নিরপেক্ষ আমি
‘বলো তো মা, এক যোগ এক—কত হয়?’ অচেতন মেয়ের পাশে বসে বারবার কথাটা বলে চলেছেন উত্কণ্ঠিত নিক অ্যালেক্স।
মেয়ে ভিকি তখনো গভীর কোমায়। তিন দিনেরও বেশি ‘লাইফ সাপোর্ট’ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। বন্ধুরা ভিকির কানের কাছে তার প্রিয় ব্যান্ড কোল্ড প্লে-র গান গেয়ে ব্যর্থ হয়েছে হুঁশ ফেরাতে। চিকিত্সকেরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
বাবা তবুও হাল ছাড়তে নারাজ। এত আদরের মেয়েকে কী করে চোখের সামনে মরতে দেখবেন তিনি। মৃত্যুর কাছে হার মানবেন বাবা! না, শেষ পর্যন্ত চিকিত্সাবিজ্ঞানকে হতভম্ব করে দিয়ে গণিতের টানে কোমা থেকে ফিরে এসেছে ভিকি। জিতে গেছেন বাবা অ্যালেক্স।
ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটন শহরের একজন চিকিত্সক নিক অ্যালেক্স।
মেয়ে ভিকি, ছেলে স্যামুয়েল আর স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে মেয়ে ভিকির শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। ঠান্ডাজ্বর লেগেই আছে। পারিবারিক চিকিত্সক দেখে জানালেন, সাধারণ ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা।
কিন্তু দিনে দিনে শরীর আরও খারাপ হতে লাগল।
একপর্যায়ে ভিকির শরীরে ধরা পড়ল বোনম্যারো লিউকোমিয়া। ১৫ বছর বয়সী যে মেয়েটার কথা ছিল প্রজাপতির মতো নেচে বেড়ানোর, সে মুখোমুখি হলো জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যটির সামনে। একসময় চূড়ান্ত রকমের অসুস্থ হয়ে পড়ল ভিকি। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছিল তাকে। টানা তিন দিনে ভিকির কোনো সাড়া না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিত্সকেরা।
কিন্তু ভিকির চিকিত্সক বাবার এই সময়ে মনে পড়ে গেল অঙ্কের কথা। ভিকিকে যদি কিছু বাঁচাতে পারে, সে অঙ্ক! ভিকি খুব অঙ্ক করতে ভালোবাসত। ছোট ছোট অঙ্ক আর মজার মজার সব অঙ্কের ধাঁধা নিয়ে সারা দিন মেতে থাকত।
বাবা নিক এবার চেষ্টা করলেন অঙ্কের প্রশ্ন করে মেয়ের চেতনা ফিরিয়ে আনার। তার পরই সেই চমত্কারটা ঘটে গেল।
‘এক যোগ এক কত হয়’—জিজ্ঞেস করা পর বাবা অবাক হয়ে দেখলেন, মেয়ে যেন অল্প অল্প মুখ নাড়ছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ‘কত হয়, দুই?’ আশার আলো দেখে আবার প্রশ্ন করেন বাবা। এবার ভিকির মাথাটা খানিকটা ওপরে নিচে নড়ে ওঠে। আনন্দের পরশ বয়ে যায় হাসপাতালের সবার মাঝে।
বাবার চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে। চিকিত্সকেরা অবাক।
এরপর আরও কয়েকটি অঙ্কের প্রশ্ন করেন বাবা। সবগুলোরই উত্তর ইশারার মাধ্যমে দিতে শুরু করে ভিকি। ‘আমি ওকে খুব একটা কঠিন প্রশ্ন করছিলাম না।
যদি আবার হিতে বিপরীত হয়ে পড়ে’—বলছিলেন বাবা নিক অ্যালেক্স।
অঙ্ক মেয়ের পছন্দের বিষয়। ইংরেজি সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়। এবার ইংরেজি নিয়ে একটা প্রশ্ন করায় সেটারও উত্তর দিল ভিকি! ‘ইংরেজি ও মোটেই পছন্দ করত না। যখন ও সেটা নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দিল, তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম, আমার মেয়েকে ঈশ্বর এখনই তুলে নেবেন না।
ওকে আবার ফিরে পাওয়ার আশা জেগে উঠতেই কি যে ভালো লাগছিল!’—বিস্মিত, আনন্দিত অ্যালেক্সের চোখে তখন জল।
পরদিনের কথা। ভিকির দিকে স্থির দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছেন বাবা। তখনো লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। হঠাত্ ভিকির মুখ থেকে অক্সিজেনের নলটা খুলে যায়।
লাফ দিয়ে ওঠে বাবার হূিপণ্ড। এগিয়ে যান মেয়ের দিকে। কাছাকাছি গিয়েই বুঝতে পারেন, ভয় নেই।
অক্সিজেনের নল এমনি এমনি খুলে যায়নি। ভিকি নিজেই মুখ থেকে বের করে দিয়েছে সেটা।
এখন সে শ্বাস নিতে পারছে নিজে নিজেই, লাইফ সাপোর্টের সাহায্য ছাড়াই। এ যাত্রা অঙ্কের টানে ফিরে এসেছে ভিকি। তবে ‘বোনম্যারো লিউকোমিয়া’ থেকে এখনো রেহাই পায়নি। এখন নিয়মিত কেমোথেরাপি নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে ভিকি।
এত বড় চমত্কার যে করতে পারে, তার স্বপ্ন কি ব্যর্থ হয়?
ওয়েবসাইট অবলম্বনে
পার্থ সরকার তারিখ: ২৫-১২-২০০৯
অনেক তথ্য জানুন এখান থেকে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।