আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পড়তে মন না চাইলেও প্লিজ একবারের জন্য মাইক টাইসনের এই সাক্ষাৎকারটা পড়ুন

একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।

 বছর বিশেক আগেও আপনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সবাই আপনাকে নিয়ে মাতামাতি করত। জীবনের এই পর্যায়ে এসে কী মনে হচ্ছে? মাইক টাইসন: আমার বয়স এখন ৪৪। এখন বুঝতে পারছি, জীবনের পুরোটাই অপচয় করেছি।

আমি যা না, তা-ই ভাবতাম নিজেকে। স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেরটা দেখে এসেছি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে যখন দেখি, তখন মনে হয়, একটা দুর্গন্ধযুক্ত শুয়োরকে দেখছি।  শুনে মনে হচ্ছে খুব কষ্টে আছেন? টাইসন: আমি তো সত্যিই এ রকম। তাই কষ্ট পেয়ে কী হবে? কেউ যখন আমার সঙ্গে হাত মেলাতে চায় বা জড়িয়ে ধরতে চায়, নিজেকে খুব নোংরা লাগে।

নিজের বাচ্চাদের ধরার আগেও আমি হাত ধুয়ে নিই। মনে হয়, একটু হলেও নোংরা পরিষ্কার করলাম। আমার চার বছরের মেয়েটাকে হারানোর পর উপলব্ধি করি, আমার এমন কিছু করতে হবে, যা মানুষের উপকারে আসবে।  আপনি কি এমন কিছু করতে যাচ্ছেন, যেটা সন্তানহারা মা-বাবাদের উপকার করবে? টাইসন: আমি আসলে জানি না। এই ব্যাপারটা আমার ভেতর মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।

মাঝেমধ্যে মনে হয়, আর সবাই মরে গিয়েও যদি ও বেঁচে থাকত! মেয়েটা মারা যাওয়ার পর, শেষকৃত্য করেছি ও চিকিৎসকের বড় অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছি। ওদিকে আমার পকেটে ফুটো পয়সাও ছিল না ওই সময়। কষ্টের পাহাড় বুকে বেঁধে কীভাবে কী করেছি, নিজেও জানি না। কয়েক বন্ধুর যে সাহায্য সেই সময় পেয়েছি, মনে হয় আমি তার যোগ্য না।  ১২ বছর বয়স থেকে সংগ্রাম করে একটা পর্যায়ে এসেছিলেন।

সেই জীবনটা যখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে, আপনার অনুভূতি কেমন ছিল? টাইসন: এটা জীবনের একটা সহজ সমীকরণ। আপনি যদি নিজে থেকে বিনয়ী না হন, তবে প্রকৃতি একসময় আপনাকে ঠিকই বিনয়ী হতে বাধ্য করবে। আমি শেষ হয়ে গেছি। কিন্তু এই জায়গা থেকেও যুদ্ধ করেই টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি।  শুনেছি আপনি এখন নিরামিষভোজী? টাইসন: হ্যাঁ।

প্রায় ১০ মাস হতে চলল। নিরামিষের শক্তিটা টের পাচ্ছি।  কী রকম উপকার পাচ্ছেন? টাইসন: ছোট এক টুকরো মাংস খেলেও আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রচণ্ড কষ্ট হয়। এ জন্য আমাকে অনেক প্রিয় খাবার ছেড়ে দিতে হয়েছে।

কিন্তু কী আর করা।  শুনেছি আপনার প্রথম ‘লড়াই’ ছিল একটা পাখি নিয়ে? টাইসন: ছেলেটার নাম ছিল গ্যারি ফ্লাওয়ার। বয়সে একটু বড় ছিল। কিন্তু আমার পোষা পাখিটাকে মেরে ফেলার পর আমি সহ্য করতে পারিনি। সেদিন ওকে পিটিয়ে সবার যে পরিমাণ তালি পেয়েছিলাম, সেটাই আমাকে একজন ফাইটার হওয়ার উৎসাহ দিয়ে গেছে।

বাকি জীবন এই তালি পাওয়ার জন্যই লড়ে গেছি। তবে এখন সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। মনে হয়, সবকিছুর জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত আমার।  কী ধরনের প্রায়শ্চিত্ত? টাইসন: ঠিক জানি না। শুধুু জানি, আমি যে অবস্থায় আছি এখানে আমার থাকার কথা নয়।

