Click This Link
সিদ্ধিরগঞ্জে এক দারোগার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। মাদক ও চোরাই জ্বালানি তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, গ্রেপ্তার বাণিজ্য এবং পকেটমার, ছিনতাইকারী ও অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা, ওয়ারেন্টের আসামিকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এসব কাজের জন্য তার রয়েছে নিজস্ব সোর্স বাহিনী। ওই দারোগার নাম মিন্টু মোল্লা। তাকে সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন থানার ওসি এসএম বদরুল আলম।
ফলে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা থানার অন্য অফিসারও মিন্টু মোল্লার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না। তার বাড়ি ফরিদপুরে হলেও পরিচয় দিয়ে বেড়ান তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। তাই আইজিপি-ও তাকে কিছু করতে পারবে না বলে হুঙ্কার দেন। ২০০৯ সালের ২৩শে নভেম্বর দারোগা মিন্টু সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যোগ দেন। ৩০শে নভেম্বর তার প্রথম দিনের ডিউটি চলাকালে মিজমিজি দক্ষিণ পাড়া এলাকা থেকে এক নিরীহ যুবককে ধরে নিয়ে আসার সময় জনতা তাকে ঘেরাও করে গণপিটুনি দিতে উদ্যত হয়।
পরে থানার ওসির অনুরোধে জনতা তাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেয়। কিন্তু দারোগা মিন্টু দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অপরাধী চক্রের সদস্যদের নিয়ে নিজেই একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। ওই বাহিনীর মাধ্যমে এলাকার মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও চোরাকারবারিদের সঙ্গে সখ্য তৈরি করেন ক্রমে ক্রমে।
গত ৫ই অক্টোবর রাত পৌনে ১২টায় মিন্টু মোল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ মোহাম্মদীয়া খাবার হোটেলে যান।
খাবার দিতে দেরি হওয়ায় রাব্বি (২২) নামে এক হোটেল বয়কে বেদম মারধর করেন। কিন্তু তার ভয়ে হোটেল বয়ের চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পাননি। এক পর্যায়ে দারোগার পা ধরে কান্নাকাটি করে ওই হোটেল বয়। এমনকি হোটেল কর্তৃপক্ষও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু দারোগা মিন্টু মোল্লা হোটেলটি বন্ধ করে দেন।
দেড় ঘণ্টা হোটেল বন্ধ থাকার পর মালিকের কাছ থেকে জোরপূর্বক প্রতি রাতে হোটেল বন্ধ রাখার মুচলেখা রেখে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। হোটেল মালিককে শাসিয়ে দিয়ে বলে আসেন, আইজি বললেও এ নির্দেশ রদ হবে না। এরপর থেকে হোটেল মালিক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দারোগার নির্দেশ অনুযায়ী হোটেল চালাচ্ছেন। এদিকে রাতে হোটেল বন্ধ রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। কারণ হোটেলটি সারারাত খোলা থাকায় রাতের ডিউটি করাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই হোটেলে খাবার খান।
১০ই অক্টোবর রাতে চিটাগাং রোডস্থ ভাণ্ডারি হোটেলে ৬০০ টাকার খাবার খেয়ে ২০০ টাকা দিয়ে চলে আসেন মিন্টু মোল্লা। এরকম ঘটনা মিন্টু মোল্লার নিত্যদিনের বলে জানায় ওই এলাকার খাবার হোটেলের মালিকরা। ৭ই অক্টোবর দুপুরে রসুলবাগ এলাকা থেকে আনোয়ার নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে উৎকোচের বিনিময়ে আধা ঘণ্টা পর ছেড়ে দেন তিনি। ঈদের ৩ দিন আগে গোদনাইল এলাকার মাদক সম্রাট বাক্কুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ পিকঅ্যাপে উঠিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩ ঘণ্টা পর মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেন। এরকম গ্রেপ্তার বাণিজ্য তার নিত্য দিনের ঘটনা।
এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অর্ধশত চোরাই তেলের আস্তানার প্রতিটি থেকে নিয়মিত মাসোহারা বরাদ্দ রয়েছে মিন্টু মোল্লার। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদক আলমগীর, আরিফ, মোহাম্মদ আলী, মজনু, কালী, মাজু বেগম, জাহাঙ্গীর, রুমা, সাহাবুদ্দিন, ফেন্সি জলিল, ডাকাত সরল সহ কমপক্ষে ২০টি বড় মাদক স্পটের ব্যবসায়ীরা তাকে মাসোহারা দিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জের চিহ্নিত ভূমিদস্যু রওশন, মনির, হুমায়ুন, বাদল মেম্বার, আনোয়ার, আহসান উল্লাহদের সহযোগিতা দিয়ে মিন্টু মোল্লা নিরীহ মানুষের জায়গা দখল-বেদখল করান। এর বিনিময়ে পান মোটা অঙ্কের টাকা। তিনি নিজস্ব বাহিনীর সদস্যদের (যারা মূলত সোর্সের কাজ করে) দিয়েও নানা অপকর্ম ঘটান।
এর মধ্যে গভীর রাতে ওই সোর্সের কাছে ওয়ারেন্টের খাতা খুলে দেন। তারা ওয়ারেন্টের বই দেখে আসামিদের নাম-ঠিকানা কাগজে টুকে নেয়। পরে আসামির বাড়িতে গিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। রাতে মিন্টু মোল্লার ডিউটি থাকলে দেখা যায় তার সোর্সদের দাপট।
সূত্রমতে, দারোগা মিন্টু মোল্লা ২০০৮ সালে নবাবগঞ্জ থানায় চাকরি করার সময় বিভিন্ন অপকর্মের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হন।
ওই সময় তাকে পদাবনতি দিয়ে এ.এস.আই করা হয়। তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানাধীন কাটাঘর গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জে পরিচয় দিয়ে বেড়ান তার বাড়ি গোপালগঞ্জ এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাউছার আহমেদ তার বড় ভাই। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে দারোগা মিন্টু মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ সব বিষয়ে আমি কিছু বলতে বাধ্য নই। লিখতে পারবেন কিন্তু আমার কিছুই করতে পারবেন না।
এলাকাবাসী দারোগা মিন্টু মোল্লার সকল অপকর্ম তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দারোগা মিন্টু মোল্লার বক্তব্য
এ ব্যাপারে এস আই মিন্টু মোল্লার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আপনার যা মন চায়, লিখে দেন। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। বেশি কিছু জানতে হলে আমার ওসিকে ফোন দেন। এক প্রশ্নের জবাবে মিন্টু মোল্লা জানান, হোটেলে যা বিল হয়, তা পরিশোধ করি।
তাছাড়া, আমি বেশি কিছু খাই না। আইনশৃঙ্খলার কারণে ওসি একটি হোটেল বন্ধ করে দিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।