতে থাকে তখন তাদের মুখস্থ বুলি বলতে শোনা যায় যে তারা দেশ এর মানুষের জন্য কাজ করবেন!! প্রতিযোগিদের অল্প বয়সেই এত এত টাকা পয়সা, বাড়ি গাড়ি দিয়ে তাদের শুধু মাথাটা আউলা করে দেয়া ছাড়া কিছুই করা হচ্ছে না।

ফলে আমরা হারাচ্ছি অনেক প্রতিভাদের। ফলে যা হবার তাই হয়। তারা হাড়িয়ে যায় কালের অতল তলে। আর টাকা পয়সা যদি দিয়েই থাকে তাহলে তাদের একটা ভাল অবস্থান করে দেয়ার দায়িত্ব সবার উপরেই বর্তায়। এভাবে করেই আমরা হাড়িয়েছি অনেক নতুন নতুন শিল্পী কে।

যারা একটু সহযোগিতা পেলে মাথা উচু করে দাড়াতে পারতো খুব ভাল মত করেই। যে নোলক বাবুকে নিয়ে ছিল সবার এত প্রত্যাশা সে এখন কোথায়?? কেউ কি বলতে পারবেন? যারা তাকে এত বড় সুযোগ দিয়েছিলেন জানি তারাও পারবেন না। বিউটি দাস, রুমী, সালমা, নিশিতা শহ যত রকম প্রতিযোগিতা আছে আর এখান থেকে যত শিল্পী উঠে এসেছিলেন এক সময় তারাও হাড়িয়ে যাবে আর যাচ্ছেন ও ধিরে ধিরে । এর মধ্যে ব্যতিক্রম বলতে পারেন এ সময়ের ক্রেজ পড়শী। অসাধারণ কিছু গান আর অ্যালবাম উপহার দিয়ে রিতীমত জনপ্রীয় এক মুখ পড়শী।

অথচ এই মেয়ে যখন নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছিল তখন সে মাত্র ৬ এ পড়ত। এখন সে ৮ এ পড়ে। তাকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা অনেক। মিডিয়ার সাথে যুক্ত সব কলাকুশলীদের, চ্যানেল মালিকদের সহ সবার উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলব। পড়শী কে সুযোগ করে দিন কিছু করার।

অল্প বয়সে সে যা করছে তার মত এরকম এতটা জনপ্রিয়তা কেউ পাই নি। আমার তা মনে হয়। তাই আপনাদের বলছি তাকে গান শিখার সুযোগ তৈরি করে দিন। এটা দেশের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। টাকার পয়সা দিয়ে সব কিছু বিচার করা যায় না।

এটা হয়ত অনেকেই বুঝেন না। সবাই ব্যাবসায়ক দিকটাই বড় করে দেখছেন। পড়শীর মত এরকম অন্য গায়ক গায়িকারা কতটুকু পাচ্ছেন নিজেকে মেলে ধরতে? এই যেমন ধরেন ২/১ বছর ধরে শুরু হয়েছে নির্মান শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিযোগিতা। এবার শুনছি এটার অনুকরণেই ভিন্ন ভাবে শুরু হবে পোশাক কর্মীদের নিয়ে প্রতিযোগিতা। হাস্যকর!!! যারা ২ বেলা ২ মুঠো খাবার যোগার করতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, যারা অনন্ত কষ্টের মধ্যে দিনানিপাত করে, যাদের বেতন বাড়াতে রাস্তায় নামতে হয় তাদের নিয়ে এরকম রসিকতা আসলেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।

যারা এসব আয়োজন করছেন তাদের কে বলছি, এসব সস্তা প্রচার বন্ধ করুন। নিজেদের প্রতিভা খাটান। রসিকতা করে বেশিদিন টেকা সম্ভব না। যেখানে আপনারাই গায়ে লাত্তি মেরে শ্রমিকদদের কাজ করাতেন, মজুরি কম দিয়ে যাদের প্রতি বেইনসাফি করতেন, গাল মন্দ করতেন ইচ্ছা মতন। আপনাদের মুখে কোন কিছুই আটকাতো না।

আজ আবার তাদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে ছবি তুলেছেন প্রতিনিয়ত। আবার তাদের গানের সাথে নেচে উঠছেন। এসব আসলে একদমই দেখার মতন না। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। গত ৫/৬ বছরে যে পরিমাণ আয় করা হয়েছে এই সব প্রতিযোগিতা থেকে তাতে তারা যদি সবাই মিলে দেশের মানুষের জন্য ভাল কিছু করতেন তাহলে সবাই তাদের মনে রাখতেন।

বা তাদের একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার কাজে নিজেদের সম্পৃত করতেন তাহলে অনেক ভাল কিছু হতে পারত এ দেশে। দেশের মানুষ তাহলে হাত তুলে দোয়া করতেন তাদের জন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।