স্বার্থপরতার নাম যদি হয় চালাকি - থাকতে চাই বোকা, করতে চাই বোকামি। “বোকামন” কখনো বৃদ্ধ, কখনো শিশু আবার কখনো যুবক .... (আমি বোকামনের হয়ে লিখছি ! তাই সাহিত্যের শিল্পগুন-মান হীন পোস্টগুলোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী)
দু:খ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লিখতে বসলাম, কি লিখবো কিভাবে লিখবো বুঝতে পারছিনা । স্বার্থপরের মত শুধু মনকে দু:খী করতে পারি । যখন এই লেখা লিখছি তখন কত ঘড়ে চলছে শোকের মাতম। অন্য ধর্মের মানুষদের বলা হয় সংখ্যালঘু, শব্দের মানে বুঝিনা আমি জানি ওরাও আমার ভাই-বোন যাদের ভিটা মাটি পুড়ে ছার-খার হয়ে গেল ।
খোলা আকাশের নিচে ক্ষুধার্ত পেটে দিন কাটাচ্ছে । গরীব এই দেশের জনগণের টাকায় কেনা সরকারী সম্পত্তি আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে । দিন মজুর কাজে না যেতে পেরে পরিবারসহ না খেয়ে হয়তো দিন যাপন করছে - আমি লিখছি। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমার দেশের পতাকা ছিন্ন-ভিন্ন হয়েছে, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শহীদমিনার ভেঙে চুরমার হচ্ছে – আমি লিখছি । আমার জীবন বিধান নিয়ে উপহাস করা হয়, যাকে আমি আমার প্রাণের চাইতেও বেশী ভালোবাসি তাকে নিয়ে কুটক্তি করা হয়, আমি লিখছি ।
আর কি করতে পারি আমি ! আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয় আমার চোয়াল শক্ত হয় তবুও আমি লিখছি । কার উদ্দেশ্যে লিখছি জানি না …………
বর্তমান পরিস্থিতি এবং অতীত কর্মকাণ্ড কমবেশি সবাই জানেন । বিষয়গুলো রাজনৈতিক, এগুলো নিয়ে খুব বেশী এখন লিখতে চাচ্ছি না । আর লিখতে গেলেও সেই রাজনৈতিক দ্বিমতে লেখার মূল ভাব প্রকাশ ব্যাহত হবে । কারণ আমরা কেমন করে জানি আমাদের রক্তে রাজনৈতিক মতবাদ ধারণ করি ।
সেটা কখনো কখনো আমাদের মস্তিষ্কের কোন একটি অংশ বদ্ধ বা অকার্যকর করে দেয়; আশ্চর্য। আমরা অভ্যাসের দাস হয়ে যাই, অভ্যাস আমাদের দাস হয় না । যাই হোক, ৪২ বছর ধরে আমরা জাতি হিসেবে, জাতির একটি কলঙ্ক মোচনের জন্য রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি হউক এই কামনা করে আসছি । আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন, বাবা-ভাই হত্যার শাস্তি আমরা চাই । আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের আত্মার শান্তি, আমার মা-বোনের ইজ্জতের সম্মানে, আমার দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে, আইনের শাসন বাস্তবায়নে এই বিচার হওয়া শুধু জরুরীই নয় বরং ফরয ।
এই বিচারের মাধ্যমে আমরা অন্যায়কারীদের বুঝিয়ে দিতে পারবো অন্যায়ের বিচার করতেই হয় । তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য বিষয়টি ৪২ বছরে বেশ জটিল হয়ে গিয়েছে । অনেক রাজাকার এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে । আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অবহেলা, ভোটের রাজনীতি এবং রাজনীতিতে ধর্মের পোশাক ব্যবহার ইত্যাদি রাজাকারদের এই বিচার থেকে চল্লিশ বছর যাবত বাঁচিয়ে রেখেছে । এই সুযোগে তারা নিজেদের গড়ে তুলেছে আরও বেশী শক্তিশালী করে, নিজেদের দিয়েছে রাজনৈতিক রূপ, তরুণ প্রজন্মকে ধার্মিকতার আড়ালে দলে ভিড়িয়েছে, সমাজের প্রত্যেক স্তরে তাদের ছড়িয়ে দিয়েছে ।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশাল সাম্রাজ্যের ভিত স্থাপন করতে সফল হয়েছে । তারা হয়তো জানতো এই বাংলার বুকে তাদের একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে । তখন সেই বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তাদের ৩০ বছরে তৈরি করা অস্ত্রভাণ্ডার ব্যবহার করা হবে, যার ফলাফল এখন আমাদের চোখের সামনে ।
যাইহোক, এই বিষয়ে বর্তমান সরকার এবং বিরোধী দলের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু বলতে চাচ্ছি না । কারণ তাদের কমবেশি ভূমিকাই যেমন রাজাকারদের সুবিধা করে দিয়েছে, ঠিক তেমনই তাদের সম্মিলিত একটি উদ্যোগ এই বিচারকার্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করে সবোর্চ্চ শাস্তি দিতে পারে ।
