জানি না
হয়তো কোনো এক কাকডাকা স্নিগ্ধ ভোরে আপনি টিভিতে খবর দেখছিলেন এবং চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। দেখলেন একটি তেলবাহী জাহাজ ফুটো হয়ে পড়েছে এবং ৫ হাজার ব্যারেল তেল ছড়িয়ে পড়েছে গালফ অব মেক্সিকোতে, যা সরিয়ে ফেলতে এসেছে স্কিমিং বোটগুলো। এর মাধ্যমে ৫ হাজার ব্যারেলের মাত্র শতকরা তিন ভাগ তেল উদ্ধার করা গেছে, তাও সম্ভব শুধু দক্ষ জনবলের মাধ্যমে। কিন্তু আগামী বছর হয়তো এই খবরের চিত্রটি আপনার কাছে অন্যরকমভাবে চিত্রিত হতে পারে বিশ্বের ১ নম্বর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ‘এমআইটি’-র একদল গবেষকের আবিষ্কৃত এক ধরনের রোবট ‘সি-সোয়ার্ম’-এর কল্যাণে।
গত ২৯ আগস্ট ‘ভেনিস বাইএনিয়্যাল অব আর্কিটেকচার’-এ প্রায় ২০ হাজার ইউএস ডলার দামি এই রোবটটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসা হয়।
গবেষকদল আশা প্রকাশ করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হবে।
এমআইটি’র ‘সেন্সেবল সিটি ল্যাব’-এ ‘কার্লো রাত্তি’ এবং তার দল এই ‘সি-সোয়ার্ম’ রোবটটি আবিষ্কার করেছেন। রোবটটির গঠন বেশ অদ্ভুত, দেখে মনে হয় যেন কনভেয়র বেল্ট এঁটে দেয়া হয়েছে এক আইস কুলারের মধ্যে। এই কনভেয়র বেল্টটি মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর রোবটটিকে ভেসে থাকতে, নড়াচড়া করতে সাহায্য করে এবং এর মধ্যে অবস্থিত ন্যানোমেটারিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি তেলকে আকর্ষণ করে পানি থেকে আলাদা করে ফেলে।
‘সি-সোয়ার্ম’-এর ব্যাপারে সেন্সেবল সিটি ল্যাবের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ‘বিডারম্যান’-এর বক্তব্য হলো, এই রোবটটিকে আপনারা এভাবে কল্পনা করতে পারেন—এটা এক ধরনের কার্পেট পরিষ্কার করার মেশিন যা কার্পেটের ওপর দিয়ে চলতে থাকে এবং কার্পেটের মধ্যে থাকা ময়লাগুলো বের করে ফেলে।
এই রোবটটির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারে, অর্থাত্ অনেকগুলো রোবট একসঙ্গে কাজ করতে পারে ঠিক মৌমাছি অথবা পিঁপড়ার মতো। একটি দলে হাজার হাজার রোবটও থাকতে পারে। এরা একসঙ্গে কাজ করবে এদের মধ্যস্থিত ‘জিপিএস লোকেশন ডাটা’র মাধ্যমে, যা তাদের তেল পৃথকীকরণ কাজকে অনেক সহজ করে দেবে।
রোবটটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এটি পানি থেকে আলাদা করে ফেলা তেলকে সঙ্গে সঙ্গেই পুড়িয়ে ফেলতে পারে হিটারের মাধ্যমে, যা রোবটটির আইস কুলারের মধ্যে অবস্থিত। অথবা না পুড়িয়ে তেলকে আবারও পানিতে ফেলে দিতে পারে পরে আলাদা করার জন্য।
বিডারম্যান বলেন, এই রোবট অপেক্ষাকৃত কমদামি, খুব দ্রুত কাজ করতে সক্ষম এবং তেল পৃথকীকরণ কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী।
‘সি-সোয়ার্ম’ রোবটটির প্রধান শক্তির উত্স হবে ‘সৌরশক্তি’ এবং মাত্র ১০০ ওয়াট শক্তি রোবটটিকে সমুদ্রে মাসের পর মাস কাজ করে যেতে সাহায্য করবে।
রোবটের কনভেয়র বেল্টটিকেও এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে গবেষকদের মতে, এটা সমুদ্রের পানিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে যার ফলে এটি উল্টে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ধরে নিতে পারেন এটি একটি পাতা, যা প্রতিকুল আবহাওয়ার মাঝেও নিজেকে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে দৃঢ়ভাবে সেঁটে রাখতে সক্ষম হবে এবং ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে নড়াচড়া করতে পারবে। ’
বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যে প্রক্রিয়ায় তেল আলাদা করা হয়, ‘স্কিমিং বোট’ দিয়ে যা বড় বড় জাহাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং মানুষের মাধ্যমে পরিচালিত হয় যা এই প্রক্রিয়ার খরচ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
আর তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি প্রতিকূল আবহাওয়ায় চালানো অসম্ভব। কিন্তু ‘সি-সোয়ার্ম’-এর ব্যবহার এই প্রক্রিয়ার খরচ অনেক কমিয়ে দেবে।
গত এপ্রিলে ঘটে যাওয়া তেলজনিত দুর্ঘটনায় প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সে কাজে প্রায় ৮০০টি স্কিমিং বোট লেগেছিল। সেক্ষেত্রে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ ‘সি-সোয়ার্ম’ রোবট দিয়ে কাজটি সহজেই সম্পাদন করা যেত বিডারম্যানের মতে।
বিডারম্যান আরও বলেন, সি-সোয়ার্মের ব্যাপারে এমআইটি তার গবেষণা আরও চালিয়ে যাবে এবং আগামী এক বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে এর উত্পাদন শুরু করে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেবে বলে তিনি আশা করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।