আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিদ্ধিরগঞ্জে আরেক ‘এরশাদ শিকদার’ নূর হোসেন

অযথা ঝগড়া বিবাদ ভাল লাগে না। শিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। সু শিক্ষা চাই সর্বত্র।
‘রাত ১২টার দিকে সাদ্বিসা মাজার হয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাত্ ৩টি গাড়ি পথরোধ করে।

হোসেন চেয়ারম্যানসহ ১৪/১৫ জন গাড়ি থেকে নেমে হিংস্র বাঘের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাঠি, হকিস্টিক, রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডের কাউন্সিলর অফিসে নেয়। সেখানে আবার হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এ সময় প্রচুর রক্তক্ষরণে অজ্ঞান হয়ে গেলে অফিসের সামনের রাস্তায় ফেলে দেয়।

ভোরের দিকে এলাকাবাসী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ৭দিন অচেতন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছি। নির্যাতনের নির্মমতায় প্রায় পঙ্গু অবস্থায় ৬ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এরপর আবার মাদক, চুরি, ভাঙচুরসহ ৪টি মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করা হয়। কথাগুলো বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুরের বাসিন্দা ও মুক্তিয়োদ্ধা প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ।

শুধু সালাউদ্দিনই নয়; সিদ্ধিরগঞ্জের অসংখ্য মানুষ হামলার শিকারে পঙ্গু-জখম। মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে। এছাড়া দখল দৌরাত্ম্য ও অতিরিক্ত চাঁদার হারে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, পরিবহন ও শিল্প মালিক। নিত্যদিনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ, ক্ষুব্ধ। কিন্তু প্রতিকার না মেলায় নিশ্চুপ।

আর সবার সামনে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটলেও ‘অভিযোগ-মামলা নেই’ বুলি উড়িয়ে নির্বিকার প্রশাসন। ঠিক যেন খুলনার এরশাদ শিকদারের মতো যিনি সেখানে প্রশাসনের সহযোগিতায় কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। এতসব লঙ্কাকাণ্ড নারায়ণগঞ্জ থানার সিদ্ধিরগঞ্জে। দৈনিক বর্তমানের অনুসন্ধানে মিলেছে এসব তথ্য। স্থানীয় বাসিন্দা, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও প্রশাসন সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের (হোসেন চেয়ারম্যান) নেতৃত্বাধীন ‘কেরামিন, কাতেবিন ও মুনকারনাকির বাহিনী’ এখন সিদ্ধিরগঞ্জের ‘ত্রাস’।

এ বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কারণে ১৯৮৫ সালের ট্রাক হেলপার ‘নূর’ এখন এলাকার ‘আরেক এরশাদ শিকদার’। এরই মধ্যে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আর একসময়ের সাদামাটা ‘নূর’ এখন করছেন বিলাসী জীবনযাপন। দৈনিক ৫০ লাখ টাকা আয়ের টার্গেটে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, অসামাজিক কার্যকলাপসহ অবৈধ সব কাজই করে ‘মহা ক্ষমতাধর’ হোসেন চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নজরুল ইসলাম বর্তমানকে বলেন, কাউন্সিলর নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জের ‘পাপ’।

তার নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জে পতিতালয় হয়েছে। সে দুই মাস ধরে মেলা বসিয়ে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া, মাদক ব্যবসাসহ অসামাজিক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চাঁদাবাজিসহ অবৈধপন্থায় কোটি কোটি টাকা হাতাচ্ছে। আর তা থেকে ভাগ দিচ্ছে প্রশাসনের কর্তাদের। ফলে বিভিন্ন বৈঠকে প্রতিকার চাইলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এতে করে আল্লাহর কাছে বিচার দেয়া আর সাহায্য চাওয়া ছাড়া নিরুপায় ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এখন আর কোনো অবলম্বন নেই। ’ বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন বর্তমানকে বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডে নিঃস্ব হচ্ছে এলাকার মানুষ। সে ৩ জুন আমার মালিকানা ও নির্মাণাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ টাওয়ার থেকে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় জোরপূর্বক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই আমার নিজস্ব তিনতলা কাসসাফ শপিং সেন্টার (জমির ভাগ রয়েছে বলে) জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ভাড়া আদায়সহ মালিকানার সব সুবিধা ভোগ করছে। মামলা করেও তার ‘তদবিরের’ কারণে সুবিচার পাচ্ছি না।

’ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরুল ইসলাম বর্তমানকে বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যান সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্যে আমারও দ্বিমত নেই। তবে, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কেউ দেয় না। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর পুলিশও তাকে সহযোগিতা করে না। পুরো এলাকা চাঁদাবাজিমুক্ত রাখতে তত্পর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

’ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে টেলিফোন করা হলে কাউন্সিলর নূর হোসেন দাবি করেন, ‘উত্থাপিত সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। ’ চাঁদাবাজি, জুয়া, নির্যাতন, দখলসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন। চিত্কার করে এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকেন- ‘গিয়াস এমপি ফকিন্নির পোলা, তার বাবা আমাদের বাড়িতে কামলা খাটছে। তার কাছে চাঁদা চাওয়ার কী আছে। আইয়ুব মুন্সী, সালাউদ্দিন, বাদল, ঈমান, নজরুলরা চোর-বাটপার।

তারা পালিয়ে-লুকিয়ে থাকলে আমি কী করব। বালু, জুয়া, মাদক ব্যবসা সবাই করে; আমি করলে দোষ কী। পুলিশ কনস্টেবলকে মারপিটের বিষয় আমি শুনিইনি। ’ প্রকাশ্যেই চাঁদা আদায়: সংশ্লিষ্টরা জানালেন, হোসেন চেয়ারম্যানের কেরামিন, কাতেবিন ও মুনকারনাকির (কাইল্যা শাজাহান, সানাউল্লাহ সানা ও আলী মোহাম্মদ) বাহিনীর চাঁদাবাজি নারায়ণগঞ্জের একাংশসহ সিদ্ধিরগঞ্জজুড়ে। কাঁচপুর ব্রিজের পার্শ্ববর্তী এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যান গত ২ বছর অব্যাহতভাবে চাঁদা নিচ্ছে।

আগে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা নিলেও এবার ঈদ উপলক্ষে জোরপূর্বক ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ থাকায় চাঁদার অত্যাচার সহ্য করছি। ওই ব্যবসায়ী জানান, এই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত পাঁচ শতাধিক বৃহত্ ও সহস্রাধিক ছোট শিল্প মালিকদের প্রত্যেকেই মোটা অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে ব্যবসা করছে। এছাড়া ফুটপাতের অন্তত ২ হাজার ব্যবসায়ী দিনে গড়ে ৩শ টাকা করে চাঁদা গুণছে। সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলের চুন ব্যবসায়ীরা জানালেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এখানকার ৪০ কারখানার প্রতিটি থেকে এক লাখ টাকা করে চাঁদা তুলেছে হোসেন চেয়ারম্যানের দুর্বৃত্তরা।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিমণ চুন থেকে ৩০ টাকা হারে চাঁদা নিচ্ছে। মণের হিসাব প্রসঙ্গে বললেন, চেয়ারম্যানের নিয়োগকৃত ২ যুবক একেকটি দোকান থেকে কত ট্রাক চুন বিক্রি হয় তার হিসাব রেখে দিনশেষে চাঁদার মোট টাকা নিয়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন এবং বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি সূত্রের দাবি, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চলাচলকারী দুই হাজার বাসের প্রতিটির বিপরীতে (৫৬টি কাউন্টার থেকে) দিনে ৫০০ টাকা এবং শিমরাইল স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যাওয়া অন্তত ৫০০ ট্রাকের প্রতিটি থেকে দিনে ৬০০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হয়। গত সপ্তাহে আদমজী ইপিজেড কারখানার থেকে ৪০ লাখ টাকায় পুরনো পণ্য কিনে ব্যবসায়ী মুনছুর সাভার নিতে গেলে তা আটকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, অপরাধ সংগঠিত, চাঁদা আদায় এবং এ সংক্রান্ত সব কাজ তদারকির জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলে অফিস বসিয়েছে হোসেন চেয়ারম্যানের বাহিনী।

