জীবন কখনোই সংগ্রাম বিহীন হতে পারে না দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাজ করছে পাঁচ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক। তৈরি পোশাক শিল্প, বায়িং হাউস, আইটি ও টেলিকম সেক্টর, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, রেস্টুরেন্ট, প্রিন্টিং প্রেস এবং এনজিওসহ নানা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে তারা। তাদের বেশিরভাগই এদেশে ‘ট্যুরিস্ট ভিসায়’ এসে আর ফেরত যাচ্ছে না। কাজের ক্ষেত্র খুঁজে নিয়ে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশেই। এসব অবৈধ অভিবাসীর প্রকৃত পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই।
পুলিশও তাদের খুঁজে পায় না।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে এবং প্রভাবশালীদের ক্ষমতাবলেই বাংলাদেশে থেকে যাচ্ছে এসব বিদেশি।
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে তৈরি পোশাক শিল্পেই কমপক্ষে ১৫ হাজার বিদেশি কাজ করছে। তাদের বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক। ঢাকার বাইরেও তাদের সংখ্যা অনেক।
জানা যায়, ‘ট্যুরিস্ট ভিসায়’ তিন বা ছয় মাসের মেয়াদে বাংলাদেশে এসে এসব ভারতীয় বিভিন্ন গার্মেন্ট ও বায়িং হাউসে কোনোপ্রকার ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই চাকরি করছে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মাঝে মাঝে দেশে ফিরে গিয়ে সপ্তাহখানেক পর তারা আবারও বাংলাদেশে আসছে। তারা চাকরির বেতন পাঠাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে।
এদিকে একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। কারণ বাংলাদেশ ও ভারতের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে একাধিকবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ভারতীয় অবৈধ অভিবাসী রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২-৩ আগস্ট ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসরত ৫ লাখ ভারতীয় নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও ভারত তাতে সায় দেয়নি। বরং তারা বরাবরের মতোই অভিন্ন সুরে দাবি করেছে, ভারতেই নাকি অবৈধভাবে সোয়া কোটি বাংলাদেশী বসবাস করছে। কিন্তু তারা এ অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
সূত্রমতে, দেশের পাঁচটি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরের সবগুলোতেই অনেক বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের পাঁচটি বিদেশি মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কোম্পানিতে অন্তত এক হাজার বিদেশি নাগরিক কর্মরত।
আবার তারা সবাই বাংলাদেশী কর্মরতদের তুলনায় বেতন পাচ্ছে অনেক বেশি। তাদের অধিকাংশই মোবাইল ফোন এক্সপার্ট বা টেকনিশিয়ান। তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কয়েক মাস কাজ করেই আবার দেশে ফিরে যায়।
অনুসন্ধানে এটাও জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ভারতীয় ব্যক্তিমালিকানায় গার্মেন্ট রয়েছে দু’শতাধিক। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ থেকে ২৫টি।
বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকদের বেশিরভাগই ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যবসায়ী হিসেবে পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশের ভিসা সংগ্রহ করে। এদেশে এসে তারা নানা মহলকে সন্তুষ্ট রেখেই বিভিন্ন নামে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার করছে।
বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে তাদের কাছে নিবন্ধিত বায়িং হাউসের সংখ্যা ১৪শ’র বেশি। এর বাইরে আরও কিছু বায়িং হাউস রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত পাঁচশ’ বায়িং হাউস নামে-বেনামে বিদেশিরা চালাচ্ছে।
আর অধিকাংশ বায়িং হাউসের মূল মালিক ভারতীয়। এসব বায়িং হাউসে প্রচুর ভারতীয়সহ বিদেশিরা কাজ করছে। এছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরাও কর্মরত রয়েছে। আর বস্ত্রখাতে রয়েছে পাকিস্তানিরা।
তবে বাংলাদেশে কী পরিমাণ বিদেশি নাগরিক বৈধ বা অবৈধভাবে কাজ করছে এমন কোনো তথ্যই নেই সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে।
নিয়ম অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগে এসব তথ্য থাকার কথা। কিন্তু ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরতদের কোনো তথ্য নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদেরর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইচ্ছে করলেও হঠাৎ করে তা কাটিয়ে ওঠা যাবে না। বৈধ বা অবৈধ অভিবাসীদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ নেই।
তবে কিছু বিচ্ছিন্ন তথ্য আছে যা দেয়া সম্ভব নয়। ’ অন্যদিকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) নিজ উদ্যোগে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানা জটিলতা। এসবির ইমিগ্রেশন বিভাগ শুধুই বিমানবন্দর হয়ে যারা বাংলাদেশে ঢোকে, তাদের হিসাব রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে ঢোকার পর এসব বিদেশি যথাসময়ে দেশে ফিরে যায় কিনা এমন কোনো তথ্য থাকে না এসবির কাছে।
আবার এসব তথ্য নেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। বিদেশিদের বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান, তাদের আনাগোনা সম্পর্কে সুষ্ঠু পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থাই নেই প্রশাসনের।
বাংলাদেশে বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট প্রসঙ্গে নীতিমালায় বলা আছে, বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ওয়ার্ক পারমিট অপরিহার্য। বেসরকারি খাতের কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি বিদেশি নাগরিককে নিয়োগ দিতে চায়, তাহলে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আগেই আবেদন করতে হবে। কিন্তু রাজস্ব ফাঁকি দিতেই সব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বোর্ড এড়িয়ে চলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবস্থানকারী নিখোঁজ বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে অধিকাংশই ভারত, ক্যামেরুন, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, সুদান, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তবে ঠিকানা পরিবর্তন করায় এসব বিদেশিকে খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগ।
জানা গেছে, এসব অভিবাসী কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবার ওয়ার্ক পারমিট নিলেও তা আর নবায়ন করে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে এবং প্রভাবশালীদের ক্ষমতাবলেই বাংলাদেশে থেকে যাচ্ছে এসব বিদেশি। কখনও কখনও তারা এদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অন্যদিকে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশি যোগ্য নাগরিক।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য স্বাধীন দেশে বিদেশীদের সাথে স্বদেশীদের এরূপ বৈষম্য কোনোভাবেই চলতে পারেনা। অপরদিকে বিদেশীদের দ্বারা যে নিরাপত্তার ঝুকি থাকে তাতেও সরকার বসে থাকতে পারে না। স্বাধীন দেশে স্বদেশীদের পরিবর্তে বিদেশীরা সম্পত্তির মালিক বনে যাচ্ছে এটাও সরকার বরদাশত করতে পারেনা। অপরদিকে প্রণিধানযোগ্য যে সরকার এদেশে মুশরিক ভারতীয়দের লাখে লাখে কামাই রোজগার করতে দিচ্ছে কিন্তু মুসলমান রোহিঙ্গাদের জীবনের আশ্রয় দেয়ার মত ন্যূনতম মানবিকতা প্রদর্শন করছে না।
মূলত: সরকারের অবস্থা হয়েছে- চোখ আছে কিন্তু দেখতে পায়না, কান আছে তবু শুনতে পায়না, অন্তর আছে কিন্তু বুঝতে পারেনা। সরকারের দিলে মহর পড়ে গেছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে বাদ দিয়ে জনগণেরই জনসচেতন হওয়া ব্যতিরেকে কোনো উপায় নাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।