seremos como el Che
গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮তারিখ খিলক্ষেত বাসষ্ট্যান্ডে আমার ওয়ালেট হারিয়ে গিয়েছিল, ওয়ালেটের ভিতরে ছিল আমার এটিএম কার্ড। খুবই বড় সমস্যায় পড়লাম। অ্যাপ্লিকেশন করলাম। কিন্তু জরুরী হওয়ায় সেই এটিএম কার্ড আনতে আমাকে যেতে হয়েছিল ডাচ্-বাংলার কর্পোরেট অফিস, দিলখুশাতে।
দুপুর রোদের মাঝে খিলক্ষেত থেকে মতিঝিল রওনা দিলাম।
কোন বাস মনে নেই, টিকিট কাটলাম। বললাম মতিঝিল যাব, আমি ১০০টাকা দিলে আমাকে ৮৫টাকা ফেরত দিয়ে টিকিট দিল, আমি বাসে উঠে পড়লাম। বাস শাহবাগ ক্রস করার পর চেকার উঠে টিকিট চাইল, আমি আমার টিকিট দিলাম। চেকার বলে ‘আপনার টিকিট তো শাহবাগ পর্যন্ত’। টিকিট দেখলাম, ১২টাকার টিকিট।
আমার কাছে দেখানোর মত কোন যুক্তিই ছিল না, তবুও তাকে আসল ঘটনাটা বলার চেষ্টা করলাম। সে শুনে বলে তাই যদি হয় তাহলে এই জরিমানা টিকিটটা খিলক্ষেত কাউন্টারে দেখিয়ে ২০টাকা নিয়ে নিবেন। ২০টাকা জরিমানা দিলাম, তার থেকেও বড় কথা মান-সন্মান নিয়ে টানাটানি। নিজেকে চোর চোর লাগতে লাগল, কে যায় আর খিলক্ষেতে টাকা ফেরত নিতে। মনে মনে কান ধরলাম যে এরপর থেকে যত ব্যস্ততাই থাক, সবকিছু ঠিক না থাকলে আর বাসে উঠব না।
এরপর অনেকবার অনেক কাউন্টারে আমাকে বলেছে, ‘মামা, উঠে যান, টিকিট লাগবে না’। কিন্তু আমি টিকিট তো নিয়েছিই এবং সেটা ঠিকমত দেখে নিয়ে তারপর বাস এ উঠেছি। আর আমি কোনদিন মহিলা সিটে বসিনা, এমনও হয়েছে যে মহিলা সিট খালি আছে আর সারা বাসের মাঝে আমি একা দাঁড়িয়ে এসেছি।
এবার আসি গতকালের কথায়(১৯শে অক্টোবর, ২০১০)। খিলক্ষেত বাসষ্ট্যান্ড, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে, ভার্সিটি যাচ্ছি।
সাড়ে ৬টায় আমার ক্লাশ। ‘কনক’(বাস) আসল, আমি উঠে পড়লাম। আপনারা হয়ত জানেন যে কনকে দাঁড়িয়ে লোক নেয় না। যাহোক বাসের শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখলাম যে সব সিটেই লোক আছে। আমি আবার সামনের দিকে আসলাম।
হেল্পারঃ সিট খালী নাই?
আমিঃ না, নাই।
হেল্পারঃ সিট তো খালি থাকার কথা। এই যে একটা, ওই যে একটা। দুইটা সিট ফাঁকা আছে তো।
আমি পুরাই ‘আবুল’ হয়ে গেলাম।
ও যে দুটো সিট দেখাচ্ছে তার একটি হল ড্রাইভারের সিটের পেছনে আর মহিলা সিটের সামনে উঁচু একটা জায়গা, আমি জানতাম না যে ওটাকেও সিট হিসেবে কাউন্ট করে। আর দ্বিতীয়টি হল মহিলা সিটের দ্বিতীয় লাইনের মধ্যের সিটটা, যার দু’পাশে দুই মহিলা বসা। আমি অপ্রস্তুত হয়ে কি করব ভাবছি।
হেল্পারঃ আপনি কি যাইবেন?
