নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দুর্গম চরাঞ্চলের গত ৪ দিন ধরে দস্যু বাহিনীর হত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের বিষয়ে বনদস্যুদের তান্ডবের ঘটনা অতিরঞ্জিত ও কিছু কিছু মিডিয়ার বাড়াবাড়ি বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসন। আজ (রোববার) রাতে পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদ হাযারী ও জেলা প্রশাসক সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তারা উভয়েই গত কয়েক দিনে হতাহতের বিষয়ে মিডিয়া পরিবেশিত তথ্যের এখনো কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন।
হাতিয়ার আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর উচ্ছাভিলাষীতার কারণে এই চরগুলো এখন অগ্নিগর্ভ। গত ক’দিনে এই চরগুলোতে দখল পাল্টা দখলের খেলায় এই চরগুলো এখন নিয়ন্ত্রন করছে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বনদস্যু বাশার মাঝির স্থলাভিষিক্ত নাসির বাহিনীর হাতে।
মোহাম্মদ আলীর তত্বাবধানে ‘মিডিয়া ড্রামা’ পরিবেশনার ফলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ১০/১৫ জন থেকে ৩৫জন পর্যন্ত মৃত্য এবং দুই শতাধিক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া ও ধর্ষণের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে এর কোন অস্তিত পাওয়াা যায়নি। এদিকে শনিবার হাতিয়া থানায় ৮জন অপহরণ করে হত্যা এবং গুম করার বিষয়ে মামলা দায়ের করা হলেও ভূমিহীনরা তা অস্বীকার করে। হাতিয়া থানা পুলিশ ও চরে অবস্থানরত জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারও নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। চরাঞ্চচলের ভূমিহীনরা জানায়, হাতিয়ার মূল ভুখন্ড থেকে বি্িচ্ছন্ন চর নঙ্গলিয়া, নলের চর, কেরিং চর ও চর বাশার, জাহাজিয়ারচরসহ আশপাশের চরাঞ্চল এককভাবে নিয়ন্ত্রন করতো বনদস্যু বাশার মাঝির বাহিনী। গত ৬ জুন ভোরে র্যাবের সাথে ক্রসফায়ারে বাশার মাঝি নিহত হবার পর তার বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবেব নাসির কমান্ডার {বাশার মাঝির কেরানী}কে বাহিনীর দলনেতার দায়িত্ব দেয়।
কিছুদিন না যেতেই বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট প্রধান মিয়া শিকদার, কাসেম, বাগরাজ, বাবর কসাই, বাহার কেরানী, ইসমাইল, মালেক ফরাজী, এমরান ও নিজামসহ কয়েকজন নাসির কেরানীর সাথে বিদ্রোহ করে। চরাঞ্চলে আমন ধান পাকতে শুরু করায় চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রকাশ্যে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এই বাহিনী।
হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ত্রাস মুন্সিয়া চোরা, জলদস্যু গিয়াস উদ্দিন ওরপে গেইস্যা ডাকাত দলবল নিয়ে তাদের সাথে যোগ দেয়। এসকল দস্যু বাহিনী ভূমিহীন বাজার ও কেরিংচর দিয়েও চরে একই সাথে আক্রমন করে। একই সময়ে হাতিয়ার সাবেক সাংসদ আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর সমর্থকরা হাতিয়া ও বয়ারচর থেকে এসে মিয়া সিককদার বাহিনীর সাথে চরে নামে।
সরেজমিনে চরের বির্স্তীণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মাইলের পর মাইল পাকা ধানক্ষেত। কোথাও গুম করার চিত্র চোখে পড়েনি।
জেলা প্রশাসক সিরাজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে পরিস্থিতি অবহৃত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো কিন্তু এমন কোনো ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
চারটি টিমে শতাধিক পুলিশ নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রশিদ, সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আ.ফ.ম নিজাম উদ্দিন, হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম চর এলাকায় অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে চর বাশার, চর নঙ্গলিয়া, চর জাহাজিয়া, নলেরচর ও কেরিংচরে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জনকে পিটিয়ে ও জবাই করে হত্যা, অর্ধশত লোককে অপহরণ এবং তিন শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় ভূমিহীন অধিবাসীরা কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।
চর বাশারের ভূমিহীন মজিবুল হক জানান, মুলত এখন চরে ধান পাকা শুরু হয়েছে, ধান ও চরের জমি নিয়ন্ত্রণে নেবার জন্য সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী দস্যু মিয়া শিকদার, মুন্সিয়া চোরা, নিজাম ও গিয়াস ডাকাতের মাধ্যমে কয়েক শ জলদস্যু ও বনদস্যুদের পাঠিয়ে চর দখল নেয়ার চেষ্টা করে। পরে ভূমিহীনদের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। আমরা কোনো লোককে মরতে দেখিনি আর কোনো মৃত্যুর সংবাদও পাইনি।
এ সকল চরে আজ সারাদিন মোহাম্মদ আলীর বিচারের দাবিতে দফায় দফায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় ভূমিহীনরা।
এদিকে টেলিফোনে নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী বলেন, ভূমিহীনদের জিম্মি করে এসব বলানো হচ্ছে।
আমি এসব বাহিনীকে চিনি না, এরা বশার মাঝি বাহিনীর সদস্য নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় এখন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়া ও তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।
http://www.youtube.com/watch?v=nT1SE2Ui98I
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।