আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষীকে জেরা করতে হলো প্রসিকিউশনকে

রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাবনার সাঁথিয়ার করমজা গ্রামের প্রদীপ কুমার দেবের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। তিনি এই মামলায় প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী।
কিন্তু আদালতে দেয়া সাক্ষ্যের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে দেয়া প্রদীপের জবানবন্দিতে মিল নেই দাবি করে প্রসিকিউশন তাকে বৈরী ঘোষণার পর তাকে জেরা করে।
তবে জেরার প্রক্রিয়ায় প্রসিকিউটরের আচরণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারকরা।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যে ৬২ বছর বয়সী প্রদীপ বলেন, ১৯৭১ সালের ৮ মে করমজা গ্রামের মেঘা ঠাকুরের বাড়িতে কয়েকজন হিন্দুকে হত্যার ঘটনা নিজ চোখে দেখেছিলেন তিনি।


ওই ঘটনার সময় সময় সেখানে নিজামীর ‘অনুগত’ রাজাকার বাহিনীর সদস্য শুকুর, আহাদ, আফজাল ও মোসলেমকেও সেখানে দেখেছিলেন বলে জানান তিনি।
এর পরপরই প্রদীপ বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা এই ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো কি না তা আমার মনে নেই। ”
সাক্ষীর এই বক্তব্যে আদালতকক্ষে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। সাক্ষীকে জেরা করার কথা থাকলেও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানায় আসামিপক্ষ।
এরপর এই সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণার আবেদন আদালতে জানিয়ে তাকে জেরা শুরু করেন প্রসিকিউটর মীর ইকবাল হোসেন।


প্রসিকিউটর ইকবাল সাক্ষী প্রদীপকে জিজ্ঞাসা করেন, “২০১০ সালের ৬ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আব্দর রাজ্জাকের নিকট আপনি জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ”
তখন সাক্ষী আবারো বলেন, “আমার এটা মনে নেই। ”
এই পর্যায়ে বিচারক ফজলে কবীর প্রসিকিউটারকে বলেন, “আপনি ওই জবানবন্দি ধরে প্রশ্ন করছেন কেন? ওই জবানবন্দি তো এখানে প্রযোজ্য নয়। সাক্ষী এখানে যে জবানবন্দি দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করুন। ”
এরপর প্রসিকিউটর ইকবাল পুনরায় সাক্ষীকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মতিউর রহমান নিজামী এবং তার সহযোগী রফিকুন নবী বাবলুর নাম উল্লেখ করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন কি না।


তখন ট্রাইব্যুনালের অন্যতম বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রসিকিউটরকে বলেন, “আপনি সিনিয়র মানুষ। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনার জেরা করাটা ঠিকমতো হচ্ছে না। ”
এসময় ইকবাল হোসেনকে সাহায্যের জন্য আরেক প্রসিকিউটর আব্দুর রহমান হাওলাদার উঠে দাঁড়ান।
জেরার শেষ পর্যায়ে প্রসিকিউটর সাইফুল সাক্ষীকে বলেন, “আপনি আসামিপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ‘মিথ্যা’ সাক্ষ্য দিয়েছেন। ”
তখন বিচারক প্রসিকিউটরকে জিজ্ঞাসা করেন, “এর মাধ্যমে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন যে উনি এর আগে যা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তার সবটুকুই মিথ্যা?”
উত্তরে প্রসিকিউটর বলেন, “না, তিনি সত্য গোপন করেছেন।


ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা প্রসিকিউটর ইকবালকে বলেন, জেরা করার একটা ‘আর্ট’ আছে, তা শিখে নিন।
প্রদীপ কুমার সাক্ষ্যে বলেন, ১৯৭১ সালের ৮ মে ভোররাতে তিনি মেঘা ঠাকুরের বাড়ির লিচু গাছে ওঠে দেখেন পাকিস্তানি সেনারা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেছে।
“তারপর পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির মধ্য থেকে লোকজনকে মারধর করে মন্দিরের পাশে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ”
ওই দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন- মেঘা ঠাকুর, দিজু ঠাকুর, করু ঠাকুর, ষষ্ঠী হালদার, শান্তি হালদার, আদু হালদার, কার্তিক হালদার, সুরেশ হালদার এবং সাক্ষীর কাকা মূরালী চন্দ্র।
প্রদীপ বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় সেখানে শুকুর, আফজাল, আহাদ, মোসলেমসহ আরো কয়েকজনকে দেখেছিলেন তিনি।


জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষীগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ঠিক করেছে আদালত।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।