দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
আজ আনন্দ হলে দেখতে গিয়ে ছিলাম ঈদের আরো একটি সিনেমা মাই নেম ইজ খান। এর আগে ঈদের দিনই দেখেছি অন্য একটি ছবি নিঃস্বার্থ ভালবাসা। বাকী আছে ভালবাসা আজকাল। ঈদের তিনটা ছবিই দেখার ইচ্ছে ছিল, আগামী দু'এক দিনের মধ্যে দেখে ফেলবো সেটিও।
আমি নিজেকে সিনেমার লোক মনে করি। এখনো প্রামাণ্যচিত্র বানালেও আমার শেষ গন্তব্য পূর্ণ দৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণ। বাংলাদেশের সিনেমার হালহকিকত বুঝতে সিনেমা নিয়ে তাই নির্মাণ করেছি প্রামাণ্যচিত্র সিনেম্যনিয়া। আর সে কারনেই দায়িত্ব নিয়ে দেখতে যাওয়া সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমা গুলো।
আনন্দ হলে ৯টা ১২টা শো।
জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী সিনেমা দেখে ছিলাম এই হলটিতে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর সেই হলে ছবি দেখতে যাবার একটা উত্তেজনা ছিল আমার। এই সিনেমা হলটি সম্প্রতি ডেসটিনি গ্রুপের কাছে বিক্রয় হয়ে গিয়ে ছিল আর এখন সরকারের দখলে। আসা যাবার পথে বাইরে থেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল আনন্দ/ ছন্দ এই হল দুটি'র দশা এখন করুন। আজ টিকিট কেটে হলের ভেতর ঢুকে সেই করুন অবস্থা দেখে এলাম স্বচক্ষে।
২৬ বছর আগেও মুতের গন্ধে হলের লবিতে দাড়ানো যেতো না আজ ও তাই আছে। হলের ভেতরেতো জরাজীর্ণ অবস্থা। সিট গুলো দেখতে পরীবাগের পলিথিনের বস্তির মত শত ছিন্ন জীর্ণ। পুরো পরিবেশ, আলোহীন অন্ধকার এক পরিত্যাক্ত কারখানার গুদাম ঘরের মত। এখানে এসে মানুষের নির্মল ভাবো বিনোদিত হবার মোটেও কোন কারণ নেই।
জাহানারা গার্ডেন, গ্রীন রোড, তেততুরী বাজার, রাজাবাজার, মনিপুড়িপাড়া বা তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দারা নিশ্চিত আর আগের মত এ হল মুখো হন না। তাঁরা যাচ্ছেন হয়ত বসুন্ধরা সিটির সিনেপ্লেক্সে।
আনন্দ হলের দর্শক এখন ফার্মগেইট স্ট্যান্ডের টেম্পু চালক, হেল্পার, হোটেল কর্মচারী, সারা দিন একশো একশো করে খদ্দের ডাকা কাপড় বিক্রেতা, সব্জী অলারা। তাই ঈদের ছবি মাই নেইম ইজ খানের সংলাপ গুলো এমন গরীবের মন পছন্দ করে লিখবেন এফডিসির সংলাপ রচয়িতা তাইতো স্বাভাবিক। আশির দশকের সেই সিনেমা ঘরে যেয়ে ২০১৩ সালের কোন সিনেমা আর দেখা হলো না।
বলা যায় সেই আশির দশকের গড়পড়তা মানের একটা সোকল্ড সোশাল একশন ছবি। ভালো লাগে নাই একদমই। কিছু করার নাই, এই বিনোদন আমার জন্য তৈরী হয় নাই নিশ্চই। তবে বাংলাদেশের মানুষ ফরমালিন দেখা খাদ্য, টিশু পেপার গোলানো মিষ্টির ছানা আর এই ভয়ানক পশ্চাদপদ ভাবনায় নির্মীত দুষিত বিনোদোনের চেয়ে যে কোন বিচারেরই হোক অন্তত বেটার কিছু ডিজার্ভ করে।
সিনেমা দেখতে দেখতে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রজেকশনের চৌকো ছিদ্র দুইটার দিকে চোখ পড়তে নজরে এলো ৩৫ মিলিমিটারের প্রজেক্টর দুইটা চলছে না এক ছিদ্রের উপর বসানো ছোট সাইজের একটা ভিডিও প্রজেক্টর।
তাই দিয়ে প্রজেক্শন চলছে। পর্দায় ছবির এসপেক্ট রেশিও ঠিক নেই। নায়িকা অপু বিশ্বাস নাকি জিরো ফিগারে ফিরে আসবেন শুনেছিলাম, কোথায় কি! অভিনেতা অভিনেত্রীদের শরীর চেপ্টা দেখা যাচ্ছে। পর্দায় আলো পড়লে দেখা যায় পর্দার সব জোড়া তালি। প্রজেক্শনের ছবি পর্দা ছেড়ে গড়িয়ে গেছে পর্দার নিচ দিয়ে।
শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় এখনো মুত্র গন্ধে এমন চ্যাপ্টা স্যন্ডউইচ প্রজেকশন দেখতে যে কিছু মানুষ যায় সেইটাই বিশ্ময়!
সিনেমা হলে নাকি আধুনিক ডিজিটাল প্রজেক্শন লাগানো হচ্ছে, বাংলা সিনেমা নাকি ঘুরে দাড়াবার চেষ্টায় সংগ্রাম করছে, ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত আনন্দ হলে ঈদের সিনেমা দেখতে যেয়ে তার যে নমুনা দেখা গেল সেটা খুব একটা আশা জাগাতে পারে নাই এই সিনেমা প্রেমীকের মনে। দুঃখের কথা এটাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।