আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যোমকেশ



- আজ্ঞে, ব্যোমকেশের কতাই বলচি। সেতো আপনাদেরই ছেলে? - তা মশাই, হয়েচেটা কি? - আর বলবেন না! বাছা আমার মায়ের দুধ ছেড়েছে কদিনই বা হল! এরই মধ্যে সব ওর পিচে লেগেচে। - কেন, কেন? আর পিচে লাগলটাই বা কে? - আপনি শোনেননি? ওপাড়ার মিত্তির আর স্যান্নালরা মিলে সব আমার ব্যোমকেশের পিচে লেগেচে। ছেলে আমার ভয়ে শুকিয়ে আমসি। বাড়ীর বাইরে পর্যন্ত যায় না।

- সেতো খুবই চিন্তার কথা হল। কিন্তু জল এতদূর গড়াল কি করে? - জলের কথা বলচেন? জল থাকলে না গড়াবে! - তাতো বটেই, তাতো বটেই… - ব্যোমকেশকে আপনারা সেই ছোটবেলা থেকেই চেনেন। বাছা আমার কারো সাথেই চোখ তুলে কতা পর্যন্ত বলে না। আর ওর সম্বন্ধেই কিনা এই কতা! - একটু খুলেই বলুন না। - ছেলের তো স্কুল-কলেজের প্রতি সেই জন্ম থেকেই নাড়ির টান।

কোনদিন দেখেচেন তাকে মোড়ে, কি চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে? সব সমই স্কুলের সামনে। - আজ্ঞে আজ্ঞে, সেতো সবাই জানে। কিন্তু তাতে মিত্তিরদের সমস্যাটা কোথায়? - আরে মশাই, সেতো আমারও প্রশ্ন! - আজ্ঞে! - তো সেদিন মিত্তিরের মেয়ের সাথে ব্যোমকেশের ব্যাকরণ বিষয়ক কিছু বাক্যালাপ হয়ে থাকবে। আর তাতেই মিত্তির বললে কিনা…বোকাসোকা ছেলেটার নামে এত বড় কথা? - ছি ছি ছি, শেষ পর্যন্ত নিজের মেয়েকে জড়ালে! - দেখুন তো, মেয়েটার কথা একবার ভাবলে না পর্যন্ত। শুধু নিজের ঈগোটাকেই বড় করে দেকলে।

মেয়েটার তো একটা ভবিষ্যত আছে নাকি? - আ হা হা…কিন্তু স্যান্নাল… - আরে মশাই রাখুন আপনার স্যান্নাল। ওই বুড়োটাই তো মিত্তিরকে গাচে তুলেচে। এমন ভাব করচে, যেন কোনদিন মাচের নামই শোনেনি, উলটে খাবে কি! - কিন্তু খুড়ো মশাই তো সম্মানী লোক! আর… - বেড়ে বলেচেন! সম্মানী লোক! হুঃ! আসলে বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেচে। আর ওতো ব্যোমকেশকে বরাবরই এক চোকে দ্যাকে। মনে নেই, গেল বছর স্কুলের গভর্নিং বডির ইলেকশনে খোকার নমিনেশনের কি বিরধিতাটাই না করলে! অথচ দেকুন, বাছার আমার সেবাকর্মে প্রচন্ড আগ্রহ।

সব সময়ই খবরা-খবর নিচ্চে। ওকে একবার শুধু জিজ্ঞেস করে দেকুন না স্কুলের কোন মেয়ের কি রেজাল্ট; আমরা বাপেরা না জানলেও, বাছা আমার হড়হড়িয়ে বলে দেবে। - তাই নাকি! - তবে বলচি কি? কত দিন নিষেধ করেচি, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে লাভ নেই। কিন্তু, কে শোনে কার কথা? মাথায় শুধু স্কুল স্কুল আর স্কুল। এই খোঁজ-খবর করতে গিয়েই না আবার এই ঝামেলা বাধালে! - আমি বলচি কি, ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছু দিন বাসায় রাকুন।

আপাতত স্কুলে গিয়ে কাজ নেই। তাছাড়া, গার্লস স্কুল তো, লোকে নানান কতা বলে। - শেষ পর্যন্ত আপনিও! অমন সাধাসিধে ছেলে আমার। ছেলে-মেয়েতে এখনও পার্থক্য করতে শেকেনি। শুধু পড়াশোনাতেই যত আগ্রহ।