আমিঃ আমাকে নামায় দেন।
নেমে এসে আবার বাসষ্ট্যান্ডে দাঁড়ালাম।
আমার দেরী হওয়া শুরু হয়ে গেছে। ইম্পর্টেন্ট ক্লাশ আছে আজ, মেজাজটাও খারাপ হওয়া শুরু হল। একটু পরে প্রায় ফাঁকা একটা সূচনা আসল। আমি টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টাকা দিলাম। টাকা নিয়ে বলে ‘যান উঠে যান’।
আমিঃ টিকিট দেন।
কাউন্টারের লোকঃ টিকিট লাগবে না।
আমিঃ আমি এইভাবে যাব না। আগে ঝামেলায় পড়ছি, টিকিট দেন।
কাউন্টারের লোকঃ আরে, যান না।
ভাবখানা এমন যে ও আমার থেকে বেশী ব্যস্ত। এমনিতে এইসব উলটাপালটা দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয় তার উপর আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি রেগে গিয়ে বললাম ‘আচ্ছা আমি যাব না, আমার টাকা ফেরত দেন’। ওই লোক হেব্বি ভাব নিয়ে আমার টাকা ফেরত দিয়ে দিল। আমি কিছুটা অবাক হয়ে টাকা নিয়ে চলে এলাম(মনে মনে যে কি ভাবলাম সেটা সেন্সরড্!)।
টিকিট না দিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে দিবে এটা আমার কল্পনায় ছিল না।
আমার অলরেডী দেরী হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, চলে গেলেই মনেহয় ভাল হত। একটু পর বেলাল আসল। বেলালে আবার কাকলী’র ভাড়া ১২টাকা, আমার কাছে আবার ২টাকা খুচরা নাই।
২০টাকা দিলাম। কাউন্টারের লোকটা চোখ টিপে হেল্পার’কে কি যেন জিজ্ঞেস করল তারপর আমাকে ১০টাকা দিয়ে বলল ‘উঠে যান’। আমি বললাম ‘ঝামেলায় পড়লে কি হবে?’ তখন হেল্পারটা বলল, ‘আরে মামা, আমি আছি না, আমারে দেখাইয়া দিবেন’। এই কথায় আমি বেশী ভরসা পেলাম না বলাই বাহুল্য। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম ‘আর নীতিবান হয়ে কাজ নাই, ক্লাশে এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে’।
আমি বাসে উঠে পড়লাম।
কাকলী পর্যন্ত শুধু ভাবলাম যে আজকে চেক না হলেই বেঁচে যাই, কারণ এর আগের দিনই আমি যখন বেঙ্গল বাসে করে যাচ্ছিলাম তখন চেক হয়েছিল। আমার লাকটা ভাল ছিল যে আর চেক হয়নি তবে বাসে ওই সময়টুকু কিভাবে যে কাটিয়েছি সেটা শুধু আমিই জানি। ।
পরিশিষ্টঃ
আমার এই ফালতু লেখাটা লেখার একটা কারণ আছে।
এই ঘটনাটা থেকে আমি নতুন করে অনেক পুরনো একটা শিক্ষা আবার পেলাম। অনেক খারাপ লোকের মধ্যে একটা লোক ভাল হওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সে আর ভাল থাকতে পারে না। একটা সময় তারও দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় এবং সেও খারাপ হতে বাধ্য হয়। রিমি আপু (সিমিন হোসেন রিমি, তাজউদ্দীন আহমদ-এর কন্যা) একটা কথা বলেছিলেন ‘আমাদের দেশে অ্যাবনরমাল-টাই নরমাল হয়ে গেছে। নরমাল-টাই এখন সবার অ্যাবনরমাল মনে হয়।
মানুষ ঘুষ খায় না এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা, কিন্তু এটা দেখলেই মানুষ এখন অবাক হয়’। আসুন আমরা সবাই চেষ্টা করি নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হতে। তা না হলে আমাদের সবার স্বপ্নের বাংলাদেশ শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে, এর বাস্তবরূপ আমরা দেখতে পারব না কোনদিন। ।
২০শে অক্টোবর, ২০১০, ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।