রাজাকাররা ত্রিশ বছরে তাদের যে বটগাছ বড় করেছে তা উপড়াতে গেলে এর শিকড় কোথায় কোথায় বিস্তৃত হয়ে গেছে তা সম্পর্কে সঠিক ধারনা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন ছিল । এই বিষয়ে সরকার পুরোপুরি সফল হতে পারেনি । সরকার যদি মনে করে সে একাই এই বিচারকার্যটি সম্পন্ন করতে পারবে তবে তা ভুল হবে । একইভাবে বিরোধীদল বিরোধিতার খাতিরে এবং ভোটের হিসাব কষে যদি বিচারকার্য সম্পন্ন করতে সহযোগিতা না করে, তবে এর পরিণাম ভালো হবে না বলে ধারনা করা যায় । কারণ রাজাকারদের দলটি দুই রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করেছে না তারা নিজেরাই ব্যবহৃত হয়েছে তা ভেবে দেখার সময় এখনোই ।
আরেকটি বিষয়, যে তরুণ প্রজন্ম রাজাকারদের কুটচালে আজ তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে । নিশ্চয়ই তাদের মাঝে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক মতবাদ নিষিদ্ধ করা গেলেও তা হত্যা করা সম্ভব হবে না । তাদের সত্যের পথে আহ্বান করতে হবে । একই সাথে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা, এবং ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার বানী এবং মতবাদ ছড়িয়ে দিতে হবে । রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার হবে তবে তা ব্যক্তিগত , চরিত্রগত এবং আদর্শের মাপকাঠিতে ।
ধর্মকে সাইনবোর্ড হিসেবে নয় বরং নেতার নীতি আদর্শের মাঝে প্রকাশ পাবে ধর্মের মতবাদ । আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) আগে নিজেকে একজন সত্যবাদী হিসেবে গড়ে তুলেছেন তারপর ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু করেছেন । এই বিষয়টি থেকে অনেক কিছু বুঝার আছে ।
সরকার অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য তারা নির্বাচনী ইশতিহারে বিষয়টি নিয়ে এসেছেন । তবে এই বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য আরও অনেক বেশী প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল ।
প্রয়োজন ছিল ব্যাপক গন সংযোগ । বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এই জনসংখ্যার বেশীর ভাগই গ্রামে বসবাস করে । যেখানে সবাই ফেসবুক, ব্লগ ব্যবহার করে না । তারা রাজনৈতিক অনেক কুটচালই বুঝতে সক্ষম থাকে না।
তারা ধর্মভীরু, ধর্মপ্রাণ। যেহেতু রাজাকারদের অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে ধর্মের অপব্যবহার । তারা এই সকল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে অপপ্রচার করে এবং গুজব ছড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করবে । যা যেকোনো সরকারের জন্য বিবব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে । আমরা এখন তাই দেখতে পারছি ।
এই বিষয়ে সরকারের সকল ইসলামিক দলের সাথে বসে তাদের সচেতন করতে হবে । একই সাথে যারা ধর্মকে কুসিৎতভাবে আঘাত করে কোন কর্মকাণ্ড করে সে যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে । সাইবার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপপ্রচার বন্ধে এই বিষয়ে যোগ্য ও মেধাবী লোকবল নিয়োগ করতে হবে । সরকারের প্রত্যেক এমপি কে তার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে স্থানীয় কর্মী সমর্থক ব্যবহার করে প্রত্যেক এলাকায় জনসংযোগ করতে হবে । বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং ধর্মীয় উপসানলয়গুলো থেকে সচেতনতার কাজ পরিচালনা করতে হবে ।
বিশেষ করে মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম-শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির কাজটি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে । মনে রাখতে হবে সমস্যা ধামাচাপা না দিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে এবং সমস্যার কারণ খুঁজে বের করে তার মূল উৎপাটন করার মাধ্যমেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন সম্ভব । সর্বোপরি সরকারের জন্য এ বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করাই উত্তম হবে । এ জন্য বিরোধীদল কে অবশ্যই কাছে টানতে হবে ।
