বাস্তবতা-১
বুয়েটের আশেপাশের একটি গালর্স কলেজ। এখানে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিছুদিন আগে একজন ছাত্রী তার বয়ফ্রেন্ড কে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠানোর সময় শিক্ষকের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়ে। তারপর........ ঐ স্কুলেরই ক্লাস সিক্সের এক ছাত্রী টিচারকে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে বলে- স্যার আই লাভ ইউ। শুনে টিচারের গায়ে জ্বড়ের পরিমান ১০২০।
বাস্তবতা-২
এবার ইন্টার দিলো এরকম এক ম্যাডাম পড়ায় নার্সারীর এক বাবুকে। পড়ানোর ৪র্থ দিন সেই বাবু তার প্যান্টের জিপার খুলে বলে ম্যাডাম এটা কী জানেন? এর আগে ২য় দিন বলে ম্যাডাম আপনি আমার আপুর ম্যাডামের চেয়ে সুন্দর।
এগুলো বাস্তব খন্ডচিত্র। বর্তমানে দেখা যায় ক্লাস থ্রি বা ফোরের মেয়ে মার মত জিনিস না হলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ। এরকম আরও কিছু অসঙ্গতি পরিবারগুলোতে চোখে পড়ে।
ক্লাস সিক্স-সেভেনের ছেলেরা স্কুলের ছাদে ধুমছে গাজা টানছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এদের ভদ্র-রুচিশীল, নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব কাদের??
আজকে যে এর-ওর নগ্ন ভিডিও চিত্র নিয়ে ব্লাকমেইল করা হচ্ছে, পরিণতিতে মা-বাবার কাছে মুখ দেখানোর ভয়ে করছে আত্মহত্যা এর দায়ভার কে নেবে?? এই ভয়, এই লজ্জাগুলো আগে থেকে কেন জাগ্রত হয় না??
আমি মনে করি এর সিংহভাগ দায়ভার তার বাবা-মার। পরিবেশ খারাপ করে, ভাল করে মানি। কোন পরিবেশ কেমন, এক এক পরিবেশের সুফল-কুফল সম্বন্ধে শিক্ষা তো বাচ্চারা পরিবার থেকে পাবে।
চরিত্রহীন বলতে যে শুধু লাম্পট্যকে বোঝা যায় না- মিথ্যা কথা বলা, ঘুষ খাওয়া, দূর্নীতি করা, মানুষ ঠকানো এদেরকেও চরিত্রহীন বলে এ শিক্ষা তো পরিবার তথা বাবা-মা দিবে।
...........................................................
এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আলোকপাত করছি। বর্তমানে একটি পরিবারকে ব্লাকমেইল করার নতুন পন্থা হলো- পরিবারের মেয়েটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে। তারপর অশ্লীল সম্পর্ক স্থাপনের পর সেই ভিডিও চিত্র নিয়ে বাজারে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী। পরিণতি সেই মেয়েটির আত্মহত্যা। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা।
স্বামীর যৌতুকের জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যা।
আত্মহত্যা কখনোই কোনো সমাধান নয়। আবেগের চাপ যত বেশিই হোক না কেন, তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নিজের জন্যই। বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও শিক্ষার্থী উপদেষ্টা আকিব উল হক। তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যা রোধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার।
বন্ধন যত শক্ত হবে, আত্মহত্যার হারও তত কমবে। মনের চাপ থেকে সৃষ্ট আত্মহত্যার প্রবণতা এড়াতে আকিব উল হকের পরামর্শ হলো—
** অভিভাবকেরা সন্তানের জীবনের খাতিরে বন্ধুত্বপূর্ণ হোন। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, জানতে চান বন্ধুর মতো, হাসিমুখে।
** সন্তানের প্রতি মনোযোগ দিন, নিজ থেকে কথা বলুন, কুশল জিজ্ঞেস করুন, ভুলগুলো শুধরে দিন কোমলভাবে, যেন সে ভুল থেকে শিক্ষাটা গ্রহণ করে, হতাশা নয়।
** ছোট ছোট সাফল্যে নিজেই নিজেকে অভিনন্দিত করুন।
নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে ভাবুন।
** নিজেকে সামলানো অসম্ভব হলে কথা বলুন মন খুলে। আলোচনা করুন। চাপটা হালকা হয়ে যাবে।
** পড়ুন, যত বেশি পড়তে পারেন।
গল্প, উপন্যাস, কবিতা কিংবা পত্রপত্রিকা।
** নিজের জীবনের একটি লক্ষ্য ঠিক করে রাখুন। সেই লক্ষ্যটিকে ভালোবাসুন। আবেগের চাপেও লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে সরে আসবেন না—এ মনোভাব ধরে রাখুন।
**নিজেকে ভালোবাসুন, সবচেয়ে বেশি সম্মান দিন।
অন্যের কথায় নয়, নিজের ভালো কাজগুলো দিয়ে নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করার অভ্যাস করুন।
** কোনো কিছুতেই সফল না হলে মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নিন। তবু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন, পরিবারের জন্য হলেও।
ইডেনের ছাত্রী টুম্পার শেষ লেখা দিয়েই শেষ করি। টুম্পা লিখেছিলেন, ‘কেউ অপরাধ করে শাস্তি পায়।
আর কেউ না করে। আমি কি অপরাধ করে শাস্তি পেলাম? না অপরাধ করেই এত বড় শাস্তি পেলাম?’
ভালোবাসা অবশ্যই কোনো অপরাধ নয়। একজনের ভালোবাসা হারিয়ে মা, বাবা কিংবা বন্ধুবান্ধবের ভালোবাসা ভুলে আত্মহত্যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আপনি বাঁচলেই হাজার টুম্পাকে বাঁচাতে পারবেন।
আপনাকে দিয়েই শুরু হোক টুম্পাদের নতুন জীবন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।