একজন খেটে খাওয়া-শ্রমজীবী মানুষ। নিজের অধিকারের কথা বলতে চাই ও অন্যের শুনতে চাই। তাই বলে দেশ, দেশের মাটি, আলো-বাতাশ ও মানুষকে বাদ দিয়ে নয়।
গার্মেন্টস মালিকরা যদি কথা রাখে এবং সরকারের ঘোষণাকে যদি মান্য করে তাহলে আগামী ০১ নভেম্বর থেকে শ্রমিকদের জন্য নতুন ন্যূনতম মজুরি কার্যকর হচ্ছে। শ্রমিকরা পাবেন বর্ধিত বেতন।
এই বেতন মালিকরা যেমন দিতে যাচ্ছিলেন না, শ্রমিক নেতৃবৃন্দের একটি অংশও আরো বেশি দাবি করে বসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য একটি সম্মানজনক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়।
নির্ধারিত নতুন মজুরি বোর্ডে একেবারে নবাগত শ্রমিকদের বেতন আশানুরুপ বাড়লেও তুলনামূলকভাবে পুরাতন শ্রমিকদের বেতন সেইভাবে বাড়েনি। কিন্তু যে বেতন বেড়েছে তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনের হিসাব করলে শ্রমিকদের সঙ্গে শতভাগ প্রতারণ করা হয়েছে।
কেন প্রতারণা করা হয়েছে এই কথা বলার আগে আমি বলতে চাই কোন বিচারে শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরি ‘ঠিক’ আছে।
আমরা যদি একটু সিরিয়াল করে বলি তাহলে বলতে হয়-
১.
আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের দেয়ার কোন সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারেনি। কিছু গার্মেন্টস মালিকবাদে বেশির ভাগ মালিকই মনে করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যেভাবে ব্যবহার করি তাতেই তারা বাধ্য। এমন কি মালিকরা তাদের লাভকে শতভাগ করতে মেয়েদের বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি পর্যন্ত করে। প্রয়োজনে তারা শ্রমিকদের দাম্পত্য জীবনকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে। এই যেখানে গার্মেন্টস মালিকদের বেশির ভাগের চরিত্র সেখানে যে বেতন বৃদ্ধি করেছে তা ঠিকই আছে।
কথাগুলো যদি একটু গুছিয়ে বলা যায়, তাহলে এমনভাবে বলা যায় “শ্রমিকদের ন্যায্য পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করে মালিকদের জেনারেশনের উপর, কারণ কোন মালিক শ্রমিকদের পাওনাটা পরিশোধ করার মত বোধ হতে হলে মালিকদের তিন-জেনারেশন লাগে। যা আমাদের গার্মেন্টস মালিকদের হয়নি (বলেছেন ড. আবুল বারকাত)। সেই হিসাবে এটাই ঠিক আছে।
২.
সাধারণত ৫ বছর পর পর শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড বসার কথা,বর্তমান সরকার সাড়ে তিন বছরের মাথায় এটা করেছেন। এই হিসাবেও যা হয়ে মোটামুটি ঠিকই আছে।
৩.
আগের মজুরি বোর্ডের বৃদ্ধির হারের তুলনায় এবার যা বৃদ্ধি হয়েছে বা সেই সময় যে মূদ্রাস্ফৃতি বা এই সময়ের মূদ্রাস্ফৃতি হিবাব করলেও ঠিক আছে।
৪.
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দাও একটি কারণ। আরো কিছু কারণ আছে।
শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত বেতন কেন ঠিক হয়নি?
যেদিন থেকে নতুন বেতন নির্ধারিত হয়েছে সেই দিন থেকে সবকিছুর দাম বেড়েছে। বাড়ি ওয়ালা, চাল,ডাল,তৈল ওয়ালা বাড়িয়েছে দাম, বাড়িয়েছে দফায় দফায়।
নভে¤^রের বেতন যখন ডিসে¤^রের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহে শ্রমিকদের হাতে পৌছবে তখন তার আগেই বাড়ি ওয়ালা আর এক দফা ভাড়া বাড়াবে। নিত্যপণ্যে দাম বাড়বে আরেক দফা। ফলে বেতন বাড়লেও খরচ বেড়ে বেতন না বাড়ানোর পৌছে যাবে।
এই বেতন কার্যকর হওয়াতে বেশি বেকায়দায় পড়বে তুলনামুলকভাবে সিনিয়র শ্রমিকরা। যাদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম বেড়েছে।
কারণ এই সিনিয়র শ্রমিকরা থাকে পরিবার নিয়ে। তাদের বাসার ভাড়া গুনতে হয় বেশি, বাজারের খরচা দিতে হয় বেশি। আর বাজারের বাড়া দামগুলো সব এই সিনিয়র শ্রমিকদের উপর বেশি চাপ ফেলাবে। অবস্থা এমন দাঁড়ারে যে এই শ্রমিকরা যে বেতন বেশি পেলেন, খরচ বাড়বে তার দ্বিগুন।
শ্রমিকদের মধ্যে হয়তো তখন আবার অ¯^স্তি বাড়বে।
মনের মধ্যে কোন এক অজানা অখুশি কাজ করবে। তখন কোন আন্দোলনের ডাক লাগবে না। সামান্য ইস্যুতে তারা জ্বলে উঠবে। আর এই সুযোগ নেবে অসাধু লোক এবং চরিত্রহীন কিছু লোক যারা শ্রমিকদের জন্য কোন খবর রাখে না। তারাই সুযোগ বুঝে কখনো মোবাইলে কখনো ইশারায় সৎব্যবহার করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।