প্রধান বিরোধীদল অবশ্যই সরকারের বিভিন্ন কাজের বিরোধিতা সমালোচনা করবে ।
তবে দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে সার্বভৈামত্ব রক্ষায় সরকারের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত । সর্বক্ষেত্রেই বিরোধিতা কাম্য নয় । মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষমতা দখলে স্বার্তে, আমাদের মত দেশগুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতাকে তারা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে । তাই অন্তত দেশ কে বাচাতে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের প্রয়োজন একান্ত । এমন কোন উগ্রতাকে আশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না যা নিজ অস্তিত্ব কে বিন্যাস করতে পারে ।
আপনাদের নিশ্চয়ই জেএমবির উত্থান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত । এই দেশ থাকলে জনগণ থাকবে জনগণ থাকলে আপনার থাকবেন । জনগণ আপনাদের কাছ থেকে একটুকু তো আশা করতেই পারে ।
“এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা আমরা তোমাদের ভুলবো না ………”
আমরা ভুলবো না, কিন্তু ভুলে যাচ্ছি । হিসাব করতে ভুলে গেছি এক সাগর রক্তের মূল্য কত ।
দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এগুলো কি ? মাথায় পতাকা বেধে কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বা একটি দিন সরকারী ছুটি বা শোক দিবস পালন করেই কি দেশপ্রেমের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় ! আমরা বলি দেশকে কে ভালোবাসি কিন্তু এই দেশ বলতে আমারা কি বুঝি ? এই গরীব দেশের অধিকাংশই খেটে খাওয়া নিতান্তই দরিদ্র ঘরের সন্তান, যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় । সখ দুরের কথা প্রয়োজন পূরণ হয় না । আমরা হয়তো তাত্ত্বিক সংজ্ঞার দেশপ্রেম বুঝি না । তবে আমার আশেপাশের মানুষকে খুব ভালোবাসি, সুখে-দুখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি । আমার ধর্ম আমি পালন করি, তাদের ধর্ম পালনেও সহযোগিতা করি এরই মাঝে আমার ধর্মতত্ত্বের দাওয়াত তাদের দেওয়ার চেষ্টা করি ।
কারো উপকার করতে না পারলেও ক্ষতি করার মত কোন ইচ্ছা পোষন করি না । দু:খ-দুর্দশা, হতাশা দারিদ্রতা ইত্যাদির মাঝে দেশ নিয়ে সবসময় ভাবার সময় পাই না । তবে কোথায় যেন নাড়ির টান খুঁজে পাই । আমার মায়ের মতই এই দেশের মাটির মাঝেও এক অকৃত্রিম মমতার পরশ পাই । মা মাটি মাতৃভূমির মাঝে আমরা আমাদের দেশের অস্তিত্ব খুঁজে পাই ।
আর এই অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের পূর্বপুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কোন কিছুর পরোয়া না করেই । আমরা সাধারণ জনগণ এই দেশকে মায়ের মতই ভালোবাসি। আমাদের এই ভালোবাসায় কোন খাদ নেই, কোন রাজনীতি নেই, নেই লোক দেখানো কোন কিছুর আবশ্যকীয়তা । আমরা বরাবরের মতই আমাদের দেশকে রক্ষার নিজের জান বাজি ধরতে জানি । আমরা সেইসকল মুক্তিযুদ্ধাদের রক্তের উত্তরসূরি যারা ব্যক্তিগত কিছু পাওয়ার জন্য নয়, কিছু হবার জন্য নয় শুধুমাত্র মায়ের সম্মান বোনের সম্ভ্রম বাচাতে, সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অধিকার আদায়ে, মাতৃভুমি জন্য একটি পতাকার জন্য প্রাণ দিতে কুণ্ঠা বোধ করে নাই ।
তাদের শেষ ইচ্ছা ছিল একটি সোনার বাংলা যেখানে সুখে-শান্তিতে সবাই বসবাস করবে । যার যার ধর্ম সে পালন করবে প্রচার করবে । দেশ হবে এক জনের কাছে অন্য………
এই দেশ কে এই মা কে রক্ষায় তার সন্তানদেরই এগিয়ে আসতে হয় ।
তাই এই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সকল সন্তানের কাছে আমার আকুল আবেদন………… আমাদের এই দেশমাতৃকাকে বাচাতে সবাই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন………………………………
(বশী লিখে ফেললাম হয়তো, তবুও দেশের অরাজক পরিস্থিতি আমাকে ভীত করে তুলে কথায় আছে না ঘর-পোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়)
© একটি বোকামন ভাবনা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।