আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট্ট মেয়ে মম জানে না বাবা ফিরবে না আর

আমি সব সুনদরকে সাগত জানাই।

ছোট্ট মেয়ে মম জানে না বাবা ফিরবে না আর ইভটিজিংয়ে প্রতিবাদকারী শিক্ষকের দাফন সম্পন্ন ০০ আনিসুজ্জামান, রাজশাহী অফিস নিজ গ্রাম ও কর্মস্থলের হাজারো মানুষকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর কলেজের ইভটিজ বিরোধী, প্রতিবাদী শিক্ষক মিজানুর রহমান। গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ৮টায় কর্মস্থল লোকমানপুরে প্রথম এবং সাড়ে ১০টায় নিজ গ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে রবিবার দিবাগত রাত ১০টা ১৭ মিনিটে ঢাকা থেকে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পেঁৗছে। এ্যাম্বুলেন্স থেকে মিজানুর রহমানের কফিন নামানোর সাথে সাথে তাকে একনজর দেখতে উপস্থিত হাজার হাজার নারী-পুরুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

এ সময় স্বজনদের হূদয়বিদারক আহাজারিতে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। সবাই কাঁদছেন, এ কান্না যেন থামানোর কেউ নেই। শিক্ষক মিজানুর রহমানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা মিলি ও মা জাহেরা বেগম তখনও জানেন না মিজান আর নেই। তাদেরকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। মানুষের কান্নায় তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

কান্নার এক পর্যায়ে মিজানের স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সোমবার সকালেও মিজানুর রহমানের বাড়িতে হাজারো শোকার্ত মানুষ ভীড় করে। তার স্ত্রী মিলি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে মানুষের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর মূর্ছা যাচ্ছিলেন। মিজানুর রহমানের ৪ বছরের মেয়ে লুসাইবা রশিদ মম বাবাকে খুঁজছিল আর বলছিল, আব্বু কই, আব্বু কখন আসবে? এক পর্যায়ে সেও আব্বু আব্বু বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ফেলে। এই অবুঝ শিশুর কান্না কেউ থামাতে পারছিলেন না।

এক পর্যায়ে নিহতের ভাই হারুনুর রশিদ ও শ্যালক মোস্তাক হোসেন মমকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা মিজানুর রহমানের হত্যাকারী দুই বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিজানুর রহমান শেষবারের মতো কর্মস্থলে গেলেন, তবে লাশ হয়ে। তার আগেই আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষ লোকমানপুর কলেজ প্রাঙ্গণে ভীড় জমায়। নিজ কলেজ মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে।

সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে লাশ আবারো গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। উপজেলার মোহননগর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নামাজে জানাজায় বাগাতিপাড়া, চারঘাট, বাঘা ও লোকমানপুর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। ইত্তেফাকের চারঘাট সংবাদদাতা এসএম মোজাম্মেল হক জানান, প্রভাষক মিজানুর রহমানের অকাল মৃতু্যতে লোকমানপুরের পাশাপাশি গোটা চারঘাট উপজেলার মানুষ শোকাহত। তার নামাজে জানাজায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, চারঘাট-বাঘার সাবেক এমপি আজিজুর রহমান, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ, ভাইস চেয়ারম্যান আজিবার রহমান, চারঘাট পৌর মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুল, চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, রাজশাহী জজ কোর্টের এপিপি এ্যাডভোকেট সাহানাজুর রহমান, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, বাগাতিপাড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান নওশের আলী সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসিরুল ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়ামিন খান, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নাটোর জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ কেএম নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান, প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, থানার ওসি মীর্জা আব্দুস ছালাম, লোকমানপুর কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, পরিচালনা কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান, পাকা ইউপি চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন, আড়ানী ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক প্রমুখ।

আসিফের পুলিশ রিমাণ্ডের আবেদন এদিকে শিক্ষক মিজানুর রহমানের উপর দ্রুতগামী মোটর সাইকেল তুলে দেয়া বখাটে আসিফকে পুলিশ গতকাল সোমবার দুপুরে বাগাতিপাড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক মজিবুর রহমান আজ মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করে আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে মিজানুর রহমানের মাথা, হাত ও অণ্ডকোষে লোহার রড দিয়ে আঘাতকারী বখাটে স্থানীয় কলেজ ছাত্র শামসুদ্দোহা হত্যা মামলার আসামি রাজনকে পুলিশ সোমবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। বাগাতিপাড়া থানার ওসি মীর্জা আব্দুস সালাম জানান, রাজনকে গ্রেফতারের জন্য দেশজুড়ে গোয়েন্দা জাল পাতা হয়েছে। প্রায় ৮ বছর পূর্বে মিজানুর রহমান লোকমানপুর কলেজের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।

নিজ কলেজের ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় গত ১২ অক্টোবর বাগাতিপাড়ার চকগোয়াস বেগুনিয়া গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে আসিফ ও মুনছুরের ছেলে রাজন তার উপর দ্রুতগামী মোটর সাইকেল তুলে দেয়। এরপর রাজন লোহার রড দিয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমানের মাথায়, বাম হাতে ও অণ্ডকোষে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ১০ দিন তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে তার হূদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট খুলে নেন।

শিক্ষামন্ত্রীর শোক নাটোরের লোকমানপুর কলেজের শিক্ষক মিজানুর রহমানের মর্মান্তিক মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে তিনি শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদানে ছিলেন অগ্রদূত। গতকাল সোমবার এক শোকবার্তায় শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ইভটিজিং বিরোধী সাহসীযোদ্ধা সদালাপী মুক্তচিন্তার ধারক মিজানুর রহমানের সাহসিকতা সমাজের বখে যাওয়া কুলাঙ্গারদের প্রতিরোধে জাতিকে চিরদিন উদ্বুদ্ধ করবে। শিক্ষামন্ত্রী তার মৃতু্যর জন্য দায়ী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করেন। কপি পেষ্ট-ইত্তেফাক-২৬/১০/২০১০ইং

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.