বেপরোয়া বালু উত্তোলন, জমজমাট পাথর ব্যবসা: ঈদের আগের সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, কাচপুর ব্রিজের নিচ দিয়ে বহমান শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলছে ‘জজ এন্টার প্রাইজ’ (হোসেন চেয়ারম্যানের আপন ছোট ভাইয়ের নামের প্রতিষ্ঠান)। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এই বালু ব্যবসা থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় হোসেন চেয়ারম্যানের। এছাড়া ব্রিজের নিচে অব্যাহত চলা শক্তিশালী পাথর ভাঙানো মেশিন মালিকদের (৩৫ গদি) প্রত্যেকের থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেয় হোসেন চেয়ারম্যান। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি, ট্রানজিট শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ড: সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার উত্তরে শিমরাইল আন্তঃজেলা ট্রাক টার্মিনাল। পূর্বাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী সব মাদক পরিবহনই এই টার্মিনালকে নিরাপদ ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

প্রতিদিন হাতবদল হওয়া অন্তত ১০ ট্রাকের প্রতিটির বিপরীতে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত (মাদকের ধরন ও দাম অনুপাতে) চাঁদা নেয় নূর। সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রাক টার্মিনালে, কাউন্সিলরের অফিসের পেছনে (সাবেক জিহাদ হোটেল), টেকপাড়া, ডেমরা আদমজী রোডে ফজলুর রহমান ও আজিম উদ্দিন পেট্রোল পাম্পের পেছনে প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, মদ, বেয়ারসহ সব ধরনের মাদক। এসব মাদক ব্যবসার মালিকানা সরাসরি হোসেন চেয়ারম্যানের। যা তদারকি করেন আজাহার, সানাউল্লাহ, আলী মোহাম্মদ ও তারসিল। মাদক বিক্রির লাভ থেকে দিনে অন্তত ৫ লাখ টাকা পকেটস্থ করেন নূর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কাউন্সিলর অফিসকেই মাদকের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য অফিসের পেছনের দিকে রাখা হয়েছে গোপন স্টিলের দরজা। যা দিয়ে মাদক আনানেয়া হয়। আয়ের উত্স মিনি পতিতালয়েও: এলাকাবাসী জানান, শীতলক্ষ্যা হাউজিং এলাকায় গোধুলী সিনেমা হলের পূর্বদিকে রয়েছে পৃথক দুটি মিনি পতিতালয়। যা পরিচালনা করছে হোসেন চেয়ারম্যানের সহযোগী শিপন, শাজাহান ও মামুন।

এছাড়া ট্রাক স্ট্যান্ডের পাশের প্যারাডাইস ও সুন্দরবন হোটেলও পতিতালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ হোটেল দুটি পরিচালনা করছে হোসেন চেয়ারম্যানের ভাতিজা ও ৩ নং ওয়ার্ড় কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। এসব পতিতালয় থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা যায় হোসেন চেয়ারম্যানের কাছে। হামলায় পঙ্গু, মামলায় এলাকাছাড়া: অনুসন্ধানে জানা যায়, হোসেন চেয়ারম্যানের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থানসহ প্রতিবাদ করায় এরই মধ্যে হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী এবং ব্যবসায়ীরা। হোসেন চেয়ারম্যানের বাহিনী অসংখ্য মানুষকে ফিল্মি স্টাইলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ও রাস্তায় ধরে হাত-পা গুঁড়িয়ে জখম-পঙ্গু করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

