আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার

আধুনিক মালয়েশিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায় বিশাল উঁচু কারুকার্যের অট্টালিকা, দুনিয়া সেরা বিপণিবিতান। কি না আছে এই মালয়েশিয়ায়? অথচ খুব বেশি সময় নয় যখন অন্য আর দশটা উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে খুব যে একটা এগিয়ে ছিল মালয়েশিয়া। একজন মাত্র মানুষের হাতে রূপকথার গল্পের মতো মাহাথির মোহাম্মদ পাল্টে দিলেন গোটা মালয়েশিয়াকে। ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া ছিল দারিদ্র্যপীড়িত বৃক্ষমানবের দেশ। দারিদ্র্যের সঙ্গে ছিল নিরক্ষরতা।

দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে রোপণ করেন ঐক্যের বীজ। তিনি যে ধারার সূচনা করেছিলেন তা থেকে বিচ্যুত হননি তার উত্তরসূরি আবদুল রাজ্জাক, টোয়াংকু ইসমাঈল এবং ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদ। শেষোক্ত জন আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ও রূপকার হিসেবে পৃথিবীতে নন্দিত এবং প্রশংসিত। তার হাত ধরে মালয়েশিয়া পেঁৗছে গেছে উন্নত বিশ্বের তালিকায়। ডা. মাহাথির মোহাম্মদকে বলা হয় এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার এবং মুসলিম বিশ্বের বিবেক।

তিনি ছিলেন তার দেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। সত্য কখনো চাপা দিয়ে রাখা যায় না। এ কথাটাই তার কাজে এবং কথায় ফুটে উঠেছে। ডা. মাহাথির মোহাম্মদের জন্ম ১৯২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর। তিনি ছিলেন মাতা-পিতার ৯ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ।

তার পিতা ছিলেন একজন স্কুুলশিক্ষক। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তার পছন্দের বিষয় ছিল আইনবিদ্যা; কিন্তু সরকার তাকে পরামর্শ দেয় ডাক্তার হওয়ার। তাই তিনি সিঙ্গাপুরের কিং অ্যাডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালের ৫ আগস্ট তিনি বিয়ে করেন। কিছুদিন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করার পর তা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তার নিজ জন্মস্থান আলোর সেতার এলাকায় চলে আসেন।

এখানে এসে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ওই এলাকায় তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে তোলেন। এটাই ছিল এ এলাকায় কোনো মালয় পরিচালিত প্রথম প্রাইভেট ক্লিনিক। মাহাথিরের রক্তে মিশে ছিল দেশাত্দবোধ আর রাজনীতি। তিনি ১৯৬৪ সালে কোটা সেতার দক্ষিণ এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

নির্বাচিত হলে কি হবে? তিনি তার দলের অনেক নীতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। ১৯৬৯ সালে তিনি একখানা বই লেখেন, যার নাম মালয়ীদের উভয় সংকট। বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর তিনি তার পার্টির ভুলত্রুটির সমালোচনা করে দলীয় প্রেসিডেন্ট টেংকু আবদুর রহমানের কাছে একটি চিঠি লেখেন। এর ফলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তিনি তখন আবার তার পেশায় ফিরে গেলেও অনেক ঘটনার পর ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পার্টিতে আবার ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন। শিক্ষামন্ত্রী হয়ে তিনি ঘোষণা দেন তার নামে কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। এই ধারা তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও অব্যাহত রাখেন। তার কোনো ছবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা সরকারি অফিসে টাঙানো যাবে না বলেও তিনি নির্দেশ দেন।

মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা সংস্কার হচ্ছে মাহাথিরের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ১৯৭৫ সালে মাহাথির পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুন হোসেন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথকেও সুগম করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে ডা. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। তার সফল নেতৃত্ব, নির্ভেজাল দেশাত্দবোধ আর দূরদৃষ্টি পশ্চাৎপদ মালয়েশিয়াকে একটি আধুনিক উন্নত ও সমৃদ্ধ মালয়েশিয়ায় পরিণত করেছে।

সেই সঙ্গে তার প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব আর সাহস তাকে বিশ্বনেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। কারণ তিনি সর্বদা সত্য উচ্চারণে ছিলেন নির্ভীক ও আপসহীন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।