এই দেকুন না, গত বিষ্যুধবারে মুখুজ্জের মেয়েকে বাড়ী নিয়ে এসে সারাদিন পড়ালে। আরে বাবা, পয়সা দিয়েও আজকাল প্রাইভেট মাষ্টার পাওয়া যায় না। অথচ এই নিয়েও কত কথা! কিন্তু কই, একতা তো কেউ বলেনি যে ওকে জোর করে তুলে এনেচে! ভেবেচেন সে রকম কিচু হলে লোকের মুখ বন্ধ রাকা যেত? - না না, আসলে আপনি সারা দিন নানান কাজে বাড়ীর বাইরে থাকেন। মুখুজ্জে শুধু এটুকুই বলেচে যে, ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েচে, তাই একটু সাবধানে থাকা ভাল। - ছেলে আমার বড় হয়েচে বলেই না সেবার সেনপাড়ার রাস্কেলগুলোকে কেমন শায়েস্তা করলে।

আপনার মনে নেই, গুন্ডা-বদমাশগুলো অস্রশস্র নিয়ে হাসপাতালের টেন্ডার দখল করতে আসলে ওরা দুটো পটকা ফুটিয়েই ওদের হটিয়ে দিলে। - সেকি ভোলার বিষয়? বোমাবাজির শব্দে কানে তো প্রায় হপ্তাখানেক তালা লেগেচিল। - না না, ওগুলো তো ওই পাড়ার বদমাশগুলো ফাটিয়েচিল। আমার ব্যোমকেশ বাড়ী থেকে আমার সামনে দিয়েই পূজোর জন্য কেনা পটকা নিয়ে গিয়েচিল। শুধু বুদ্ধির জোড়েই না পটকা ফুটিয়ে ওদের হটিয়ে দিলে।

কোথায় লোকে বাহবা দেবে, তা না, মামলা কোর্ট-কাচারি! - মুশকিল, বড্ড মুশকিল। - বলুন তো, ওদের এই বয়সে আমরা কি কম করেচি? তাতে কি আমরা উচ্ছনে গিয়েচি? করে খাচ্ছি তো। - নিশ্চই, নিশ্চই। তবে বলি কি, আসলে বয়সটাই এ রকম। ছেলের বিয়েথা দিয়ে দিন, সংসারী হোক।

- বিয়ের কতাই তো ভাবছিলাম ক্ষণ। এরই মধ্যে মিত্তির আর স্যান্নাল এই কাজটা করলে। - আহা, সেটাই তো এখনও জানা হল না, ওরা করলেটা কি? - মামলা করে দিয়েচে অমন গোবেচারা ছেলের নামে! বলেচে আমার ব্যোমকেশ নাকি ওর মেয়েকে নির্যাতন করেচে। - বলচেন কি! সেতো সাংঘাতিক কতা! - তবে আর বলচি কি? ব্যোমকেশ আপনাদের ছেলে। দোষ যদি কিচু হয়ে থাকে তবে আপনারা দু’দশ জনে মিলে ওকে ডেকে শাসন করে দিন।

কিন্তু পরের বাড়ীর লোক এসে ওকে শাসিয়ে যাবে, আপনারা থাকতে তা কি করে হয়? - তাই তো? থানায় একটা পিটিশন দিয়ে দিন না। আমরা পাড়ার লোকেরা সই করে দেব ক্ষণ। আমাদের ত একটা দায়িত্ব আচে। - সে আমি করলে কি ভালো দেকায়? আপনারা দশজন মিলে পিটিশনটা করলে জোড় পায়, বিশ্বাসযোগ্যতাটা বাড়ে আর কি। - তাই তো! দেকুন, আমার বুদ্ধি দেকুন।

যা হোক, আপনি আর এ নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি এক্ষণি মুভ করচি। - বাচালেন মশাই। আপনারা দশজন আচেন বলেই না ভরসা পাই। - আজ্ঞে, মানে জানেনই তো।

আমার দু’খানা কানা-খোড়া মেয়ে আচে। একটু দেকবেন ক্ষণ। - ও নিয়ে আপনি একদম ভাববেন না। আমি ব্যোমকেশকে বলে দেব ক্ষণ। কোন কাক-পক্ষীও ওদের দিকে চোক তুলে তাকাবে না।

অক্টোবর ১১, ২০১০ সেম্বাওয়াং ড্রাইভ, সিঙ্গাপুর

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।