যাদের অনেকেই এখন বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে। শিমড়াইল গ্রামের বাসিন্দা ও চিটাগাং রোডের এ রহমান সুপার মার্কেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আইয়ুব আলী সুপার মার্কেটের মালিক আইয়ুব আলী মুন্সীকে পিটিয়ে জাল টাকার মিথ্যা মামলা দেয়। এরপর রাজনৈতিক, গাড়ি ভাঙচুর, মাদক, সন্ত্রাসীসহ ২১টি মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করে। টেলিফোনে জানতে চাইলে আইয়ুব মুন্সী বর্তমানকে বলেন, হোসেন চেয়ারম্যান সিদ্ধিরগঞ্জের গডফাদার। মোটা অঙ্কের উেকাচ পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোসেনের কথায় উঠে-বসে।

আমি ২০ লাখ টাকা চাঁদা দেয়নি বলে আমার আইয়ুব আলী সুপার মার্কেট ৪ বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া হোসেন চেয়ারম্যানের নির্দেশে অবৈধভাবে ট্রাক স্ট্যান্ড করা হয়েছে রহমান সুপার মার্কেটের সামনে। এতে করে ক্রেতারা দোকানে ঢুকতে না পারায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে মার্কেটটি। এ বিষয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ দিলে টিএনও’র নেতৃত্বে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি সরেজমিন দেখে দ্রুত ট্রাক না সরালে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হওয়ায় প্রতিকার মেলেনি আজও।

আইয়ুব মুন্সীর ভাতিজা হাসান পারভেজকেও প্রায় ১ বছর আগে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে পঙ্গু করা হয়। পরে দেয়া হয় ৮টি মিথ্যা মামলা। এখন হাসানও এলাকাছাড়া। সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুরের বিএনপি কর্মী রবিনহুড সালাউদ্দিনকে গত ৬ মাস আগে ডেসা অফিসে ধরে জখম করে মাদক, চুরির ৩টি মামলা দিয়ে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়। শিমরাইল গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ঈমান আলীকে ৪ মাস আগে জখম করে ৮টি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলামকেও ৩ মাস আগে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ৫টি সাজানো মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করা হয়।

চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠখ্যাত ঠিকাদার হযরতকে ঈদের আগের সপ্তাহে সড়ক ও জনপদ অফিসের ভেতরে এবং সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াপুরের সেলিমকে ৩ মাস আগে পিটিয়ে জখম করা হয়। টাকার ভাগবাটোয়ারায় মনোমানিল্য হওয়ায় এ দুটি ঘটনা ঘটে। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যানের অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করায় গত ডিসেম্বরে আমাকে আটকে পুলিশকে দিয়ে অস্ত্র মামলায় আসামি করার পাঁয়তারা করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীরা থানা ঘেরাও করলে পুলিশ আমাকে ছাড়তে বাধ্য হয়। ’ সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি ও থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইমাম হোসেন বাদল বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলা আর নিজের গায়ে আগুন দেয়া একই কথা।

’ বাদল জানান, তার অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করাই আমাকে নির্যাতনের পরিকল্পনা নেয়। ব্যর্থ হয়ে ৮টি মিথ্যা মামলা দেয়। যা থেকে হাইকোর্ট আমাকে জামিন দিয়েছে। কিন্তু এখন তাঁর বাহিনী আমাকে জখম করতে খুঁজছে। ফলে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।

’ ভিভিআইপি স্টাইলে চলাফেরা, বাধায় পুলিশ জখম: কাউন্সিলর নুর হোসেন লেখাপড়া না জানলেও চলেন ভিভিআইপি স্টাইলে। চলাচলের সময় সামনে-পেছনে রাখেন অন্তত ১০টি গাড়িবহর। পথে রাখেন নিজস্ব পাহারাদার। যারা যানজট এড়াতে সাধারণদের চলাচল বন্ধ করে রাস্তা ফাঁকা রাখেন। পুলিশ সূত্র জানায়, হোসেন চেয়ারম্যান বের হবে- এজন্য ২৪ জুলাই দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে তার বাহিনী।