হয়তো ফাঁসির আসামি হয়ে যেতাম, নয়তো অপঘাতে মারা যেতাম। এইডস বা অন্য কোনো কঠিন রোগেও মরে যেতে পারতাম। এ রকম কোনো কিছু হলেই আমার জন্য ঠিক হতো। ...আমার মধ্যে বিনয় বলে কোনো জিনিস নেই। তবে আমি চেষ্টা করছি নিজেকে বদলে ফেলার।

অনেক চেষ্টা করছি। জানি না, কতটুকু পারব।  লড়াইয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আপনার প্রতিপক্ষরা বেশ হম্বিতম্বি করত। কিন্তু আপনার চোখে চোখ রাখা মাত্র তাঁদের মনের সেই জোরটা কোথায় যেন হারিয়ে যেত। ট্রেভর বারবিক, মাইকেল স্পিংকস, ডনোভান ‘রেজর’ রুডক, ফ্রাঙ্ক ব্রুনো থেকে ল্যারি হোমস পর্যন্ত সবাই কেমন যেন চুপসে যেতেন।

যেন জাদুর ভেলকি। টাইসন: জাদুটাদু কিছু নয়। ভীতি প্রদর্শন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা একটা শিল্প। এটা পুরোপুরি বৈধও।  ভয় দেখাতেন কীভাবে? টাইসন: প্রথমে আমার নিজেকে বিশ্বাস করাতে হয়েছে, বিশ্বাস না হলে জোর করে করাতে হয়েছে...এভাবেই।

 কী বিশ্বাস করাতে হয়েছে? টাইসন: আমি প্রয়োজনে তাকে খুন করে ফেলতে পারি। এটা যে মিথ্যা নয়, সেটা চোখেমুখে ফুটিয়ে তুলতে হবে। প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করাতে হবে।  প্রত্যেক ফাইটারই তো তা চান। আপনি তাঁদের থেকে আলাদা কোন দিক দিয়ে? টাইসন: সবাই চাইলেও তা করতে পারে কজন? সত্যি বলতে অনেকেই ছিল, কিন্তু আমার মতো করে কেউই তা করতে পারেনি।

আমি আত্মপ্রশংসা করছি না। জেনেবুঝেই বলছি। আমার মতো হিংস্র আর কেউ ছিল না। আমার ম্যানেজারের কাছে বিখ্যাত সব ফাইটারের ভিডিও ফুটেজ ছিল। রাতের পর রাত আমি সেগুলো দেখেছি, শিখেছি।

 বক্সিংয়ে আপনি যে কৌশলগুলো শিখেছেন, বাস্তব জীবনে তা কাজে লেগেছে? টাইসন: অবশ্যই। কিন্তু আমাকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়েছে। রিংয়ের জীবনটা আলাদা। ওখানে প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়ার মানসিকতা নিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে তো সেটা সম্ভব নয়।

 আপনার কাছে নিয়মানুবর্তিতার মানে কী? টাইসন: নিয়মানুবর্তিতা সেই জিনিস, যেটা আপনার একদমই পছন্দ নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই কাজে লাগে।  হলিফিল্ডের সঙ্গে কুখ্যাত লড়াই সম্পর্কে বলবেন? টাইসন: দেখুন, বক্সিং নিয়ে এখন আর আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। (হলিফিল্ডের কান কামড়ে) আমি ভুল করেছিলাম। যা করেছি, সেটা বক্সিংয়ের মধ্যে পড়ে না।

 নিজেকে কি এখন মুক্ত মনে হয়? টাইসন: একবারের জন্যও মনে হয় না। নিজেকে এখনো বন্দী লাগে। কিন্তু আমি জেলের বাইরে। অদ্ভুত একটা অনুভূতি। আশপাশে আমার টাকাওয়ালা অনেক বন্ধু।

তাই মনে হতে পারে, আমার অনেক টাকা। কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই। এখন আমার আর তারকাখ্যাতিও নেই। এ রকম অদ্ভুত এক জেলে বসে আছি আমি...।  জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কি এভাবেই চলবে? টাইসন: আশা করি না।

সম্মান নিয়েই কবরে যেতে চাই। সূত্রঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.