মহলদার
আমরা মানুষেরা যে কত নিষ্ঠুর আজ তার ছোট্ট একটা গল্প বলব। তবে তার আগে একটা গানের কথা বলি। মনে আছে ছোট বেলায় শোনা সেই গানের কথাগুলো ? ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে......। গানটা যখনই শুনতাম মনের মধ্যে একটা গল্প ভেসে উঠত। এখনো যখন গানটি শুনি সেই গল্পটিই মনে জ্বল জ্বল করে।
বগা আর বগী, কত জনমের প্রেম ওদের মধ্যে। একসাথে ওঠা বসা, আহার-বিহার। কিন্তু দারুন বিধির একি নিষ্ঠুর খেলা? বগা একদিন বিহারে বের হয়ে শিকারীর লোহার গুনার ফাঁদে আটকে গেল। তার করুন আর্তনাদে সাথীরাও উড়ে গেল তাকে ছেড়ে। কেন জানি বগী সেদিন বগার সাথে বিহারে যায়নি।
কি জানি, বাসায় বাচ্চাদের যত্নে ব্যস্ত ছিল হয়ত। উড়ে যাওয়া এক চকোয়া পাখীর কাছে খবর পেল যে তার বগা ধরলা নদীর পাড়ে বন্দী হয়েছে শিকারীর ফাঁদে। খবর শুনেই দুই পাখা মেলে বগী উড়াল দিল সেই ধরলা নদীর পাড়ে। সেখানে গিয়ে দেখা দিল বগা কে। বগীর কি সাধ্য আছে বগাকে এই লোহার ফাঁদ থেকে মুক্ত করে! বগী বুক ফাঁটিয়ে কাঁদতে থাকে।
বগীকে দেখে বগা ও কাঁদতে থাকে; জনমের শেষ দেখা যে আজ। প্রিয়তমার সাথে আর হয়ত দেখা হবে না। গানটির ঠিক শেষের লাইন দুটো শুনে আমার মনটা ভার হয়ে যায় এখনো- বগাকে দেখিয়া বগী কান্দে রে.......বগীকে দেখিয়া বগা কান্দে রে।
এই যে বগা আর বগীর বিচরন, এ আমাদের দেশের চিরন্তন দৃশ্য। আমাদের দেশের খাল বিলে হাজার হাজার বক পাখির বিচরণ ছিল এক সময়।
সারাদিন বিচরণ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ীর কানাচের বাঁশ বাগানে কিংবা তেঁতুল গাছে , আম বাগানে ঠাঁই নিত। ওখানে বাসা হত, ছানা হত। ব্যাধেরা তো যুগে যুগেই ছিল পৃথিবীতে। তখন দু’চারজন ব্যাধ ও শিকার করত বক। আস্তে আস্তে আমরা সবাই শিকারে মেতে উঠলাম।
আমরা সবাই ব্যাধ হয়ে গেলাম। ব্যাধ বলা বোধ হয় ঠিক হবে না। আমরা হয়ে উঠলাম ব্যাধের চেয়েও নিষ্ঠুর কিছু। ধীরে ধীরে আমরা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেললাম বককুল। এখন আমাদের খালে বিলে আর বক দেখা যায় না।
যে অতি অল্প সংখ্যক বক এখনো আমাদের অত্যাচার জর্জরিত হয়ে টিকে আছে তারা কিন্তু ইদানিং বেশ সচেতন। আমাদের সেকেলে ফাঁদে তারা আর এখন পা দেয় না। তারা ভাল করেই চেনে সেগুলো। আমরা কি আর কম যাই? আমরা এখন লোহার ফলা কিংবা ফাঁদ দিয়ে বক বধ করি না। আমরা এখন ওদের বধ করতে ব্যবহার করি ঘুমের ট্যাবলেট, ব্যবহার করি দানাদার বিষ।
মাছের মধ্যে গুঁড়ো করে ঢুকিয়ে মাছ ছড়িয়ে রাখলেই হল; ব্যস। কিছুক্ষণ পরই দেখা যাবে বকেরা ঢলে ঢলে পড়ছে। কোন সাথী উড়ে যেতে পারে না, বগা –বগী-কেউ কারো জন্য কাঁদে না, দু’জনেই ঘুমে ঢলে ঢলে পড়ে। আর আমরা খুব সহজ ভঙ্গিমায় ওদরে গিয়ে ধরে ধরে নিই। আমি গ্রামে যেয়ে এরকম গল্প শুনেছি বহুবার।
আমরা মানুষরা কত নিষ্ঠুর। কি নিষ্ঠুর ভাবে আমরা শেষ করে ফেলছি আমাদের।
(আমার সংগ্রহ থেকে মিডিয়া ফায়ারে)
ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে - আব্বাস উদ্দিন
ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে - রেবা সরকার
সম্ভবত রথীন্দ্র নাথ রায়ের কন্ঠে কিংবা অন্য কার কন্ঠেও যেন গানটা কখনো শুনেছি। কারো কাছে অন্য শিল্পীর কন্ঠে গাওয়া গানটি যদি থকে তবে তার লিংক দিলে বাধিত থাকব।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।