এ সময় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশে আড়াইহাজারে যাচ্ছিল নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের একটি দল। দীর্ঘক্ষণ কাঠফাটা রোদে আটকে থেকে অতিষ্ঠ কনস্টেবল ইন্দ্রজিত্ প্রতিবাদ করে গাড়ি ছাড়তে বললে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ইন্দ্রজিেক পিটিয়ে মাথা (৬টি সেলাই দিতে হয়েছে) ফাটিয়ে দেয় হোসেন বাহিনীর সদস্যরা। গুরুতর অবস্থায় ইন্দ্রজিেক প্রথমে সাজেদা হাসপাতালে পরে অবস্থার অবনতি হলে খানপুরের ২০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাতেই সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সোহেলকে গ্রেফতার করা হলেও অন্য আসামিরা পুলিশের সামনেই ঘুরছে ।

ট্রাক হেলপার থেকে শত কোটি টাকার মালিক: ১৯৮৫ সালেও ট্রাক ড্রাইভার ‘ফরহাদ ওস্তাদ’র হেলপার ছিলেন কাউন্সিলর নূর হোসেন। এরপর ‘মান্নান কন্ট্রাক্টর’র ট্রাকে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি নেন। ১৯৮৭ সালে বদরুদ্দিন (হোসেনের বাবা) একটি পুরনো ট্রাক কিনলে (ঢাকা-১৯৭৫) তার ড্রাইভার হন নূর। ট্রাক চালানোর সময়ে অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে জড়ান তিনি। ১৯৯১ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

বাড়ে অপরাধ তত্পরতা। ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমান এমপি ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন নূর। অবৈধ কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ করেন এলাকাবাসীকে। ফলে ২০০১ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হলে গোপনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। ফিরে আসেন বর্তমান সরকারের ক্ষমতা নেয়ার পর।

এবার বীরদর্পে সংঘটিত করতে থাকেন অপরাধ কর্মকাণ্ড। এখন সিদ্ধিরগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের একাংশের অপরাধ জগত্ নিয়ন্ত্রণ করছেন। অবৈধ আয়ে এরইমধ্যে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দাম্ভিক হোসেনের বিরুদ্ধে ১৮ মামলা, নীরব পুলিশ: নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা মড়েল থানা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক, মাদক, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন ধারায় ১৮টি মামলা রয়েছে। আলী হোসেন (১৯৯৬ সালে) হত্যাসহ ৯টি মামলায় খালাস পেয়েছেন।

অবিশিষ্টগুলোর জামিনে রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলা থাকলেও পুলিশসহ কেউ কিছু করতে পারে না এবং টাকার বিনিময়ে সব অপরাধ ম্যানেজ হয় বলে নিজেকে অনেক বড় আর দাম্ভিক মনে করেন হোসেন। চাঁদার ভাগ ১৮০ খামে: হোসেন চেয়ারম্যান তার অবৈধ আয়ের ভাগ প্রতি মাসে উেকাচ হিসেবে ১৮০টি খামে করে (একেকটিতে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত) পাঠানো হয়। যা যায় ক্ষমতাধর এক উপদেষ্টা, সরকারের শীর্ষ কার্যালয়, আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা, ডিসি, এসপি, র্যাব, ওসিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্য এবং বিআইডব্লিউটিএ ও সওজের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বর্তমানকে বলেন, ‘হোসেন চেয়ারম্যানের কার্যক্রম নিয়ে কেউ অভিযোগ করে না; তাই কোনো পদক্ষেপও নেয়া যায় না।

আর মিথ্যা মামলা হলেও তা আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে। ’ সূত্র- দৈনিক বর্তমান
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.